দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের দাবি সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনের

অনলাইন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৫

তামাকের স্বাস্থ্যগত ও আর্থিক ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা ও বিশিষ্টজনরা।

বুধবার তামাক নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে নারী মৈত্রীর আয়োজনে ''তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সাংবাদিকদের নিকট প্রত্যাশা ও করণীয়'' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়। রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অনকোলজিস্ট প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশ এর লীড পলিসি এ্যাডভাইজার এবং বিসিআইসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এতেমবিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, গ্লোবাল টিভির চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শামীম মেহেদী, প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ বেগম পলি, নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা— এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এর ঢাকা ব্যুরো প্রধান জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জুলহাস আলম।

এছাড়াও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৭১ টিভির স্পেশাল করসপনডেন্ট সুশান্ত কে সিনহা, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজারস আব্দুস সালাম মিয়া ও কমিউনিকেশনস ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানা।

সভায় বিশেষজ্ঞ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, 'বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের কারণে মুত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ি তামাক। তামাকের কারণে ফুসফুস ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক অন টোব্যাকো কন্ট্রোল—এফসিটিসিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হলেও ধুমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমরা এখনো সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারিনি। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ এবং শক্তিশালী করা অতি জরুরি। যা তামাকমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে।' এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'তামাক একটি প্রাণঘাতী দ্রব্য। তামাকের পক্ষে বলার মতো একটি শব্দও নেই। তামাক পরিবেশ, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। টোব্যাকো এটলাস ২০১৮- এর তথ্য মতে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মানে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান । জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ও জীবন রক্ষায় দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে এখনই। আইন শক্তিশালী করবার এই পদক্ষেপ বেগবান করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারেন আমাদের গণমাধ্যমের বন্ধুগণ,যাদের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের লেখনি ও গণমাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য ও সংবাদ পৌঁছানোর কৌশল।'

সভায় তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপ-কৌশলে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান সাংবাদিক সুশান্ত কে সিনহা। তিনি বলেন, 'তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর সংশোধনী আনার যে উদ্যোগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত এবং জনবান্ধব উদ্যোগ। তবে বেশ কিছু ধাপ পার হলেও আইনটিকে চূড়ান্ত রূপ পেতে হলে আরও কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এখনো এটি পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এটিকে আইনে রূপান্তরের পথে নানারকম বাধা আসার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে সংশোধনীর বিপক্ষে তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপ-কৌশল ও অপ-তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনবিভ্রান্তি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদেরকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।'

রাশেদ রাব্বি বলেন, 'তামাক থেকে সরকারের যে রাজস্ব আয় আসে তার চেয়ে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় ৩৪ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আয় প্রায় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা এবং চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের কারণে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা (ক্যান্সার সার্ভে-২০১৮)। সুতরাং মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা।'

তামাকের কারণে আর একটি প্রাণও যাতে না হারাতে হয় সেই আহ্বান জানিয়ে প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, 'প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এই ভয়ঙ্কর তামাকের আগ্রাসনে। তামাকের এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসন ও তামাক মহামারী আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমাদের তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরও সোচ্চার হতে হবে ।পাশাপাশি তামাক কোম্পানির গুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে।'

শামীম মেহেদী এসময় বলেন, 'তরুণরা ই-সিগারেটের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের এই আসক্তি থেকে বের করে আনতে ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।'

সভায় সভাপতির বক্তব্যে শাহীন আকতার ডলি বলেন, 'বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদানে মা ও শিশু উভয়ই মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জোরালো দাবি জানাচ্ছি।'

এসময় অন্যান্য আলোচক ও অতিথিরাও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের তাগিদ জানান। আলোচকগণ তাদের বক্তব্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত বিষয়গুলো যেমন- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা; তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা; তামাক পণ্যের সব প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার প্রতি জোরারোপ করেন।

(ঢাকাটাইমস/০৯অক্টোবর/এমআই/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

যশোরে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস উপদেষ্টা রিজওয়ানার

উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ হওয়ায় সরকারের কাজে গতি বাড়বে: প্রেস সচিব

নতুন দুইজনসহ তিন উপদেষ্টার মধ্যে দপ্তর বন্টন, ছয়জনের পুনর্বণ্টন

সাইবার বুলিং বন্ধে আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে সরকার: উপদেষ্টা নাহিদ

যত বেশি দেশের সঙ্গে সম্ভব, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করবে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা

শপথ নিলেন নতুন তিন উপদেষ্টা, কার কী দপ্তর

বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হচ্ছেন সাবেক আইজিপি খোদা বকশ

সোমবার আজারবাইজান সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা 

পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :