ছেলেরূপী ফারজানার সঙ্গে রেখার ঘনিষ্ঠতা! স্বামীর আত্মহত্যার নেপথ্যে কি এটিই?

বয়স ৬৯! এখনো বলিউডের অন্যতম আবেদনময়ী অভিনেত্রী রেখা। এই নায়িকা তার সেরা সময়ে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। আধুনিক মানসিকতা, ব্যক্তিত্ব এবং তার স্মার্ট উপস্থিতি প্রায় সব পুরুষের মনেই ঝড় তুলতো। অমিতাভ বচ্চন, জিতেন্দ্র, বিনোদ খান্নার মতো সমসাময়িক নায়ক তো বটেই, নব্বইয়ের দশকের অক্ষয় কুমারের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে এক সময় অনেক কথা শোনা যেত।
তবে রেখার সঙ্গে যে পুরুষকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে, তিনি অমিতাভ বচ্চন। বিধবা হওয়া সত্ত্বেও রেখা তাকে স্মরণ করেই সিঁদুর পরেন বলে কানাঘুঁষা ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু জানেন কি, রেখার জীবনে এমন একজন রয়েছেন যিনি অমিতাভের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ? জানেন কি, অনেকে রেখার স্বামীর আত্মহত্যার পেছনে তাকেই দায়ী করেন।
এই ‘অন্য কেউ’ হলেন একমাত্র মানুষ, যাকে রেখা তার শোয়ার ঘরে ঢোকার অনুমতি দেন! তিনি ফারজানা নামেই ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত। ফারজানার সঙ্গে রেখার পরিচয় আশির দশকে। ১৯৮১ সালের ‘সিলসিলা’ ফিল্মে রেখার মেকআপ দলের সদস্য ছিলেন ফারজানা। তখন অবশ্য অমিতাভের সঙ্গে রেখার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। পরিচালক যশ চোপড়ার কথা রাখতেই অমিতাভের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন রেখা।
রেখার টানাপড়েনপূর্ণ জীবনে হিন্দি ছবির দৃশ্যের মতোই যেন ফারজানার প্রবেশ। ফারজানা ছিলেন রেখার কেশশিল্পী। ছবির বিভিন্ন দৃশ্যের জন্য রেখার চুল বেঁধে দিতেন বা চুল সাজিয়ে দিতেন তিনি। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই রেখার ব্যক্তিগত জীবনে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করার খুঁটিটা পুঁতে ফেলেছিলেন ফারজানা। কয়েক বছরের মধ্যে ফারজানার ব্যাপক পদোন্নতি হয়। রেখা তাকে নিজের কেশ শিল্পী থেকে সরাসরি ব্যক্তিগত সচিব করে দেন। তারপর সময় যত এগিয়েছে রেখার জীবনে ফারজানার উপস্থিতি তত গভীর হয়েছে।
ফরজানা একজন নারী। কিন্তু তার চালচলন, বেশভূষা সব কিছুই পুরুষের মতো। এমনকি, ছোট করে ছাঁটা চুলও ছিল ঠিক অমিতাভ বচ্চনের হেয়ার স্টাইলের মতো। ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো ছবির প্রস্তাব হোক কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে রেখাকে নিমন্ত্রণ, সব কিছুর জন্য প্রথমে ফারজানার সবুজ সঙ্কেত পেতে হতো সবাইকে। ক্রমে ফারজানা রেখার ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন। রেখার পেশাগত হোক বা ব্যক্তিগত বিষয়, সবখানেই আধিপত্য শুরু হয় তার।
১৯৯০ সালে ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়ালের সঙ্গে বিয়ে হয় রেখার। মুকেশ ছিলেন দিল্লির ব্যবসায়ী। অভিনয়ের জন্য রেখা থাকতেন মুম্বাইয়ে। ছবির শুটিং শেষ করে রেখা অবশ্য দিল্লিতে স্বামীর কাছে চলে যেতেন প্রায়ই। মুম্বাইয়ের বাড়িতে রেখার সঙ্গেই থাকতেন ফারজানা। রেখার বাড়িতে ফারজানার মতো আরও অনেক সহযোগী ছিলেন। কিন্তু ফারজানা তার কাছে বিশেষ ছিল। শোনা যায়, ফারজানার অনুমতি ছাড়া রেখা মুম্বাইয়ের বাইরে পা পর্যন্ত রাখতেন না। এমনকি ঘনিষ্ঠ কেউ রেখার সঙ্গে ফোনে সরাসরি যোগাযোগও করতে পারতেন না।
পরিবারের লোকদেরও আগে ফারজানার সঙ্গে কথা বলতে হতো। তারপর তারা রেখার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পেতেন। এই নিয়ম নাকি বজায় ছিল তার স্বামী মুকেশের জন্যও। মুকেশ যা একেবারেই পছন্দ করতেন না।
ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন, রেখা এবং মুকেশের মেলামেশার মধ্যে ক্রমে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান ফারজানা। বিয়ের মাস খানেক পর থেকেই দুজনের সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে। এর মধ্যে একটি ছবির শুটিংয়ের জন্য নিউইয়র্ক যান রেখা। তার সেই সফরের মধ্যেই বিয়ের মাত্র ৭ মাসের মধ্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন মুকেশ।
এই ঘটনা সারা ইন্ডাস্ট্রিকে হতভম্ব করে তুলেছিল। রেখা দেশে ফিরে স্বামীর শেষকৃত্যে অংশ নেন। মুকেশের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। ব্যবসায় ক্ষতির জন্যই মুকেশ আত্মহত্যা করেছেন বলেও শোনা যায়। কিন্তু ক্রমে রেখার দিকে আঙুল তুলতে শুরু করে মুকেশের পরিবার। ফারজানার নামও উঠতে শুরু করে। সেই প্রথম ফারজানার সঙ্গে রেখার সম্পর্ক নিয়ে নানা কানাঘুঁষা শোনা যেতে শুরু করে।
মুকেশের পরিবার দাবি করে, ফারজানার উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতিতে রেখার আচরণে আকাশ-পাতাল বদল দেখা যেত। ফারজানার সামনে রেখা বেশি কথা বলতেন না মুকেশের পরিবারের সঙ্গেও। ফারজানা না থাকলেই রেখা সবার সঙ্গে অত্যন্ত মিলেমিশে চলতেন। ইয়াসির উসমান নামে এক লেখক রেখার জীবনী নিয়ে বই লিখেছিলেন। তার বইয়েও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে এই সম্পর্কের কথা। তার কথায়, বাড়ির কোনো পরিচারকই রেখার শোয়ার ঘরে ঢুকতে পারতেন না, একমাত্র ফারজানা ছাড়া। রেখার ব্যক্তিগত জীবনে যার অবাধ যাতায়াত ছিল। রেখার পারিবারিক ছবিতেও তাকে দেখা যায়।
মোহনদ্বীপ নামে আর এক লেখক তার বইয়ে ফারজানা এবং রেখার সম্পর্ক নিয়ে আরও খোলামেলা কলম ধরেন। তিনি স্পষ্ট লিখে দেন যে, তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও রয়েছে। যদিও এ সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন রেখা। ফারজানাকে তিনি নিজের বোনের সঙ্গে তুলনা করেন। তাই বলে কি আর ইন্ডাস্ট্রির মুখ বন্ধ করা যায়! ফারজানার সঙ্গে রেখার সম্পর্ক নিয়ে নানা মহল থেকে নানা মত উঠে আসতে শুরু করে। বলিউডের এক সাংবাদিকের কথায়, রেখার জীবনে পুরুষের অভাব মেটান এই ফারজানাই। কারও মতে, রেখার প্রতিটি বিষয় যে ভাবে খেয়াল রাখেন ফারজানা। তা দেখে বলাই যায় যে, তারা একে-অপরের জন্যই তৈরি।
এসব গুঞ্জন নিয়ে কখনো ফারজানাকে সরব হতে দেখা যায়নি। বরং তিনি রেখার ভালো-মন্দ খেয়াল রাখতেই ব্যস্ত থাকেন সবসময়। ১৯৮১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একই ভাবে রেখার দেখভাল করে চলেছেন। আজও প্রতিটি অনুষ্ঠানে রেখার ঠিক পাশেই দেখা যায় ফারজানাকে। রেখাই নাকি তার পাশের সিটটা আগে থেকেই ফারজানার জন্য ‘বুক’ করে রাখেন।
(ঢাকাটাইমস/১১জুন/এজে)

মন্তব্য করুন