মেট্রোরেল লাইন-১
অনেক স্থানে ভাঙতে হবে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের সড়ক

মেট্রোরেল লাইন-১ নির্মাণ করতে গিয়ে ৩০০ ফুট পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের সড়কের অনেক স্থানে ভাঙতে হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বুধবার ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-১) প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাসেম ভূঁঞা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজে দুটো অংশ। একটি আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল বা পাতাল মেট্রোরেল, এবং অন্যটি এলিভেটেড মেট্রোরেল বা উড়ালপথে মেট্রোরেল। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের পশ্চিম প্রান্ত অর্থাৎ কুড়িল ফ্লাইওভারের কাছাকাছি থেকে উড়ালপথে মেট্রোরেলের শুরু এবং শেষ হবে পূর্বপ্রান্তে কাঞ্চন সেতুর কাছে গিয়ে। ভায়াডার কিছুদূর পর পর পিয়ার-কলামের ওপর স্থাপিত হবে। ভায়াডাক্টের স্প্যান অর্থাৎ একটা পিয়ার থেকে আরেকটি পিয়ারের দূরত্ব সড়কের এলাইনমেন্ট বরাবর ৩০ মিটার থেকে ৪৫ মিটার অন্তর হবে। এই পিয়ারগুলো পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যবর্তী জায়গায় প্রশস্ত মিডিয়ান বা সড়ক বিভাজকে নির্মাণ করা হবে।
এমআরটি লাইন-১ এর পূর্বাচল রুটের ডিজাইন চলাকালীন সময়ে প্রতিটি ধাপে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (রাজউক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং রিগেড ও পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান) সাথে নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে ডিজাইন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। রি বিষয়ে বিভিন্ন সময় ডিএমটিসিএল, রাজউক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড ও পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও অনানুষ্ঠানিকভাবেও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হয়েছে। এমআরটি লাইন-১ ও পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে সমন্বয়পূর্বক ডিজাইনের বেশকিছু ছোট-বড় পরিবর্তন করা হয়েছে।
উড়াল অংশের নির্মাণকালীন সময়ে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের কোন অংশ কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করে উড়াল রুটের পিলারসমূহ সম্পূর্ণভাবে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তার মেডিয়ানের উপর নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। মেট্রোরেলের এলিভেটেড স্টেশনগুলো সড়কে আড়াআড়ি বরাবর তিনটি করে কলামের উপর স্থাপিত হবে। এখানে দুপাশের দুটো কলাম এক্সপ্রেসওয়ের দুপাশে গ্রিনবেন্ট বা সবুজ ভূমির ওপর থাকবে আর মাঝখানের কলামটি সড়ক বিভাজকের উপর নির্মাণ করা হবে। সুতরাং, স্টেশনগুলো এক্সপ্রেসওয়ের মূল ক্যারেজওয়ের পেভমেন্টের কোন জায়গা দখল করবে না এবং বিদ্যমান সড়ককে ক্ষতিগ্রস্থণ্ড করবে না। বিস্তারিত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে পূর্বাচল রুটের অংশ পাতালের পরিবর্তে উড়ালভাবে নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যা সরকারের যথাযথ পর্যায়ে অনুমোদিত হয়েছে।
২০১৫ সালে প্রণীত আরএসটিপি (রিভাইজও স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান)-তে এমআরটি লাইন-১ এর রুট এলাইনমেন্ট প্রস্তাব করা হয় এবং সেই মোতাবেক ২০১৭-১৮ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়। জাইকা কর্তৃক প্রণীত এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত ঐ সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও রীতিনীতি, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং ঢাকায় অবকাঠামো নির্মাণ উপযোগিতার বিষয় বিবেচনা করে এমআরটি লাইন-১ এর উড়াল এবং পাতাল পথ চূড়ান্ত করা হয়। উল্লেখ্য, অনুমোদিত আরএসটিপি-তে ৩০০ ফুট সড়ক তথা পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না।
এখানে উল্লেখ্য, সমীক্ষা পর্যায়ে প্রাথমিক সার্ভে ও প্রাক প্রাথমিক ডিজাইন করে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। এই ধরনের সমীক্ষার মূল লক্ষ্য থাকে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রকল্পটি দেশের জন্য কতটা প্রয়োজন এবং অর্থনৈতিকভাবে কতটা বাস্তবায়নযোগ্য তা নিরূপন করা
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রকল্পের পূর্বাচল সড়ক (বর্তমানের ৩০০ফুট সড়ক তখন ছিল না) এলাইনমেন্টের মেডিয়ান বরাবর উড়াল সড়ক দেখানো হয়েছে যেখানে ভায়াডেক্টের পিয়ারগুলো সড়ক বিভাজকের উপর নির্মিত হবে।
রাজউক ভবনে রাজউক চেয়ারম্যান মহোদয়ের সভাপতিত্বে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখের আন্তঃপ্রকল্প সভায় এমআরটি লাইন-১ এর কুড়িল থেকে কাঞ্চন রুটের ডিটেইল্ড ডিজাইন ডিএমটিসিএল এর প্রতিনিধি কর্তৃক উপস্থাপন করা হয়।
এই রাস্তায় ৫টি ইন্টারসেকশন আছে এগুলোর নিচে পানির রিজার্ভার রয়েছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, রাজউকের কন্সালটেন্ট ড্যাটেক্স যখন এটি ইন্টারসেকশন ডিজাইন করছিল, তখন মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে বলা হয়েছিল, মেট্রোরেলের পাইল নির্মাণ কাজ আগে হয়ে যাক, এরপর পানির রিজার্ভার নির্মাণ করা হোক। অর্থাৎ মেট্রোরেল প্রকল্পের পাইলের ড্রাইভিং এর কাজ আগে এবং পানির রিজার্ভার নির্মাণ পরে করা হলে ভালো হবে। কিন্তু এই পর্যায়ে রাজউকের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ড্যাটেক্স এর মত ছিল, বরং আগে রাজউক পানির রিজার্ভার নির্মাণ করুক, এরপরে মেট্রোরেল কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এই প্রসঙ্গে তখন কীভাবে কাজ করা যেতে পারে এই প্রশ্ন আসায় মেট্রোরেল কন্সালটেন্ট জানান, সে ক্ষেত্রে শুদ্ধ মৌসুমে অর্থাৎ রিজার্ভারে যখন পানি থাকবে না সেই সময় রিজার্ভারের ছাদ (যা মূলত গাড়ি চলার সড়ক পেভমেন্ট) কেটে পাইলের কাজ করা হবে। এরপরে ছাদের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেট্রোরেল থেকে মেরামত করে দেয়া হবে। বিষয়টি রাজউক কন্সালটেন্ট এবং মেট্রোরেল কন্সালটেন্টের পারস্পরিক সমন্বয় ও সমঝোতার মাধ্যমেই চূড়ান্ত হয়েছে এবং সেই মোতাবেক মেট্রোরেলের ডিজাইন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সংক্রান্ত আলোচনার সময় এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাতা ২৪ ইসিবির প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
সুতরাং এক্ষেত্রে বিদ্যমান সড়ক কার্যত কোনরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা। তবে পিয়ার ও ভায়াডাক্ট নির্মাণকালীন এক্সপ্রেসওয়েতে চলমান যানবাহন নিরাপদে চলাচলের জন্য সড়ক বিভাজকের দুই পাশে উভয় মুখে প্রশন্স মিডিয়ানের উভয় পাশে ৩ মিটার করে অর্থাৎ একটি করে লেন বন্ধ রাখা হবে। উভয় পাশে তিন দেন করে উন্মুক্ত থাকবে ফলে জনগণের দুর্ভোগের কোনো সম্ভবনা নেই। এক্ষেত্রেও সড়ক পেভমেন্টের কোন লক্ষণীয় ক্ষতি হবেনা। পেভমেন্টের উপরিভাগে সীমিত পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে নির্মাণ শেষে পেভমেন্ট সারফেসকে মেরামত ও সংস্কার করে ঝকঝকে তকতকে করে দেয়া হবে যেমনটা করা হয়েছে এমআরটি লাইন ৬ প্রকল্পে।
মেট্রোরেলের এলিভেটেড স্টেশনগুলো সড়কে আড়াআড়ি বরাবর তিনটি করে কলামের উপর স্থাপিত হবে। এখানে দুপাশের দুটো কলাম। এক্সপ্রেসওয়ের দুপাশে গ্রিনবেন্ট বা সবুজ ভূমির উপর থাকবে আর মাঝখানের কলামটি সড়ক বিভাজকের উপর নির্মাণ করা হবে। সুতরাং স্টেশনগুলো এক্সপ্রেসওয়ের মূল ক্যারেজওয়ের পেভমেন্টের কোন জায়গা দখল করবে না। অধিকন্তু বিদ্যমান সড়ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।
পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি আন্ডারপাস রয়েছে। কিন্তু এই আন্ডারপাসগুলো ও মেট্রোলাইনের মধ্যে কোন ব্যতিচার বা সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ড নেই। কারণ ভায়াডাক্টের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যে, আন্ডারপাসের উপর কোন পিয়ার থাকবে না এবং এমআরটি লাইন-১ আন্ডারপাসগুলো কোন ক্ষতি করবে না। অন্যদিকে এই এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি রাউন্ডএবাউট রয়েছে। এই রাউন্ডএবাউটগুলোর বৃত্তের ঠিক কেন্দ্র বরাবর একটি করে ভায়াডাক্টের পিয়ার বসানো হবে। এইখানে কংক্রিট সার্ফেস কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে পিয়ার নির্মাণ শেষে ভেঙে যাওয়া কংক্রিট মেরামত করে দেয়া হবে।
বিগত ২৪/১২/২০১৯, ১৮/০৭/২০২১, ২৯/০৮/২০২১ ও ২০/০৯/২০২১ তারিখে চেয়ারম্যান, রাজউক, ঢাকা সভাপতিত্বে রাজউক সভাকক্ষ, রাজউক ভবন, ঢাকায় অনুষ্ঠিত সভায় পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা বাইপাসের কাঞ্চন পয়েন্টের Intersection এর বিষয়টি সুনির্দিষ্ট সমাধানের লক্ষ্যে পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত সভায় ডিএমটিসিএল কর্তৃক মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-১ এর বিমানবন্দর রুট থেকে পূর্বাচল রুটের ডিটেইল্ড ডিজাইন এর বিষয়ে ঢাকা বাইপাস ও কুড়িল পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প এবং প্রকল্প পরিচালক, Bangladesh-China Friendship Exhibition Center প্রকল্প, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর উন্নয়ন শীর্ষক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ডিএমটিসিএল কর্তৃক মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-১ এর প্রতিনিধি পাওয়ার পয়েন্ট এর মাধ্যমে এমআরটি লাইন-১ পূর্বাচল রুটের ডিটেইল্ড ডিজাইন উপস্থাপন করা হয়।
রাজউক পূর্বাচল নতুন শহরে ডিএমটিসিএল এমআরটি লাইন-১ এর প্রস্তাবিত এলিভেটেড স্টেশনে প্রবেশ ও বহির্গমন পথ (Entry/Exit) এর জন্য রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহরের ৩০০ ফুট রাস্তার জমি ব্যবহার করতে পারে। উল্লেখ্য, এমআরটি লাইন-১ তার জন্য সড়কের Right of way এর মধ্যে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। রাজউক পূর্বাচল নতুন শহরে এক্সপ্রেসওয়েতে ডিএমটিসিএল এর এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের সময় এক্সপ্রেসওয়েতে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের পর রাজউক পূর্বাচল নতুন শহরে এক্সপ্রেসওয়েতে মূল অবস্থা পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এমআরটি লাইন-১ এর Underground & Elevated অংশের প্রস্তাবিত Transition Section বাস্তবায়নে রাজউকের ৩০০ ফুট রাস্তার জমি ব্যবহার করতে পারবে তবে এক্ষেত্রে নির্বিঘ্ন যান চলাচলের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
সমন্বয় সভায় বিস্তারিত পর্যালোচনা করে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যা চেয়ারম্যান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকার ২০/০৯/২০২১ তারিখে স্বাক্ষরিত এবং জনার উজ্জ্বল মল্লিক, প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১৪/০২/২১ তারিখের স্বাক্ষরের মাধ্যমে স্মারক নং- ২৫,৩৯,০০০০,১৪৬,১৪,৫৪, ২০০৫ (অংশ-২)-৯০৫ স্মারকমূলে বিতরণ করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/এলএম/এমআর)

মন্তব্য করুন