সিলেটে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা, নতুন করে প্লাবিত অনেক উপজেলা

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সিলেটের সাত উপজেলার মানুষ। অনেকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে মানবেতরভাবে সময় পার করছেন। কিছু কিছু এলাকায় পানি কমলেও সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে বিয়ানীবাজার উপজেলা। পাশাপাশি সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে সুরমা নদীর পানি। বর্তমানে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন সিলেট নগরবাসী। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের হাহাকার। খাদ্যাভাবে ভুগছে গবাদিপশুসহ বানবাসী মানুষ।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সিলেটে শুরু হয় ভারী বৃষ্টিপাত। এর সঙ্গে মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতেও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল নামে সিলেট অঞ্চলের সীমান্তবর্তী উপজেলা সমূহে। ফলে বাড়তে শুরু করে সুরমার পানি। বৃহস্পতিবার রাতেই পানির নিচে তলিয়ে যায় নগরীর তালতলা সুবহানীঘাট।
এদিকে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা, ধলাই ও পিয়াইন নদীর বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে পড়ে ওই পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়। কানাইঘাট উপজেলার ৩ ও ৪ নং ইউনিয়নের সুরমা পাড়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ, পশ্চিম দর্প নগরে দুইটি পয়েন্ট ও চরিপাড়া আগডিতে আরেকটি পয়েন্ট ভেঙে দর্পনগর, কুওরের মাটি,বাল্লাগ্রাম, জিতপুর, চরিপাড়া, জয়পুর, পাত্র মাটি ও ভাঁড়ারি মাটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলায় বর্তমানে বন্যার পানি রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটির অবস্থা ভয়াবহ। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭ উপজেলায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন বন্যাকবলিত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছেন ৪ হাজার ৮০২ জন।
গতকাল (শুক্রবার) সকাল পর্যন্ত পানিবন্দি ও আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা লোকজনের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য ২০০ করে বস্তা শুকনা খাবার, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং ১৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৩১ মে) নগরীর জামতলা, তালতলায় ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় ও তোপখানা, সুবহানি ঘাট, উপশহর এবং তেরো রতন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির লেভেল ১৩ দশমিক ৭২, ছাতক পয়েন্টে ৯ দশমিক ১৪ এবং কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে ১৩ দশমিক ২০, যা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার ৬টা পর্যন্ত সিলেটে প্রায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ০ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সিটি মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশে নগরভবনে এক জরুরি সভা করা হয়। সভায় নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড চিহ্নিত করে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা, নিম্নাঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উপ-কেন্দ্রগুলো বন্যার পানিতে যাতে ডুবে না যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সহযোগিতা প্রদান, নগরবাসীর জরুরি সেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালুসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে রান্না করা খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি অফিসার রায়হান পারভেজ রনি, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জামাল খান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থের সমন্বয়ে গঠিত টিম উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, সড়ক, ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষয়ক্ষতি ও গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছে। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী এবং পিআইওকে অনতিবিলম্বে নদী ও খালের পার্শ্বস্থ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের বাঁধ, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও ব্রিজ সমূহকে মেরামত ও সংস্কার করে যানবাহন ও জনচলাচল উপযোগী করতে বলেছি।
(ঢাকাটাইমস/৩১মে/প্রতিনিধি/পিএস

মন্তব্য করুন