দাম বেঁধে দেওয়া হলেও লাগাম নেই ডিম-মুরগির বাজারে
ডিম ও মুরগির যৌক্তিক দাম বেঁধে দেওয়ার পরেও বেড়েই চলছে সাধারণে মানুষের পুষ্টির এ পণ্যগুলোর দাম। আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে তারও দুই সপ্তাহ আগে। কিন্তু প্রভাব নেই বাজারে। তাতে অসন্তুষ্ট সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর রামপুরা বাজারের একজন ক্রেতা বলেন, আগেও বাজারে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হতো, যা কার্যকর হতো না। এখন ভেবেছিলাম কিছুটা পরিবর্তন হবে। কিন্তু কোনো পরিবর্তন আমরা পাচ্ছি না।
বিক্রেতারা জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দর ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়। যখন ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তখন প্রতি ডজন বিক্রি হতো ১৫০-১৫৫ টাকা দরে। যা ১০টাকা বেড়ে এখন ১৬৫ টাকা হয়েছে।
একই অবস্থা ব্রয়লার ও সোনালি জাতের মুরগির ক্ষেত্রেও। বাজারে যখন প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ১৭০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল, তখন দাম নির্ধারণ করা হয় কেজি প্রতি যথাক্রমে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা। এখন কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়।
উৎপাদনকারী থেকে খুচরা ব্যবসায়ী কেউই নির্ধারিত দাম মানছেন না। বরং আমিষ জাতীয় খাদ্যপণ্য দুটি আগের চেয়ে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
দর বাড়ার ব্যাপারে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দর নির্ধারণের আগে সরকার কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেনি। উৎপাদন না বাড়িয়ে দর নির্ধারণ করলে তা বাস্তবায়ন হবে না।
আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, যে কারণে বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে তারা বিক্রি করতে পারছেন না।
রাজধানীর বাজারগুলোতে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা দরে। যা নির্ধারিত দরের চেয়ে ২২ টাকা বেশি। এছাড়া দেশি হাঁস-মুরগির ডিমের ডজন খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০৫ থেকে ২১৫ টাকা দরে।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখি সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ জানান, প্রয়োজনমত ডিম আমদানি হচ্ছে না। আবার, বন্যায় হাজার হাজার ফার্মের মুরগি মারা যাওয়ায় ডিমের উৎপাদন কমেছে। কিন্তু চাহিদা কমেনি। তাই দাম বাড়ছে।
বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর পাশাপাশি নির্ধারিত ন্যূনতম দাম প্রত্যাহার করেছে ভারত। দুটি ব্যবস্থা কার্যকর হলেও, দেশের বাজারে এর প্রভাব নেই।
শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আমানুল হক বলেন, বাজারে এখনো ভারতের পেঁয়াজ আসেনি। যা বিক্রি হচ্ছে সেটা দেশি জাতের। তাই বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। দেশে অতিবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ সরবরাহ হয়নি বাজারে। ভারতের পেঁয়াজ এলে দাম কিছুটা কমতে পারে।
এতদিন ভারত থেকে আমদানি মূল্য ছিল টনপ্রতি ৫৫০ ডলার। অর্থাৎ বাজারে যে দামেই পেঁয়াজ কেনা হতো, তা ৫৫০ ডলার দাম ধরে শুল্কায়ন করা হতো। এখন আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হলেও, নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না।
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানায়, পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আলুতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে।
তবে বাজারে আলুর দামও কমেনি। প্রতি কেজি আলু আগের মতো ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/টিটি/এফএ)