শীতে কোন সময়ে যে নিয়মে ডিম খেলে দ্রুত ওজন কমবে
অতিরিক্ত ওজন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। শরীরে ওজন বাড়লে শুধু সৌন্দর্য নষ্ট করে না, এর কারণে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, রক্তচাপের মতো অসুখও হয়। শরীরের ওজন কমানোর জন্য সাধ্যমতো পরিশ্রমও করেন অনেকে। কিন্তু সফল হন কেউ কেউ। পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, আসলে এ ক্ষেত্রে চেষ্টার মধ্যেই থেকে যায় গলদ। জিমে যাওয়া, খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম মানা, বাইরের খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা— প্রতিদিনের জীবনে এমন হাজার নিয়ম মেনে চলেও মেদ ঝরতে চায় না কিছুতেই। তাহলে এই শীতকালটাই বেছে নিন ঝরঝরে জন্য। আর ডায়েটে রাখুন সিদ্ধ ডিম! কাজ হবে ম্যাজিকের মতো। অনেকেই ভাবেন, এটি খেলে ওজন বেড়ে যায়। তাই খাদ্যতালিকা থেকে ডিম বাদ দেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক নিয়মে ডিম খেলে ওজন বাড়ে না। বরং মেদ ঝরাতে সাহায্য করে এটি।
আধুনিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল বাড়ে না; বরং অতিরিক্ত চর্বি কমায়। গবেষণা বলছে, ডিমের কুসুম শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়।
ডিম সহজেই আমাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে পারে। একটি ডিমে ৭৫ ক্যালোরি থাকে। এতে ৭ গ্রাম উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে। এছাড়া একটি ডিম খেলে শরীরে ৫ গ্রাম ফ্যাট, ১.৬ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং আয়রন, ভিটামিন, মিনারেল এবং ক্যারোটিনয়েড পাওয়া যায়। একারণে একে পুষ্টির পাওয়ার হাউস বলা হয়।
ওজন কমাতে চাইছেন, তাদের জন্য খনিজ, ভিটামিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিম, খুবই ভাল। তবে জানেন কি, ডিমের সঙ্গে যেসব বিশেষ জিনিস মিশিয়ে খেলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানো যায়? ডিমের সঙ্গে এই খাবারগুলোর সংমিশ্রণে, মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কয়েক কেজি ওজন কমাতে পারে আপনি সহজেই।
ডিম ও পালং শাক
ডিমের সঙ্গে পালং শাক, দ্রুত ওজন কমানোর একটি দুর্দান্ত ফর্মুলা। এক কাপ পালং শাকে মাত্র সা৭ ক্যালোরি এবং অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এই সংমিশ্রণে প্রায় কোনও অবাঞ্ছিত ক্যালোরি নেই। আয়রন সমৃদ্ধ পালং শাক আমাদের শক্তি ও বিপাককেও বাড়িয়ে দেয়। এটি শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ডিমের সঙ্গে ক্যাপসিকাম
পুষ্টিবিদদের মতে, ডিমের সঙ্গে ক্যাপসিকাম মিশিয়ে কোনো পদ তৈরি করলে তা দেখতে যেমন সুন্দর লাগে, তেমনি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে, যা মেদ কমাতে উপকারী ভূমিকা রাখে।
চিলি ফ্লেক্স ও ডিম
ডিম ওমলেট তৈরিতে অনেকেই চিলি ফ্লেক্স ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসেন। ওজন কমানোর যাত্রায় এটি ভালো সঙ্গী। মরিচের গুঁড়া বা চিলি ফ্লেক্স মেদ কমাতে সাহায্য করে।
ডিম ও নারিকেল তেল
মাখন বা অন্য ধরনের তেলে তৈরি অমলেট খেলে, শরীরে বেশি ক্যালোরি মেলে। নারিকেল তেল মেটাবলিজম প্রায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে, ওজন কমাতে সাহায্য করে। ৩০ জনের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এক মাস ধরে প্রতিদিন দু'চা চামচ নারিকেল তেল খেলে কোমরের আকার ১.১ ইঞ্চি কমে যায়। আপনি যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে তেল বা মাখনের পরিবর্তে নারিকেল তেলে অমলেট তৈরি করুন।
ডিম ও ওটস
ওটসের সঙ্গে ডিম মিশিয়ে খেলে, পেটের চর্বি সহজেই কমে যায়। ওটমিলে উপস্থিত স্টার্চ কেবল খাবারের হজমকে ধীর করতে সাহায্য করে না, বরং খিদে মেটাতে এবং ক্যালোরি বার্ন করার অ্যাসিড নিঃসরণকেও ট্রিগার করে। ডিমের সঙ্গে ওটস খেলে মেটাবলিজমও বাড়ে।
ডিম ও ভিনেগার
হাঁড়িতে পানি নিয়ে তাতে অল্প ভিনেগার মিশিয়ে নিন। পানি ফুটে উঠলে তাতে ডিম ভেঙে ছেড়ে দিন। কিছুক্ষণ পরই পোচটিকে আলতো করে তুলে নিন পানি থেকে। ডিমের সবটুকু পুষ্টিগুণ মেলে এই পোচ থেকে। আর পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমে।
সালাদ ও ডিম
আপনার প্রতি দিনের খাবার তালিকায় সালাদ থাকে, এতে নতুনত্ব আনতে যোগ করুন সিদ্ধ ডিমের কুঁচানো অংশ। এর সঙ্গে মেশান গোলমরিচ ও লেবুর রস। এতে পুরো ডিমের পুষ্টিগুণ তো মিলবে। আর মেদও ঝরবে দ্রুত।
কোন সময়ে ডিম খাবেন
ডিম হলো আদর্শ নাস্তা। ডিম যেমন শরীরে শক্তি যোগায় তেমনি মাসলগুলো শক্তিশালী রাখে। সকালে ডিম খেলে সারাদিন অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। আবার সকালে তড়িঘড়ি থাকলে একটা ডিম খেয়ে বের হয়ে যেতে পারেন। ওয়ার্কআউট করে আসার পর ডিম খাওয়া হতে পারে আদর্শ খাবার।
গবেষণা অনুযায়ী রাতের খাবারের পর ডিম খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। তবে অনেকে বলে রাতে ডিম খেলে নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। এজন্য আপনার শরীরের সাথে কখন খাপ খায় সে অনুযায়ী ডিম খান।
সবসময় অল্প তেলে ডিম পোচ বা রান্নার চেষ্টা করুন। আবার বেশি সময় ধরে রান্না করলেও চলবেনা এতে করে পুষ্টিগুণ কমে যায়। প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো এবং এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
(ঢাকাটাইমস/৫ ডিসেম্বর/আরজেড)
মন্তব্য করুন