বগুড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে কুপিয়ে খুন, প্রতিপক্ষের আহতকে হাসপাতালে পিটিয়ে হত্যা
বগুড়ায় শত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মিজানুর রহমান মিজান (৩৫) নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় লেদু নামে আহত একজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিটিয়ে হত্যা করেছে নিহত মিজানের পক্ষের লোকজনরা।
সোমবার রাত ১১টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পিটিয়ে হত্যা করা হয় লেদুকে। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে থাকা তিন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালায় বিএনপির লোকজন।
এই ঘটনার দুই ঘণ্টা আগে রাত ৯টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার গোকূল স্ট্যান্ডের আন্তঃজেলা ট্রাক মালিক সমিতির কার্যালয়ে মিজানুর রহমানের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। পরে শজিমেক হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মিজানুর রহমান মিজান বগুড়া সদর উপজেলার গোকূলের আফছার আলীর ছেলে এবং সদর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ছিলেন। আর লেদু গোকূল দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা।
বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী ও গোকূলের বাসিন্দারা জানান, গোকুল ইউনিয়ন যুবদলের সদ্য বহিষ্কৃত নেতা বিপুল ও লেদুর সঙ্গে মিজানের দীর্ঘদিনের বিরোধ ছেল। ২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে গোকূল হল বন্দরে সনি রহমান খুন হন। সনি স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মিজানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। সনি হত্যার ১ নম্বর আসামি বিপুল। আর ৩ নম্বর আসামি লেদু। সেই বিরোধের জেরে সোমবার রাতে বিপুল তার দলবল নিয়ে মিজানের ওপর হামলা চালান।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, মিজান সদর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। তাকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানানৈ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মিজান রাত ৮টার দিকে ওই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে ৬-৭ জনের সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এসময় বিদ্যুৎ ছিল না। তখন পাঁচটি মোটরসাইকেলে চড়ে কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা মিজানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে চলে যায়। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল চত্বরে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ জানায়, গোকূল স্ট্যান্ডে মিজানের ওপর হামলাকারীদের একজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশের একটি গাড়ি আহত ব্যক্তিকে নিয়ে আসে।
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, শজিমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসার পর মিজানের পক্ষের লোকজন আহত ব্যক্তিকে লেদু বলে শনাক্ত করেন। এর পরপরই মিজানের পক্ষের লোকজন ও বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মী উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে জরুরি বিভাগে ঢুকে পড়েন। সেখানে তারা আহত লেদুকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। একই সঙ্গে জরুরি বিভাগে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ সময় জরুরি বিভাগে সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজনসহ কয়েকজন সাংবাদিক। লেদুকে মারধরের ভিডিও ধারণ করায় তাদের ওপরেও হামলা চালায় মিজানের পক্ষের লোকজন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা শজিমেক হাসপাতালে উপস্থিত হন।
মেহেরুল সুজন বলেন, “আমি আগে থেকেই মোবাইলে ভিডিও করছিলাম। উত্তেজিত লোকজন সব ভেঙেচুরে জরুরি বিভাগের ভিতর ঢুকে পড়ে। তারা এসেই আহত লেদুর ওপর হামলে পড়ে। সে যখন মারা যায় তখন তাদের নজর পড়ে আমার মোবাইলের দিকে। এরপর আমার ওপর হামলা চালায় তারা। আমার মাথায় আঘাত লেগেছে। চোখে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে।”
ছিলিমপুর মেডিকেল ফাঁড়ির এসআই রুবেল বলেন, “গোকূলের হামলার ঘটনায় মিজান ও লেদু নামে দুজনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রেখেছি আমরা। এর মধ্যে মিজান আগেই মারা যান। আর জরুরি বিভাগে আহত অবস্থায় আনার পর লেদু মারা গেছে। ভিতরে কি হয়েছে তা জানি না।”
বগুড়া বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, “দুজনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে চেষ্টা করছে পুলিশ।”
(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/এফএ)