চরের মালিকানা দ্বন্দ্বে পাঁচ হাজার পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে

মো. তাজেম আলী, মেহেন্দিগঞ্জ (বরিশাল)
  প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:১৯
অ- অ+

বরিশালের দুই উপজেলার (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) মাঝখানে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা চরম আকার নিয়েছে। আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার জনপদে পরিণত হয়েছে গোবিন্দপুর চর। দুই উপজেলার মালিকানা দ্বন্দ্বে প্রায় ৫ হাজার পরিবারে উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এ চরে বসত গাড়া অধিকাংশ মানুষ কৃষক ও জেলে। পার্শ্ববর্তী উপজেলার এক পক্ষের হুমকি-ধমকিতে শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না চরের মানুষ। চাঁদাবাজি, গরু-মহিষ লুটসহ নির্যাতনের ভয়ে চর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন কেউ কেউ।

দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী চারটি মৌজার জমি দাবি করে তা দখলে নিতেই মূলত সন্ত্রাস করে যাচ্ছে এক পক্ষ- এমন অভিযোগ অপর পক্ষের। বিরোধপূর্ণ চারটি মৌজা বর্তমানে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত বলে দাবি করলেও তা মানতে নারাজ হিজলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল গাফফার তালুকদার।

দিন ছয়েক আগে ওই চারটি মৌজা নিজ উপজেলা হিজলা গৌরব্দি ইউনিয়নের দাবি করে তা উদ্ধার করতে দলবল নিয়ে চরে যান আব্দুল গাফফার তালুকদার। সংবাদ পেয়ে মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান তালুকদারের নেতৃত্বে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সেখানে গেলে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায় গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়ে প্রশাসনের পাহারায় ফিরে যেতে বাধ্য হয় আব্দুল গাফফার তালুকদার বাহিনী।

এ নিয়ে দুই উপজেলার দুই ইউনিয়নের মানুষ পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। ফলে সেখানে বসবাসরত প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছেন। জোয়ার-ভাটায় তাল মিলিয়ে চলা এখানকার মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার পথে। ধান, সবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ ও গরু-মহিষে সমৃদ্ধ এই চরের বর্তমান অবস্থা। ধান আর দুলট মৌসুমে কৃষক আর চাষারা ভূমিদস্যু ও চোর-ডাকাতের আতঙ্কে থাকেন।

সরেজমিনে গত বুধবার সকালে মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বিরোধপূর্ণ চারটি মৌজা নিজেদের ভূখণ্ডের দাবি করে তা যেকোনো মূল্যে রক্ষার দাবিতে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে সমাবেশ করেন তারা। এসব কর্মসূচিতে হিজলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আব্দুল গাফফার তালুকদারকে ভূমিদস্যু হিসাবে আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘চারটি মৌজা আমাদের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত করে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়। ওই মৌজা এবং জমির মালিক গোবিন্দপুর ইউনিয়ন। জমির মালিকরা তাদের সম্পত্তি ও ভিটেমাটি রক্ষায় দখলবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো মূল্যে তাদের জমি তারা রক্ষা করবে।’

ওই চরের আবু বক্কর হাওলাদার, মো. বাকের খান, জয়নাল মাঝি, নুরুল ইসলাম শাহ্, মাহামুদ রাঢ়ী ও আলমগীর জমাদার বলেন, তাদের বাপ-দাদার মালিকানা ভোগদখলীয় জমি জোর করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে হিজলার গাফফার তালুকদারের নেতৃত্বে বোবা রত্তনসহ তিন শতাধিক লাঠিয়াল।

বিরোধপূর্ণ মৌজাগুলো হলো, চরভোলা, জোয়ারখালী, চর মেঘা ও মেঘা। এসব মৌজা মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাথে ২০১৬ সালে সংযুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল বরিশাল রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর কর্তৃক ৩১১০০৬০০১০৮ নং স্মারকে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ৪টি নথিপত্র ফেরত দেওয়ার জন্য হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার ভূমিকে পত্র পাঠান বলেও জানা যায়। এ সময় চর রক্ষায় তারা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এ বিষয়ে হিজলার আব্দুল গাফফার তালুকদার বলেন, ‘ওই ৪টি মৌজা হিজলা গৌরব্দি ইউনিয়নের। গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত করে যে গেজেট করা হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি, ওই জমি আমাদের হিজলা উপজেলার নামেই রয়ে গেছে, আমরা আমাদের উপজেলার জমি উদ্ধার করবই।’

এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘ওই চারটি মৌজা নিয়ে বিরোধের কথা শুনেছি। এগুলো মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হলেও এর নথিপত্র মেহেন্দিগঞ্জে আসেনি। আমরা দুই উপজেলার এসিল্যান্ড মিলে চরের জমি প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেব।’

(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি গণসংহতি আন্দোলনের
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন নাহিদ ইসলাম
মুন্সীগঞ্জে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ২০ জন
পাবনায় বালুমহাল দখল নিয়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৭
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা