কোটা আন্দোলনে হামলা-সংঘর্ষ: ঢাকা চট্টগ্রাম ও রংপুরে নিহত ৬

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুইজন ও রংপুরে একজন মারা গেছেন। এদের মধ্যে তিনজনের গায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এসব সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। এদের অন্তত সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সড়ক অবরোধ ও সংঘর্ষের ফলে রাজধানীতে যানচলাচলে অচলাবস্থা দেখা দেয়।
চট্টগ্রামে এক শিক্ষার্থীসহ তিনজনের মৃত্যু
ঢাকা টাইমসের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান জানান, বিকাল চারটার দিকে নগরের মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট এবং ষোলশহর আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন- চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম ও ফার্নিচারের দোকানে কর্মচারী পথচারী মো. ফারুক।
নিহত অপরজনের বয়স আনুমানিক ২৪ বছর। তার পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। অন্যদিকে ফারুকের বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাদের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে।
তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন।
চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নুজহাত বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ওয়াসিমের মৃত্যু হয়েছে গণপিটুনিতে।
ফারুক যেই ফার্নিচারের দোকানে কাজ করততেন তার মালিক তাজুল ইসলাম জানান, দুপুরের খাবার খেতে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন ফারুক।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের দাবিতে আজ দুপুর থেকেই নগরের মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট এবং ষোলশহর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিতে শুরু করেন কোটা আন্দোলনকারীরা।
অপরদিকে বিভিন্ন মোড়ে পাল্টা অবস্থান নিতে দেখা যায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের। নেতাকর্মীদের হাতে রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। কোটা আন্দোলনকারীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়।
দুপুর গড়াতে গড়াতে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দুই নম্বর গেটের এলাকায় একটি বাস ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু ছাড়াও আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
রংপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু
একই দিন দুপুরে রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন।
নিহত আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে বেরোবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে সাঈদ নিহত হন।
ঢাকায় দুজনের মৃত্যু, সাত শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ
রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজনের যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিক তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
ঢাকা কলেজের সামনে থেকে এক যুবককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকাল পাঁচটার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর একজনকে সিটি কলেজের সামনে থেকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, বিকাল গুরুতর জখম ওই যুবককে উদ্ধার করে কয়েকজন হাসপাতালে আনেন। পরে পাঁচটার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা সিটি কলেজের সামনে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় আরও একজনকে উদ্ধার করে যাকে আনা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র ফেরদৌস আহমেদ, ১৭ ব্যাচের অন্তু ও অনিক।
ঢাবি ও ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ
রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে ৩ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে শুভ ও রাতুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সাফিন নামের একজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/ইএস)

মন্তব্য করুন