কুয়াকাটায় নানা সংকটে ধুঁকছে সরকারি হাসপাতাল

পর্যটন নগরী সাগরকন্যা কুয়াকাটায় রয়েছে একটি ২০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পর্যটক ও উপকূলের মানুষের জরুরি সেবায় হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু হাসপাতালটিতে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি এবং নার্সসহ রয়েছে চিকিৎসক সংকট। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবাবঞ্চিত পর্যটকসহ চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বাসিন্দা।
কুয়াকাটা ২০ সয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবলেট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। দুজন ডাক্তার, পাঁচজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও একজন ওয়ার্ড বয় দিয়েই চলছে হাসপাতালটি।
উপজেলার মহিপুর থানাধীন চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার দুই লক্ষাধিক মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে তিন একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় হাসপাতালটি। মূলত গর্ভবর্তী সেবা, স্বাভাবিক প্রসব সেবাসহ বিভিন্ন সেবার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর কিছুই নেই হাসপাতালে। বর্তমানে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো সেবা দেওয়া হচ্ছে না, এমনটাই হাসপাতাল সূত্র জানায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের বাইরে যত্রতত্র পড়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাশে থাকা পাবলিক টয়লেটগুলোর দরজা ভাঙা ও নোংরা, যা রোগীদের ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী।
এদিকে চিকিৎসকের সকল পদই শূন্য। হাসপাতালটিতে নেই কোনো প্রকার যন্ত্রপাতি। ওয়ার্ডগুলোও করা হয় না নিয়মিত পরিষ্কার। স্বাস্থ্য পরীক্ষারও কোনো ব্যবস্থা নেই। আউটডোরে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগীরা চিকিৎসা নেয়। নেই ওয়ার্ড ও ওষুধের বরাদ্দ।
শুধু অবকাঠামো হিসেবেই টিকে আছে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি। হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স সংকট ছাড়াও রয়েছে জনবল সংকটও। এছাড়া রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারের মধ্যেই জরুরি চিকিৎসা নিতে হয়। স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই বলে জানান স্থানীয়রা।
‘হাসপাতালের চিকিৎসা দরকার, আমাদের সেবা দেবে কে? এলাকার ফার্মেসিগুলোতেও যে সেবা পাই এর চাইতেও নিম্নমানের সেবা দেওয়া হয় এখানে।’ চিকিৎসা নিতে এসে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব পিয়ারা বেগম।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, গুরুত্বপূর্ণ শূণ্য পদগুলো হলো জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস), আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল অফিসার, মেডিকেল টেক: (ল্যাব:), সর্মাসিস্ট, সিনিয়র স্টাফ নার্স, প্রধান অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম হিসাব মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ওয়ার্ড বয়, ল্যাব অ্যাটেনড্যান্ট, আয়া, দারোয়ান, এমএলএসএস, ঝাড়ুদার ও কুক।
আরও জানা গেছে, হাসপাতালটিতে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। প্রসূতিদের অস্ত্রোপচারের জন্য একজন গাইনি সার্জন ও একজন অবেদনবিদ প্রয়োজন। রোগীরা জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ২২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, ‘কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে দুজন ডাক্তার আছে। তারা নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালটির কোড তৈরির জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছি।’
(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/এজে)

মন্তব্য করুন