সোনারগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রক্সি দলিল লেখকের দাপট

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রক্সি দলিল লেখকের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সনদধারী দলিল লেখকরা। গত কয়েক বছর ধরে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি তাদের ভাই, বন্ধু, মামা-চাচাদের সনদ ব্যবহার করে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন।
সম্প্রতি বদলি হওয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামীলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনজনকে সোনারগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ বিজ্ঞপ্তি সোনারগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নোটিশ বোর্ডে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।
অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য সনদধারী দলিল লেখকরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি অন্যান্য প্রক্সি দলিল লেখক ও দালালদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে অনুরোধ জানান তারা।
জানা যায়, সোনারগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক গাজী কামাল হোসেন ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সোনারগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার, তার বোন নকলনবিশ রূপালী ওরফে আছিয়া, লিপি আক্তার ও রিনা আক্তার, হ্যাপী আক্তার, ভাই মনির হোসেন সরকার, পনির হোসেন সরকার ও ভাগিনা রিফাত মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৪ ডিসেম্বর সরেজমিনে তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগকারীর লিখিত বক্তব্য ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রেজা স্বাক্ষরিত এক পত্রে শহীদ সরকারের দলিল লেখার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। পাশাপাশি দলিল লেখার মূল সনদটি বাতিলপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না তার সুস্পষ্ট জবাব চিঠি পাওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে প্রেরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়াও নকলনবিশ রূপালী ওরফে আছিয়া, লিপি আক্তার ও রিনা আক্তার, হ্যাপী আক্তার ও অজিত চন্দ্র দাসকে বদলি করা হয়। শহীদ সরকারের ভাই পনির হোসেন সরকার, মনির হোসেন সরকার ও রিফাত মিয়াকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কার্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। দলিল লেখক সনদ বিধিমালা ১৯০৮ এর ধারা ৮০-ছ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি সনদ ছাড়া প্রতিদিন সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় ব্যবহার করে দলিল লিখলে তাদের টাউট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
দলিল লেখকরা জানান, সোনারগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের অধীনে ১৫৭ জন সনদধারী দলিল লেখক দলিল নিবন্ধন করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে সোনারগাঁর এ কার্যালয়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি সনদ ছাড়াই দলিল লেখার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তারা কর ফাঁকি, জমির শ্রেণি পরিবর্তন, উচ্চমূল্য নিয়ে দলিল লেখা ও মূল দলিলের রিসিট চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সনদ নম্বর ও স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি করে দেদার দলিল নিবন্ধন করে যাচ্ছে। এতে করে সরকার রাজস্ব ও দলিল লেখকরা মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে।সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক গাজী কামাল হোসেন বলেন, ‘সোনারগাঁ এই অফিসের দলিল লেখক সমিতির শীর্ষ দুই নেতার সনদ ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে বেশির ভাগ ব্যক্তি দলিল নিবন্ধন করে থাকে। সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সনদ ছাড়া কোনো ব্যক্তি যেন প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রতিদিন পনির হোসেন ও মনির হোসেন, রিফাত, কবির হোসেন, আরিফ হোসেন, রাসেল, আল মামুন, সার্ভেয়ার মো. কাউসার, শোয়েব মিয়া, বিল্লাল হোসেন, মো. রাসেল মিয়া, সিরাজুল ইসলামসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি দলিল নিবন্ধন করেন। তাদের প্রতিহত করা দরকার।’
সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. খলিলুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের সনদ কেউ ব্যবহার করে না। তবে কোনো দলিল লেখক সমস্যায় পড়ে আসতে না পারলে তার পক্ষে অন্য কেউ দলিল নিবন্ধন করেন।’
সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সাব-রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘তিনজনকে কার্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। টাউটদের বিরুদ্ধে জেলা রেজিস্ট্রার ব্যবস্থা নেওয়ায় তারা ও তাদের লোকজন আমার ক্ষতি করার অপচেষ্টা করছে। নিষেধাজ্ঞার কপির অনুলিপি সোনারগাঁ থানায় দেওয়া হয়েছে। কেউ অন্যের সনদ ব্যবহার করে দলিল নিয়ে এলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘অন্যের সনদ ব্যবহার করে দলিল নিবন্ধন করার কোনো নিয়ম নেই। কেউ অনিয়মের সাথে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাব-রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
(ঢাকাটাইমস/৮ফেব্রুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন