নড়াইলে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, ফোন ধরেন না ডিজির প্রতিনিধি
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ি-তালবাড়িয়া হামিদিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও কাঁটাছেড়া, আগের মাদরাসা থেকে ছাড়পত্র না নিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান এবং টাকার বিনিময়ে নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ এস এম আবুল বাশারের বিরুদ্ধে! এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের দাবি করেছেন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওযা প্রার্থী ও মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক।
বিষয়টি তদন্তের জন্য গত ৮ অক্টোবর মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন তারা। তবে এখনো পর্যন্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
গত ২ আগস্ট কুমড়ি-তালবাড়িয়া হামিদিয়া আলিম মাদরাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ হয়। এর আগে এস এম আবুল বাশার মাগুরা সদরের বারাশিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার ছিলেন। অধ্যক্ষ হিসেবে নতুন কর্মস্থল কুমড়ি-তালবাড়িয়া হামিদিয়া আলিম মাদরাসায় যোগদান করলেও আগের কর্মস্থল বারাশিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ছাড়পত্র নেননি তিনি।
বিষয়টি বারাশিয়া দাখিল মাদরাসার তৎকালীন সভাপতি ও মাগুরা সদরের বগিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওনক হোসেন স্বীকার করে বলেন, ‘এস এম আবুল বাশার আমাদের মাদরাসার সুপার থাকাকালীন অন্য মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়েছেন বলে শুনেছি। তবে এখান থেকে ছাড়পত্র নেননি এবং মাদরাসার আর্থিক হিসাব বুঝিয়ে দেননি তিনি।’
এদিকে, গত ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজির প্রতিনিধি ঢাকার সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এস এম আবুল বাশার তিন লাখ টাকার বিনিময়ে আগেই প্রশ্ন পেয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কে এম হাসমত উল্লাহ বলেন, ‘পরীক্ষার দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশে প্রতিকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ দেশে বিভিন্ন পরীক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ ছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াসহ দেশে প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ থাকায় মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শওকত হুসাইন ডিজির প্রতিনিধিকে ওই দিন (২ আগস্ট) পরীক্ষা না নেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ডিজির প্রতিনিধি প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
এস এম আবুল বাশারের বিরুদ্ধে অন্য পরীক্ষার্থদের হুমকির অভিযোগ করেন মো. ওলিউল্লাহ নামের আরেকজন পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার দিন এস এম আবুল বাশার আমাদের নানা ধরনের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। পরীক্ষার নিয়ম-নীতি মানা হয়নি।’
পরীক্ষার্থী মো. মঈনুদ্দীন বলেন, ‘এস এম আবুল বাশার মাগুরা জেলা সদরের বারাশিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে সঠিকভাবে ছাড়পত্র নিয়ে আসেননি। অধ্যক্ষ পদে বেতনের জন্য ভুয়া কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছেন। এসব অনিয়ম ও অভিযোগের তদন্ত করা হোক।’
এ ব্যাপারে ডিজির প্রতিনিধি ঢাকার সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েক দিন ধরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। গত সোমবার দুপুরে একবার ফোন রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর তার বক্তব্যের জন্য মোবাইল ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলেও তিনি সাড়া দেননি। মেসেজের মাধ্যমেও তার বক্তব্যের পাওয়ার অনুরোধ করা হলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।
বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ এস এম আবুল বাশার দাবি করেন, নিয়োগ পরীক্ষা যথাযথ নিয়মে হয়েছে। টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সঠিক নয়। আমি যোগ্যতা অর্জন করে নিয়োগ পেয়েছি।’
(ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন