টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি কুয়াকাটা পৌর এলাকা, চরম ভোগান্তি
একদিনের টানা বৃষ্টিতে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা পৌর এলাকা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরবাসী। পর্যটন উন্নয়নে পৌরসভা গঠনের এক যুগ পার হলেও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন পানিবন্দি মানুষেরা।
সরেজমিন পৌর এলাকায় গেলে ৩, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ৩০ জুলাই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এই বৃষ্টিপাত টানা ৫ দিন অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টিপাতের প্রথম দিনেই পৌর এলাকার নিচু জমি কয়েক ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এক দিনের বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে পৌর বাসিন্দাদের অনেকের ঘরে বাড়ি। তবে বৃষ্টিপাতের দ্বিতীয় দিন থেকে টানা ৪ দিনের বর্ষণে নিচু জমির অসংখ্য বসতির মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। টানা ৪ দিন ধরে জমে থাকা পানির প্রকোপে অনেকেই নানামুখী ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
বৃষ্টিপাতের শুরু থেকে অনেকেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের জন্য যে খাল প্রধান ভূমিকা রাখছে সেই খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ স্থবির রয়েছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খালের দুই পাশে বসবাসরত বাসিন্দারা।
তাদের অভিযোগ, কুয়াকাটা ও পার্শ্ববর্তী লতাচাপলীর সংযুক্ত খালের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে আটন জাল ফেলে প্রভাবশালীরা মাছ শিকার করায় জলাবদ্ধতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং খালের পানি নামতে না পারার ফলে পৌর এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী লতাচাপলী এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারায় তাদের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পৌরবাসী। দ্রুত এ সকল ভোগান্তি নিরসনে কার্যকরী ব্যবস্থা করণের দাবি জানিয়েছেন তারা। জানা যায়, দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী কুয়াকাটার উন্নয়নে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর কুয়াকাটা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে কুয়াকাটা পৌর শহরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। তবে পৌরসভা গঠনের ১৪ বছরেও নাগরিকরা পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সুপেয় পানি থেকে শুরু করে নাগরিকরা পাচ্ছে না বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা।
কুয়াকাটা পৌর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজিমুন্নেছা আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভোটের সময় আইলে প্রার্থীরা মা ডাইকা যায়, উন্নয়ন করবে কইয়া খালি ভোট কামায়। পরে মোগো আর কোনো খবর রাহেনা। বৃষ্টির পানি কোনো দিকে নামে না। মোরা এহন ভুগতে আছি পানিতে ডুইবা ‘
পৌরসভার খাল পাড়ের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম জানান, ‘বৃষ্টির প্রথমদিন থেকে আমাদের এখানকার প্রায় ঘরেই পানি উঠে গেছে। একদিকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। অপরদিকে বর্জ্য ও পয় নিষ্কাশনে নেই কোনো ব্যবস্থাপনা। আবার সুপেয় পানির ব্যবস্থাপনাও পৌরবাসীর জন্য কার্যকর করা হয়নি।
আরেক বাসিন্দা আজাদ বলেন, সড়কে পর্যাপ্ত কালভার্ট ব্যবস্থা না থাকায় পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. দুলাল ফকির জানান, কুয়াকাটা পর্যটন নগরীকে ঘিরে এই পৌরসভা গঠন করা হলেও নাগরিকরা দীর্ঘ ১৪ বছরেও কোনো সেবা পাচ্ছে না।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইদ্রিস গাজী বলেন, আমি মাছের ঘের লিজ নিয়ে তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছ চাষ করেছি। এতে ২ লক্ষ টাকার মত ব্যয় হয়েছে। মাত্র মাস খানেক পরেই মাছ বিক্রির উপযোগী হতো। কিন্ত টানা বৃষ্টির কারণে ঘেরের পাড় তলিয়ে সব মাছ বেরিয়ে গেছে। এতবড় ক্ষতির মুখ থেকে কীভাবে ফিরবো সেটাই চিন্তা করছি।
লতাচাপলী ইউনিয়নের মুসুল্লীয়াবাদ গ্রামের সবজি চাষি আ. রহিম জানান, জমিতে লাউ, জালি কুমড়ো, বেগুন , ফসল দিয়েছি। ঠিক মত পরিচর্যা করার কারণে গাছগুলো সতেজ ছিল। টানা বৃষ্টি এবং পানি নামতে না পারার কারণে তলিয়ে আছে সব সবজি গাছ। এবার ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে গেলাম।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা পৌর শহরে সড়কের প্রধান কেন্দ্রে ৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে ৪ কিলোমিটার ড্রেনেজের কাজ চলমান রয়েছে। অপরদিকে পৌরসভা এলাকায় মোট ১৫ কি.মি. ড্রেনেজ ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এই ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রকল্পের কোনো সুযোগ তার হাতে নেই বলেও পৌর মেয়র।
এদিকে কলাপাড়া ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল জব্বার জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঢাকাটাইমস/০৩আগস্ট/পিএস