হাঁটুতে ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১২

হাঁটুর ব্যথায় পা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। তবে এ সমস্যা কোনও প্রৌঢ়়ত্বে পৌঁছনো কারও নয়। যে কোনও বয়সেই হাঁটুর ব্যথা হতে পারে। দেখা যায় ৩০-এর এক তরুণ হাঁটুর ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েছেন। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, হাঁটুর ব্যথার সমস্যায় ইদানীং কমবয়সিরা বেশি ভুগছেন। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের হাঁটু ব্যথা বেশি হয়। অফিসে এক জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকা, ব্যস্ততার কারণে শরীরচর্চার অভাবে মূলত এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। আঘাত, আর্থ্রাইটিস বা অন্য কোনো কারণে হাঁটু ব্যথা হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং জীবনযাপনের কারণে এ সমস্যা বেড়েছে। ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সুগঠিত পেশি না হওয়ার কারণে হাঁটুর ব্যথা অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হাঁটু মানুষের শরীরের পুরো ওজন বহন করে ও আমাদের দাঁড়াতে, হাঁটতে, দৌড়াতে সাহায্য করে। হাঁটু মূলত একটি জটিল অস্থিসন্ধি, যা ফিমার, প্যাটেলা ও টিবিয়া নামক ৩টি হাঁড়ের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়া এ জয়েন্ট অনেক মাংসপেশি ও সন্ধিবন্ধনীর সাহায্যে সংযুক্ত। হাঁটুর জয়েন্টের ভেতরটা সায়নোভিয়াল মেমব্রেন বা ঝিল্লি দিয়ে ঢাকা থাকে। এ সায়নোভিয়াল মেমব্রেন সায়নোভিয়াল ফ্লাইড তৈরি করে, যা হাঁটুর ঘর্ষণজনিত ক্ষয় রোধ করে। হাঁটুর জয়েন্টের চারপাশে থাকে সূক্ষ্ম নার্ভের জালিকা যা হাঁটুতে তৈরি হওয়া ব্যথার অনুভূতি ব্রেইনে পাঠিয়ে দেয় ও আমরা হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করি।

হাঁটুর ব্যথা দেখা দিলেই কড়া কড়া ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘরোয়া পদ্ধতিতেই দ্রুত এই ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে। কী পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে চলুন তা জেনে নিই-

তিন থেকে চার টুকরা বরফ তোয়ালেতে জড়িয়ে হাঁটুর ঠিক যে জায়গায় ব্যথা হচ্ছে, সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট চেপে ধরে রাখুন। এতে অনেকসময় ব্যথা কমে যায়।

৩ থেকে ৪ চামচ অলিভ অয়েল গরম করে ব্যথার জায়গায় আলতো হাতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মালিশ করুন। দিনে দুই থেকে তিনবার এটা করলে ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।

গরম পানির মধ্যে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটু ডুবিয়ে রাখুন। হট ওয়াটার ব্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। ব্যথা নিরাময়ে দিনে দুই থেকে তিনবার এটা করতে হবে।

দুই কাপ দুধের সঙ্গে এক টেবিল চামচ বাদাম, আখরোটের গুঁড়া ও সামান্য হলুদের গুঁড়ো ভালভাবে ফোটাতে হবে, যতক্ষণ না মিশ্রণের পরিমাণ অর্ধেক হচ্ছে। টানা দুইমাস দিনে একবার এই দুধ খেয়ে যেতে হবে। ব্যথায় আরাম পাবেন।

‘এসেন্সিয়াল অয়েল’ দিয়ে মালিশ: শুধু হাঁটু নয়, শরীরের সকল জোড়ের ব্যথায় মালিশ অত্যন্ত উপকারী। আর এই মালিশের কাজে ‘এসেনশল অয়েল’ ব্যবহার করাটা আরও উপকারী হতে পারে। আদা এবং কমলা থেকে তৈরি ‘এসেনশল অয়েল’ হাঁটু ব্যথা সারাতে সহায়ক। এই তেলগুলো পেশি সিথিল করে এবং আক্রান্ত অংশের ব্যথা কমায়।

ব্যথা আক্রান্ত অংশে গরম ভাপ দেওয়া এবং বরফ প্রয়োগ করা দুটোই উপকারী। তবে ব্যথার ধরনের উপর নির্ভর করবে ভাপ নেবেন না কি বরফ ঘষতে হবে।

হাঁটুতে সংক্রমণ বা প্রদাহ থাকলে গরম ভাপ দেওয়া যাবে না, কারণ তাতে সমস্যার তীব্রতা বাড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদি হাঁটুর ব্যথা যেমন- বাতের কারণে হওয়া ব্যথার নিরাময়ে গরম ভাপ দেওয়া অত্যন্ত কার্যকর। আর খেলাধুলা ও দুর্ঘটনা থেকে হওয়া ব্যথায় বরফ প্রয়োগ করতে হবে।

অ্যাপল সাইডার ভিনিগার থাকা প্রদাহনাশক উপাদান বাতের মতো দীর্ঘমেয়াদি হাঁটু ব্যথা থেকে আরাম দিতে পারে। অ্যাপল সাইডার ভিনিগার হাড়ের জোড় পিচ্ছিল করে, যা ব্যথা কমাবে এবং নড়াচড়া করতে সুবিধা হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একগ্লাস পানিতে আধা কাপ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করতে হবে প্রতিদিন।

আদার তেল, নির্যাস কিংবা সরাসরি আদা খাওয়া হাঁটুর জন্য উপকারী। ‘জিনজেরোল’ নামক উপাদানে ভরপুর আদা, যা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক। প্রতিদিন দুকাপ আদা চা পান করলেও উপকার মিলবে।

ঔষধি গুণের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই সুপরিচিত হলুদ। এতে থাকে আরেকটি শক্তিশালী প্রদাহনাশক উপাদান ‘কারকিউমিন’, যা হাড়ের জোড়ের ব্যথা এবং প্রদাহ সারাতে অত্যন্ত কার্যকর। এক গ্লাস পানিতে আদা ও হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে ১২ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে এবং তা প্রতিদিন পান করতে হবে।

‘ক্যাপসাইসিন’ নামক উপাদান থাকে লাল মরিচে, যা কাজ করে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে। দুই চা-চামচ জলপাইয়ের তেলের সঙ্গে এক চা-চামচ লাল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে এবং আক্রান্ত স্থানে মালিশ করতে হবে।

ইপসম লবণে থাকে ম্যাগনেসিয়াম ও সালফেট। দুটোই শক্তিশালী ব্যথানাশক উপাদান, পাশাপাশি কমায় ফোলাভাব। গোসলের পানিতে বড় এক চামচ ইপসম লবণ মিশিয়ে তাতে আধা ঘণ্টা ডুবে থাকতে পারেন।

আদা খেলে হাঁটুর ব্যথা অনেকটা কমে। এ ক্ষেত্রে সকাল সকাল আদা চা খেতে পারেন।

খাদ্য তালিকায় যেন ভিটামিন সি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে থাকে। সামুদ্রিক মাছ, টুনা মাছ, বাদাম, ফ্ল্যাক্সসিড খেতে পারেন। সয়াবিনেও প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তবে হাঁটুর ব্যথা খুব বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

সব সময়ে চোট লেগেই ব্যথা হবে, এমন নয়। হাঁটুব্যথার একটি বড় কারণ হল ওজন। শরীরের ভার যত বাড়বে, হাঁটুর উপর তত চাপ পড়বে। তার থেকে ব্যথাও বেশি হবে। ওজন কমানোর সব রকম চেষ্টায় মন দিন। তাতে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।

হাঁটুতে ব্যথায় কিছু ব্যায়ামেরও সাহায্য নিন। তাতে ব্যথার হাঁটুর পেশি নমনীয় থাকবে। তা হলে ব্যথা কমতে কম সময় লাগবে। ‌হালকা হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো কিংবা যোগব্যায়াম— যে কোনওটি‌ই করা যেতে পারে নিয়ম মেনে। তবে চোট লেগে থাকলে এ ধরনের ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

(ঢাকাটাইমস/১৭ সেপ্টেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :