ছাত্রদল নেতা জনি হত্যা: আছাদুজ্জামান মিয়ার ৭ দিনের রিমান্ডে
পুলিশি হেফাজতে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনিকে হত্যা মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এ রিমান্ড আদেশ দেন।
পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যা’র অভিযোগের ঘটনার ৯ বছর পর গত ২ সেপ্টেম্বর জনির বাবা ইয়াকুব আলী রাজধানীর খিলগাঁও থানায় এই মামলা করেন।
মামলায় সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীসহ ৬২ জন আসামি। এ মামলায় আছাদুজ্জামান মিয়া ১২ নম্বর আসামি।
জনি হত্যার ঘটনা তুলে ধরে বাদী পক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, নুরুজ্জামান জনিকে খিলগাঁও বালুর মাঠে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আসামি আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে সেই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। আরও তথ্য উদঘাটনের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত সাত দিনের মঞ্জুর করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আছাদুজ্জামান মিয়া ডিএমপির কমিশনার থাকা অবস্থায় ঢাকায় যত গুম এনকাউন্টার হয়েছে তার সবকিছুর সঙ্গে তিনি জড়িত। বিরোধীদলের নেতাদের ভয় দেখিয়ে তিনি হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছেন। সারাদেশে বদলি বাণিজ্য করেছেন তিনি।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
২০১৫ সালের ১৯ থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে খিলগাঁও এলাকায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. নুরুজ্জামান নিহত হন।
মামলায় বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৯ জানুযারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নূরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইনসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যান। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। পরবর্তীতে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন-দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়েও নির্যাতন চালানো হয়। তখন জনির ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীস্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় হন্য হয়ে খুঁজে বেড়ায়। আসামিরা জনিকে আটক করেননি বলে জানান। প্রায় দুই দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করার পরেও নুরুজ্জামান জনির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে গত ২০ জানুযারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার করে কান্নার শব্দ শুনতে পান। নির্যাতিত ব্যক্তিটি পানি-পানি বলে চিৎকার ও মা-মা বলে আর্তনাদ করতে থাকেন।
ঘটনাস্থলের এলাকার পাশে সি-ব্লকের এক নারী জানান, তিনি রাতের কান্নার শব্দ শুনেছেন। আরও কয়েক বাসিন্দা জানান, তারা রাত ৩টার দিকে ওমাগো, মা, মা.. বাঁচাও বলে কয়েকবার চিৎকার শুনেছেন।
সেই সময় আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা গুলির শব্দ শুনতে পান। ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষীরা ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশদের দেখতে পায়। আসামিরা বলেন যে, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
বাদী ও সাক্ষীরা ঢাকা মেডিকেল মর্গে যান এবং সেখানে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তার সমস্ত শরীর ঝাঁজরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কর্কশ ভাষায় গালিগালাজ করেন। লাশ গ্রহণ না করলে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন।
(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/আরজেড/ইএস)