চট্টগ্রাম

থানায় নির্যাতনের অভিযোগে ১৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা, সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৩৩| আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৪০
অ- অ+
আদালত ভবন, চট্টগ্রাম। ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক কলেজছাত্রকে থানায় ধরে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে ১৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তার অধীনে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনের আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী কলেজছাত্রের বড় ভাই নজরুল ইসলাম। নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র নাজমুল হোসেন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

মামলার আসামিরা হলেন নগর পুলিশের সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) অতনু চক্রবর্তী, কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি এস এম ওবায়দুল হক, কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মিজানুর রহমান, কোতোয়ালি থানার এসআই মেহেদী হাসান, গৌতম, এএসআই রনেশ বড়ুয়া ও রুবেল মজুমদার, কনস্টেবল মো. কামাল, মো. শাহজাহান, বাকলিয়া থানার সাবেক ওসি আফতাব হোসেন, এসআই মো. মিজান ও আবদুস সালাম ও কনস্টেবল মো. ইলিয়াস।

মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তার ভাই নাজমুলকে ধরে নিয়ে বাকলিয়া থানায় নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তিনি আহত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়ার আগে থানার ওসির দেহরক্ষী কনস্টেবল মো. ইলিয়াস গুলি করে মারার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘ও শিবির, আন্দোলনে যোগ দিছে। ওকে মেডিকেলে নেওয়ার আগে এখানেই গুলি করে মেরে ফেলব।’ এ কথা বলেই ওই কনস্টেবল দৌড়ে থানার হাজতখানায় গিয়ে শটগান এনে নাজমুলের দিকে তাক করেন।

বাদীর আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ জানান, আদালত বাদীর বক্তব্য শোনার পর থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সিআইডিকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ভুক্তভোগী নাজমুল হোসেন, মামলার বাদী মো. নজরুল ইসলাম ও তার পরিবারকে কেন নিরাপত্তা দেওয়া হবে না— ১৪ দিনের মধ্যে তা জানাতে আসামিদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তার (বাদীর) ছোটভাই নাজমুল হোসেন গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নগরের বাকলিয়া নতুন ব্রিজ এলাকার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। ওই দিন পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে নাজমুলকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাকে লোহার স্টিক, স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে মারধর করতে থাকে পুলিশ সদস্যরা। নাজমুলকে শিবির আখ্যা দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। তখন ভুক্তভোগী বারবার শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বললেও তা পুলিশ শোনেনি। একপর্যায়ে তাকে পুলিশের গাড়িতে করে নগরের চান্দগাঁও থানায় নিয়ে আসা হয়। পথিমধ্যেও মারধর চলতে থাকে।

পরে তাকে চান্দগাঁও থানায় আধঘণ্টা রাখার পর কোতোয়ালি থানায় আনা হয়। থানার দ্বিতীয় তলায় নিয়ে নাজমুলকে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয়। মারধরে নাজমুলের হাত, পা থেঁতলে যায়। চোখের নিচে আঘাত লেগে রক্ত বেরিয়ে পড়ে। এরইমধ্যে নাজমুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তিনি নিজেকে দেখতে পান নগরের আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে।

সেখানকার চিকিৎসকেরা অবস্থা খারাপ দেখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা হাসপাতালে না নিয়ে নাজমুলকে বাকলিয়া থানায় নিয়ে যান। সেখানে চলে পুনরায় নির্যাতন। নাজমুলের বড় ভাই নজরুল খবর পেয়ে বাকলিয়া থানায় যান। সেখানে গেলে দেখেন বাকলিয়া থানার ওসির দেহরক্ষী মো. ইলিয়াস তার ভাইকে হাসপাতালে না নিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন।

একপর্যায়ে শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে বাকলিয়া থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলায় ১৪ দিন হাজতবাস শেষে নাজমুল কারাগার থেকে মুক্তি পান।

এ প্রসঙ্গে নির্যাতিত কলেজছাত্র নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। আটকের পর পুলিশ বারবার শিবির বলে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে। এখনো ট্রমায় ভুগছি। রাতে ঘুম থেকে আঁতকে উঠি। পুলিশ দেখলেই ভয় পাচ্ছি।’

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আজ বাড়বে তাপমাত্রা, সিলেট-চট্টগ্রাম ছাড়া দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম
বৃষ্টিতে ভিজে জুলাই শহীদ ও আহত পরিবারে মাংস পৌঁছে দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের ধারক মজাদার মেজবানি মাংস, যেভাবে রান্না করবেন
অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রতীরে দেখা মিলল রহস্যঘেরা ভয়ংকর মাছ, পৃথিবীর দিন শেষ!
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা