সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অবৈধ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা কোহিনুর!

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অবৈধ সিন্ডিকেটে নাম আসছে বিএনপি নেতা কোহিনুর আহমেদের। তিনি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। সীমান্ত পথে চিনি চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইকারী গ্যাং পরিচালনাসহ নানান অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া স্থানীয় অটোরিকশা চালকদেরও আশ্রয় দিয়ে অবৈধ কর্মকাণ্ডের সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপিরই একাধিক নেতাকর্মী।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে গণধোলাই:
২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ছিনতাইয়ের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিজ দলের কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হন কোহিনুর আহমেদ। ঘটনার পর তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে এবং তাকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কোহিনুর আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে, দক্ষিণ সুরমার বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশন এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানান পরিকল্পনার হোতা সে। তবে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দল থেকে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
যুবদল-ছাত্রদলের প্রতিবাদ:
কোহিনুর আহমদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে শুরু করেছে দলীয় নেতাকর্মীরাই। বৃহস্পতিবার রাতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা দাবি করেন, কোহিনুর আহমেদ তার অবস্থান ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন এবং দলের শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
এক যুবদল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দক্ষিণ সুরমায় যত ছিনতাই ও অপরাধ সংগঠিত হয়, তার পেছনে কোহিনুর আহমেদের হাত রয়েছে। তিনি শুধু অপরাধীদের মদদই দেন না বরং এসব কর্মকাণ্ড থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করেন।’
ছিনতাই নাকি দলীয় কোন্দল?
বৃহস্পতিবার বিকালে কোহিনুর আহমেদ দাবি করেন, বড়ইকান্দি এলাকায় তিনি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তিনি জানান, ছিনতাইকারীরা তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ চার লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তবে অনুসন্ধান বলছে, এটি প্রকৃতপক্ষে ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল না। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফলে কোহিনুর আহমেদ তার নিজ বলয়ের সদস্যদের হাতেই হামলার শিকার হয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাসিম আহমদ নামে একজন লিখেছেন, চিনি ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণেই সিন্ডিকেটের মূলহোতা কোহিনুর আহমেদ হামলার শিকার হন।
কোহিনুর আহমদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড:
৫ আগস্টের পর থেকে কোহিনুর আহমেদ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, চুরি ও ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলে তার নেতৃত্বে। বিভিন্ন উপগ্রুপ ও সহযোগীদের মাধ্যমে তিনি এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন এবং তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার নামে ছিনতাই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করেন। অনেক চালকই বাধ্য হয়ে তার কাছে মাসিক চাঁদা পরিশোধ করেন যাতে তারা নিরাপদে চলাচল করতে পারেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ:
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, আমরা বৃহস্পতিবারে মারামারির ঘটনার বিষয়ে অবগত। তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা প্রয়োজন:
দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা কোহিনুর আহমেদের মতো অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, যদি এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
স্থানীয় বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কোহিনুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে ভয় পাই। কোহিনুরের অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই খড়গ নেমে আসে। দলের ভিতরে এই ধরনের অপরাধীকে রাখা ঠিক হবে না, তাকে দ্রুত বহিষ্কার করা উচিত।’
সিলেটের রাজনীতিতে কোহিনুর আহমেদের মতো ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। দলের নাম ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় সাধারণ জনগণের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয় এবং দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ চক্রের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কোহিনুর আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত না। প্রতিপক্ষরা এসব করাচ্ছে।’
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাউয়ুম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/জেবি/এসএস/এমআর)

মন্তব্য করুন