সমুদ্র উত্তাল: নিষেধাজ্ঞা শেষেও ইলিশ শিকারে যেতে পারছে না জেলেরা

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী):
  প্রকাশিত : ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৮:১৪
অ- অ+

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রে মাছ শিকারে নেমে পড়ার কথা ছিলে জেলেদের। কিন্তু সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠার কারণে সমুদ্রে নেমেও ফিরে আসতে হয়েছে তাদের। নৌকা, জাল মাছ শিকারের অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে জেলেরা অপেক্ষা করছেন সমুদ্র স্বাভাবিক হওয়ার। তবে সমুদ্র¬ উত্তাল থাকলেও কিছু কিছু জেলেকে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে মাছ শিকারে গভীর সমুদ্রে যেতে দেখা গেছে।

৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হতে না হতেই বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব থাকায় হতাশ হয়েছেন জেলেরা। অর্থনৈতিক সংকটে তাদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটনে পার করছেন দিনের পর দিন।

সামুদ্রিক মাছের বাধাহীন প্রজনন সংরক্ষণে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। কিন্তু এবারের নিষেধাজ্ঞা খুব একটা পালন করেনি কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেরা। প্রশাসনের ঢিলেঢালা নজরদারি উপেক্ষা করে অনেকেই সমুদ্রে নেমেছেন মাছ শিকারে।

মৎস্য গবেষকরা বলছেন, আইন অমান্য হওয়ায় মাছের প্রজনন সংরক্ষণ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সমুদ্রে গিয়ে ইলিশের দেখা পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন উপকূলের প্রায় ৩০ হাজার জেলে।

মৎস্য আড়তদার ট্রলার মালিকরা বলছেন, জেলেদের জালে দীর্ঘ ৬৫ দিন পরে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ ধরা পড়বে সেই আশায় লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ট্রলার মেরামত সরঞ্জামাদি নিয়ে সমুদ্রে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

তাদের মতে জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়লেই সম্ভব হবে পেছনের ঋণ পরিশোধ করা।

এফবি নূরভানু ট্রলারের মাঝি দেলোয়ার হোসেন প্রশ্ন রেখে বলেন, ৬৫ দিনের অবরোধ চলাকালে সরকারের দেওয়া প্রণোদনার মাত্র ৮৫ কেজি চাল দিয়ে কী সংসার চলে? ২০ হাজার টাকা সুদে এনে খাইছি। এখন যদি অবরোধের পর মাছ না হয় তাহলে এগুলো পরিশোধ করবো কী দিয়া?

রায়হান ট্রলারের মালিক রাসেল মোল্লা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রভাবশালী জেলে ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করে নিচ্ছে। তাহলে আমরা কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবো? ভারতের সাথে মিল রেখে এই অবরোধ কর্মসূচি জারি করার দাবি জানান তিনি।

আলীপুর মৎস্য বন্দরেরসাত ফিশআড়তের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে শত-শত মানুষ এই পেশায় নিয়োজিত। রুপালি ইলিশের আশায় সকলের মধ্যে একটি আমেজ বিরাজ করছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। জেলেরা সমুদ্রে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও বসে থাকতে হচ্ছে।

সমুদ্রের নীল অর্থনীতি, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকোফিশ- বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, মূলত সামুদ্রিক মাছের প্রজনন সংরক্ষণের জন্য এই ৬৫ দিনের অবরোধ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জেলেরা সমুদ্রে গিয়ে অবাধে মাছ শিকার করেছে। সরকার প্রণোদনা দিয়েও কোনো লাভ হলো না। এভাবে চলতে থাকলে সমুদ্র থেকে মাছ হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, ৬৫ দিনের অবরোধে প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলে ৮৫ কেজি করে চাল পাবেন। ইতোমধ্যে অনেকে ৫৬ কেজি পেয়েছেন। দেশে চলমান কারফিউয়ের কারণে বাকি চাল দিতে একটু দেরি হচ্ছে। গত ৬৫ দিনের অবরোধে জরিমানা নিলামে মাছ বিক্রি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকার। শিগগিরই আরও কিছু জেলে নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। এই অবরোধে প্রশাসন তৎপর ছিল। এরমধ্যেও অনেক অসাধু জেলে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে।

পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, দেশে ইন্টারনেট সচল হলেও নিম্নমানের গতি সম্পন্ন থাকায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে গতকাল পর্যন্ত পূর্ণিমার জোয়ারে সমুদ্র উত্তাল থাকায় সমুদ্রে নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাই সমুদ্রে সকল যান চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/পিএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির আন্দোলনের মুখে পটিয়া থানার ওসি প্রত্যাহার
বাংলামোটরে এনসিপির জুলাই চিত্র প্রদর্শনীর গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
তাড়াশে সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবা-মাকে বাড়িছাড়ার অভিযোগ
সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা