বিদ্যুতের দায়মুক্তি আইন অবাধ দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করেছে: সংসদে জিএম কাদের

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে দেশে অবাধ দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এছাড়াও অফশোর ব্যাংকিং ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে দুর্নীতি থেকে দায়মুক্তির অপসুযোগ বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সংকট সমাধান করা অসম্ভব।
শনিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন জাপা চেয়ারম্যান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আলোচনায় অংশ নেন।
বাজেট আলোচনায় জাপা চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের বলেন, ‘দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের প্রসার ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান অবাস্তব। অর্থনীতি সুস্থ করতে সমাজের সর্বস্তরে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলেই শুধু দেশে সুশাসন আসবে।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দায়মুক্তি দিয়ে আইন প্রণয়ন করে দেশে অবাধ দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি; অফশোর ব্যাংকিং চালু করে বিদেশে পাচারকৃত অবৈধ অর্থ বৈধ করা এবং নামমাত্র কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে দুর্নীতি থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, ঋণখেলাপি, টাকা পাচারকারীদের মাধ্যমে একটি বড় আকারের ধনী ও অতিধনী শ্রেণি সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের অর্থনীতির মূল স্রোতে আনতে বিভিন্ন সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।’
কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেছেন এটা সংবিধানসম্মত নয়, আয়ও বেশি আসবে না। যদি এই সুযোগ দিতেই হয়, তাহলে ১৫ শতাংশ নয়, ৫০-৬০ শতাংশ কর দিতে হবে।’
জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশ আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রমাবনতি ঠেকানো যাচ্ছে না। সে কারণে অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, করোনা বা ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশে মূল সমস্যাগুলো সৃষ্টি করেনি। সমস্যা শুরু হয়েছিল আগেই, অন্যান্য কারণে। করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধ এগুলোকে উস্কে দিয়েছিল মাত্র।’
ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনার কড়া সমালোচনা করেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাত নড়বড়ে। কারণ খেলাপি ঋণ। গত মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকায়। একটি পত্রিকা বলেছে, শীর্ষ পাঁচজনের নামে ২ লাখ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। বেনামি ঋণ আমলে নিলে দাঁড়াবে ৪ লাখ কোটি টাকার ওপরে। তথ্য গোপন করে ব্যাংক খাতকে নাজুক পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’
বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত আইন দায়মুক্তির আইন উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, ‘দায়মুক্তির আইন জনস্বার্থের পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি, বরং দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়ে অর্থনীতিকে বেসামাল করে তোলা হয়েছে।’
(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/এসআইএস)

মন্তব্য করুন