স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি কমাতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে এনডিপির সুপারিশমালা
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুর জাহান বেগমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সভাপতি কেএম আবু তাহেরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল। রবিবার রাজধানীতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তারা।
সাক্ষাৎকালে এনডিপি সভাপতি কেএম আবু তাহের বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট ও দুর্নীতিবাজ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত এই সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষার সরকার। তাই জনগণের স্বার্থে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকাণ্ড ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাবে।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) মহাসচিব আবদুল্লাহ-আল-হারুন (সোহেল) বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ছিল দুর্নীতির অন্যতম আখড়া। ২০০৯ সনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতি বাড়তে থাকে। দেশের স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বৎসর যাবৎ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের গণতন্ত্রহীন দুঃশাসনে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির লাগাম টানতে সরকারকে কঠিন হতে হবে কারণ অনেক কাজ আছে যা দলীয় সরকারের পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
এনডিপির প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও এর গণ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর মিয়া বলেন, সরকারি হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস লিমিটেডের ওষুধ নিম্নমানের হওয়ায় বিনা পয়সায় চিকিৎসাপ্রাপ্ত গরীব রোগী সহজে সুস্থ হতে পারে না। তাই সরকারকে এই দিকে নজর দিতে হবে।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি দমন ও উন্নয়নের জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশমালা পেশ করেন:
১। দেশের সব সিভিল সার্জন অফিসে ক্রয় সংক্রান্ত বিশেষ সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে;
২। বিশেষ অডিটের মাধ্যমে বিগত সরকারের (২০০৯ থেকে ২০২৪) স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি উদঘাটন করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে অপরাধীদের মরনোত্তর বিচার করতে হবে;
৩। অনেক হাসপাতালে দুর্নীতির জন্য আমদানি করা চিকিৎসা সরঞ্জামাদি অকেজো পড়ে আছে তা সনাক্ত করে চাহিদাকৃত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে;
৪। আপনি সব জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করে ডাক্তারি পেশাকে জন সেবা ও পূণ্যের কাজ হিসাবে গ্রহণ করার জন্য এই পেশার সবাইকে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে;
৫। মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ডাক্তারকে ফি কমানো এবং অপ্রয়োজনীয় ডায়াগনোসিস পরিহার করার জন্য অনুরোধ করতে হবে;
৬। মফস্বল ও গ্রামের হাসপাতালে চিকিৎসকের ডিউটি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে;
৭। অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় বন্ধ করে বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হবে যাতে, চিকিৎসার জন্য খুব একটা বিদেশে যেতে না হয়;
৮। বাংলাদেশি ওষুধের ব্যয় বিবেচনায় দাম নির্ধারণ করতে হবে;
৯। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর সময় পলিসি অনুসরণ করতে হবে;
১০। মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি স্বমূলে উৎপাটন করতে হবে;
১১। বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের তদন্তপূর্বক শনাক্ত করে অযোগ্যদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে;
১২। নিয়োগ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে;
১৩। মানুষের জীবন রক্ষার চিকিৎসায় ডাক্তার! তাই বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর দক্ষতা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যোগ্য শিক্ষকের প্রতুলতা ও পরিবেশ দেখে পারমিট পুনঃবিবেচনা করতে হবে;
১৪। হাসপাতালে বিশ্বমানের সেবার জন্য নার্স ও স্টাফদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সৌজন্য সাক্ষাতে আরো ছিলেন এনডিপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস ও ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।
(ঢাকাটাইমস/০৮সেপ্টেম্বর/জেবি/কেএম)