চাঁদপুরে সম্পত্তি নিয়ে ব্যবসায়ী খালাতো ভাইকে হত্যা, আটক ৩

চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নে সম্পত্তিগত বিরোধকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মো. ইউসুফ পাটওয়ারী (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তার আপন ভাই মাওলানা ইব্রাহীম পাটওয়ারী (৫৫)।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পশ্চিম কুমারডুগি গ্রামের পাটওয়ারী বাড়িতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। হতাহতরা ওই বাড়ির মৃত কলিম উল্লাহ পাটওয়ারীর ছেলে।

হত্যায় অভিযুক্তরা হলেন ইউসুফের আপন খালাত ভাই মহিউদ্দিন প্রধানিয়া (৫৫), তার স্ত্রী খোদেজা বেগম (৪৩) ও ছেলে রমজান (২০)। তাদের আটক করেছে পুলিশ।

ইউসুফ চাঁদপুর শহরের হকার্স মার্কেটের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী এবং তার ভাই ইব্রাহীম স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। ইউসুফের দুই ছেলে এবং ইব্রাহীমের এক ছেলে ও এক মেয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, পাশের আশিকাটি ইউনিয়নের সেনগাঁও গ্রামের কাজিম উদ্দিন মৃধার ৭ মেয়ে। এর মধ্যে ফিরোজা, হনুফা ও রোকেয়া নামে তিন মেয়ে এই বাড়িতে থাকেন। তাদের বাবা তিন মেয়েকে ১০ শতাংশ করে জমি লিখে দেন। পরে আবার সবার কাছ থেকে ৮ শতাংশ করে নিয়ে অন্য লোকের কাছে বিক্রি করে দেন। বাকি সম্পত্তিতে তারা বসবাস করেন। এর মধ্যে ইউসুফ পরিবার আরও সম্পত্তি কিনে বসতঘর নির্মাণ করেন।

হত্যার শিকার ইউসুফ তাদের পাশের অংশীদার আপন খালা রোকেয়া বেগমের মেয়ে হালিমাকে বিয়ে করেন। রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের জামাতাকে যারা খুন করেছে তারা আমার বোন ফিরোজার ছেলে, স্ত্রী ও নাতি। তারা গত প্রায় ৪ বছর জোরপূর্বক ইউসুফদের কাছ থেকে দুই শতাংশ সম্পত্তি দাবি করে আসছে। কিন্তু তারা কোনো সম্পত্তি পাবে না। কারণ বাবাই তাদের ১০ শতাংশ সম্পত্তির মধ্যে ৮ শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছেন। এসব নিয়ে বহুবার সমাধানের চেষ্টা হয়েছে, তারা তা মানে না। শেষ পর্যন্ত তারা ইউসুফকে কুপিয়ে হত্যা করল!’

স্থানীয় গাজীবাড়ির বাসিন্দা রাশেদ গাজী বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইসুফের বড় ভাই ইব্রাহীমকে পুকুরপাড় থেকে জোর করে তাদের ঘরে নিয়ে যায় মহিউদ্দিন, তার স্ত্রী ও ছেলে। তারা ধারালো ছুরি দিয়ে ইব্রাহীমকে বুকে ও ঘাড়ে কুপিয়ে আহত করে। তার চিৎকার শুনে ইউসুফ এগিয়ে গেলে তার মাথায় ও গলায় কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আহত ইউসুফ ঘর থেকে বের হয়ে নিজ ঘরের সামনে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেখান থেকে তাকে চাঁদপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর ইব্রাহীমকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়।’

রাশেদ আরো জানান, ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন হত্যায় জড়িত মহিউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য ঘরের চারদিকে অবস্থান করে পুলিশে খবর দেয়।

ইউসুফের বোন রাজিয়া, নাছিম ও আমেনা আক্তার বলেন, তাদের দুই ভাইয়ের হতাহতের ঘটনায় জড়িতদের বিচার চান।

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জড়িত তিনজনকে আটক করে। মরদেহ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে থেকে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুকুর চাকমা। তিনি বলেন, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ আলামত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/মোআ)