বর্বরোচিত গণহত্যা
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০ শিশুসহ ৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজায় নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। উত্তর গাজার আবাসিক ভবনগুলোতে দুটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০টিরও বেশি শিশুসহ ৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে সরকারি মিডিয়া অফিস। রিপোর্টে একে ‘নিষ্ঠুর গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
আল জাজিরার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলা গত দিনে মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং আশপাশের অঞ্চলে আঘাত হেনেছে, কয়েক ডজন লোককে হত্যা করেছে। এক মাস বয়সী শিশু ও তার মা’সহ শিশুরা আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ, জেট ফাইটার এবং দূরপাল্লার বোমারু বিমানসহ আরও সামরিক সম্পদ মোতায়েন করবে।
আল জাজিরা আরবি সহকর্মীরা জানিয়েছেন, মধ্য গাজার নুসিরাতের ক্যাম্প ৫ এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বোমা হামলার পর কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং আরও বেশি আহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক কয়েক ঘণ্টায় নুসেইরাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত বেশ কয়েকটি হামলার মধ্যে এটি সর্বশেষ। গাজার সরকারি মিডিয়া সূত্রের বরাত দিয়ে ফিলিস্তিনি তথ্য কেন্দ্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ওই এলাকায় অন্তত ৩৪ জন নিহত এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
আল জাাজিরার ওই কর্মীরা বলেন, “এর আগে আমরা শিবিরের উত্তরে আল-আসার পরিবারের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় তিনজন নিহত এবং আরও আহত হওয়ার খবর পেয়েছি।”
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) সিনিয়র জরুরি কর্মকর্তা লুইস ওয়াটারিজ এর আগে মধ্য গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবির থেকে আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “পৃথিবীতে যখন গোলাবর্ষণ হয় তখন মানবতাবাদীরা কীভাবে সীমান্ত থেকে অভাবী মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে যেতে পারে, যখন বিমান হামলা হয়, যখন ড্রোন আছে, যখন নেভি ফায়ার আছে? গত ২৪ ঘণ্টা ধরে আমরা এটাই পেয়েছি এবং এটি এখানে মানবিক প্রতিক্রিয়াকে একেবারে অসম্ভব করে তুলছে।”
“এটা একেবারেই ভয়ংকর। আজকে গাজা উপত্যকায় আমার অভিজ্ঞতা সবচেয়ে খারাপ দিনগুলোর একটি। আমি এপ্রিল থেকে এখানে আছি। আমি এখানে রাফাহ অনুপ্রবেশের মধ্য দিয়ে এসেছি। আমরা উত্তরে ভয়ংকর গল্প শুনেছি। উত্তরে যেতে পারি না। এটা ঘেরাও করা হয়েছে,” তিনি বলেন।
লুইস ওয়াটারিজ বলেন, “কিন্তু এই মুহূর্তে, আমাদের চারপাশে এই বোমা হামলা, এই ক্রমাগত বোমাবর্ষণ, এটা ভয়ংকর। আপনি বাচ্চাদের কান্না শুনতে পাচ্ছেন। মানুষ চিৎকার করছে। জীবন বাঁচাতে ছুটছে মানুষ এবং এটি ২৪ ঘণ্টা ধরে বিরতিহীনভাবে চলছে। কোথাও যাওয়ার নেই। মানুষ আটকা পড়েছে। আমি মনে করি লোকেরা গাজা স্ট্রিপ ছেড়ে যেতে পারে না। মানুষের যাবার জায়গা একেবারেই নেই। তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পালিয়ে যাচ্ছে এবং যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই বোমা হামলা হচ্ছে। এটা ভয়ংকর।”
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে কমপক্ষে ৪৩ হাজার ২৫৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ এক হাজার আটশ ২৭ জন আহত হয়েছে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় ইসরায়েলে আনুমানিক ১১শ ৩৯ জন নিহত হয়েছিল এবং ২০০ জনেরও বেশি বন্দি হয়েছিল।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত দুই হাজার আটশ ৯৭ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ১৫০ জন আহত হয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৩০ জন নিহত হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/এফএ)
মন্তব্য করুন