ভারত থেকে ১৪ হাজার টন চাল আমদানি, তবুও কমছে না দাম

বেনাপোল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:০৩
অ- অ+

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় তিন মাসে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। ভারত থেকে চাল আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও বেনাপোলসহ যশোরের বাজারগুলোতে কমছে না দাম। উল্টো স্থানীয় বাজারে গত সপ্তাহে প্রকারভেদে চালের দাম কেজিপ্রতি এক-দুই টাকা বেড়েছে।

অবস্থায় ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চাল আমদানির সময়সীমা আবারও বাড়ানো হয়েছে। আমদানির জন্য বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে চাল আমদানি করতে পারবে। গত ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেসরকারিভাবে নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আতপ চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে এলসি খোলার সময়সীমা আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হলো।

চাল আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে চালের দাম বেশি থাকায় আমদানিকৃত চালের দাম বেশি পড়ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। অবস্থায় দাম কমার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

ক্রেতারা বলছেন, দেশে বর্তমানে ধান-চালের কোনো সংকট নেই। মাস খানেক আগে কৃষকের ঘরে উঠেছে আমন ধান। তারপরও সাধারণ মানুষকে বেশি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে। এতে অনেকে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। কম দামে চাল না কিনতে পেরে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সিন্ডিকেট গড়ে ওঠায় দাম কমছে না বলে মনে করছেন তারা। বিশেষ করে বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় দাম বাড়ছে বলে জানান ক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, খেটে খাওয়া মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষকে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন নিত্যপণ্যসহ বাড়ছে চালের দাম। সম্প্রতি বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যে তার দাম বাড়েনি।

আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিন মাসে বেনাপোল দিয়ে ১৩ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।

সরকার গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়। সময়ের মধ্যে আশানুরূপ আমদানি না হওয়ায় সময় বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তাতেও দেশের বাজারে চালের দাম না কমায় ভারত থেকে আমদানির জন্য আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত এক মাস সময় বাড়িয়েছে সরকার।

চলতি মৌসুমে ধানের দাম বেশি, যে কারণে কমছে না চালের দাম- এমনটাই বলছেন অটোরাইস মিল মালিক ধান ব্যবসায়ীরা। নাভারণ বাজারের সবচেয়ে বড় চালের আড়ত চৌধুরী রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘মোটা চাল ৫১ টাকা স্বর্ণা মোটা চাল ৫৩ টাকা কেজি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। নতুন ধানের চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। আমদানিও স্বাভাবিক রয়েছে। সামনে দাম কমবে। যদিও এবার অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন কমেছে। সে কারণে আমদানি চলমান থাকবে।

সরেজমিনে বেনাপোল শার্শা উপজেলার কয়েকটি রাইস মিলে দেখা যায়, আশানুরূপ ধান কিনতে পারেননি মিল মালিকরা। দাম বাড়ার আশায় কৃষকরা ধান মজুদ রেখেছেন। তবে মিল মালিকরা অন্য জেলা থেকে ধান কিনে আনছেন। এসব ধান থেকে চাল করতে খরচ পড়ছে ৫০ টাকার ওপরে এবং চিকন চাল খরচ পড়ছে প্রায় ৬৩ টাকার মতো। এমনটিই বলছে মিল মালিকরা।

পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, বর্তমানে মোটা চাল ৫২, হীরা চাল ৪৮, উনপঞ্চাশ চাল ৫৬, আঠাশ ৫৮-৬০, জিরাশাইল ৭৬, মিনিকেট ৬৮-৭০, ইন্ডিয়ান মিনিকেট ৭২-৭৪, বাসমতি ৯০-৯২, পাইজাম ৫৬- ৫৭, স্বর্ণা ৫২-৫৩ নাজিরশাইল ৮৪-৮৫ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

চাল কিনতে আসা তুহিন হোসেন বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ধানের মজুদ রয়েছে, আবার ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে। তারপরও দাম কমছে না কেন? প্রতি বছর এই সময়ে নতুন ধান উঠলে বাজারে চালের দাম অনেক কমে আসে। কিন্তু এবার বাজারের চিত্র ভিন্ন। সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে কি না খতিয়ে দেখা দরকার।

বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, আটটি চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত ১৭ নভেম্বর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে। সারাদেশে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ৯২ প্রতিষ্ঠানকে। দুই লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন সেদ্ধ এবং এক লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাদের। অনেক প্রতিষ্ঠান এই সময়ের মধ্যে আমদানি করতে পারেনি।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিন মাসে বেনাপোল দিয়ে ১৩ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন চাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত চালের এসব চালান বন্দরে আসা মাত্রই আমরা দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা করছি।’

(ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নড়াইলে কলেজছাত্রের ঘর থেকে স্নাইপার রাইফেল উদ্ধার
মেট্রোরেল ভ্রমণে নতুন নির্দেশনা
সুনামগঞ্জে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক জসীম আহমেদের বাড়ি দখলের চেষ্টা, গ্রেপ্তার ১
যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা