কুড়িগ্রামে সেতু-কালভার্ট নির্মাণে পরিকল্পনার অভাব, দুর্ভোগে স্থানীয়রা

কুড়িগ্রামে অপরিকল্পিতভাবে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ক্ষতি হচ্ছে কৃষি জমির। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে শহরের বিভিন্ন এলাকা। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঠিক পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার অর্ন্তভুক্ত কচাকাটা থানার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কচাকাটা-মুড়িয়ারহাট সড়কে অপরিকল্পিতভাবে একটি বক্স কালভার্ট তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ মিটার দৈর্ঘ্যের বক্স কালভার্টটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে এবং শেষ হয় ২০২১ সালে। ওই এলাকার একটি বাড়ির উঠান ঘেঁষে কালভার্টটি তৈরি করায় কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, কালভার্টটি নির্মাণের আগে স্থান পরিবর্তনের দাবি করলেও তা শোনা হয়নি। পরে ওই বাড়ির উঠান ঘেঁষে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কালভার্ট নির্মাণের আগেই সেখানে মাটি ভরাট করে বসত বাড়ি করেন ফজর আলী, নাসির উদ্দিন, লাল চাঁন মিয়া ও আব্দুল খালেক। ফলে সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
একই চিত্র প্রায় দেখা গেছে কুড়িগ্রাম পৌরসভার মিস্ত্রিপাড়ায়। সেখানে ১৫/২০ বছর নির্মাণ করা একটি সেতু এখন স্থানীয়দের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুর মাঝামাঝি স্থানে বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের বাড়ি নির্মাণ করেছে। ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধা গ্রস্থ হওয়ায় পানিবন্দি থাকতে হয় পৌরবাসীকে। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই শহরের সরকারি, বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস অফিস, খাদ্য গুদাম, হাসপাতাল পাড়া, রৌমারী পাড়া, মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ ও শিশু নিকেতন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ পৌরসভার সিংহভাগ ওয়ার্ডের সড়ক ও বাড়ি-ঘর পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সরকারের টাকা নষ্ট হচ্ছে। আর সরকারের উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
অপরদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে সোনাহাট-মাদারগঞ্জ সড়কের কালভার্টের মুখে মাটি দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। আবার অনেকে বিলের সেতুর পাশে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ফলে সঠিকভাবে পানি প্রবাহ না হওয়ায় কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এত বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
মামুন নামে এক কলেজ শিক্ষক বলেন, কুড়িগ্রাম পৌরসভাকে একটি আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। একটু বৃষ্টিতে শহরের অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলো পানিবন্দি হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয়রা। এ থেকে পরিত্রাণে জলাবদ্ধ থাকা এলাকাগুলো দখল মুক্ত করাসহ স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগে পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।
কচাকাটার বাসিন্দা বুলবুলি বেগম বলেন, কয়েক মাস আগে সরকারি লোক এসে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়ে গেছে। এখন পানি জমলে এই এলাকার মানুষের আবাদি জমি এবং হেমতির আবাদে ক্ষতি হবে।
পথচারী জয়নাল, মজিবর ও জাফরসহ অনেকে বলেন, মিস্ত্রি পাড়ার এই সেতুটি প্রায় ২০ বছর আগে এলজিইডি নির্মাণ করেছে। এটি সরকারি জমিতে নয় ব্যক্তিগত জমিতে করা হয়েছে। তখন এই এলাকায় কোনো রাস্তা না থাকায় ব্রিজটি করা হয়। এখন সেটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। আর এই ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার আগেই বেশ কয়েকটি পরিবার নিচু জমিতে বাড়ি করেছে। ফলে এদিক দিয়ে শহরের পানি বের হয়ে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
কচাকাটা-মুড়িয়ারহাট সড়কে পথচারী গেন্দু ব্যাপারি ও রফিকুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণের আগে বাড়ি করার জন্য ভিটে ভরাট করা হয়েছিল। পরে সেতু নির্মাণের পর বাড়ি করা হয়েছে। এখানে এলজিইডি যখন ব্রিজ করতে আসে তখনই তাদেরকে আরও পূর্ব পাশে ব্রিজ করার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারা শোনেনি। এখন এই সেতু কোনো কাজে আসছে না।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, পানি প্রবাহের জন্য কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কালভার্টের মুখ বন্ধ করার কোনো নিয়ম নেই। এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুজ্জামান বলেন, পৌরসভার অভ্যন্তরে সেতুটি পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মেয়রকে অবহিত করা ছাড়া সেখানে এলজিইডির করণীয় নেই। তবে কচাকাটা-মুড়িয়ারহাট সড়কে সেতুর মুখে বাড়ি করার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/০১জুলাই/পিএস)

মন্তব্য করুন