নেতা নয়, জনগণের কামলা হয়ে থাকতে চাই: কায়কোবাদ 

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এবং পাঁচবারের সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ বলেছেন, ‘নেতা নয়, কুমিল্লা-৩ আসনের জনগণের কাছে কামলা হয়ে থাকতে চাই।’

শনিবার বিকালে মুরাদনগরের আন্দিকোট ইউনিয়নের সামসুল হক কলেজ মাঠে এক জনসভায় বক্তব্যকালে তিনি একথা বলেন। বিগত সরকারের আমলে নানাভাবে নির্যাতিত এই নেতা ১৭ বছর পর মুরাদনগর আগমন উপলক্ষ্যে জনসভার আয়োজন করে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ বলেন, ‘১৯৮৬ সাল থেকে দীর্ঘ ৪০ বছর আপনাদের কামলা হয়ে আছি। আগামীতেও কামলা হয়ে থাকতে চাই। আমি নেতা হতে চায় না। আপনারা আমাকে সংসদ সদস্য বানিয়েছেন এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

এসময় তিনি প্রশ্ন রাখেন— আমরা কী চিন্তা করতে পেরেছিলাম, এই মাঠে জনসভা করতে পারব? আমি নিজেও কী চিন্তা করতে পেরেছিলাম স্বৈরাচার সরকারের এতো বড় মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে আবার আপনাদের মাঝে আসতে পারব! এই ব্যবস্থা কে করেছে? এজন্য আল্লাহ’র প্রতি শুকরিয়া জানিয়ে সবাইকে সূরা ফাতিহা পাঠ করান তিনি।

বিএনপির এই জনপ্রিয় নেতা বলেন, ‘১৩ বছর দেশের বাইরে ছিলাম। কত ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু আল্লাহপাক মায়ের পেটে শিশুকে যেমন রাখেন— তেমনভাবে রেখেছিল।’

জনসভায় বক্তব্য প্রদানকালে মাসুদ নামের এক নেতার নাম উল্লেখ করে কায়কোবাদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে এই এলাকায় সব থেকে বেশি জেল খেটেছে মাসুদ। কিন্তু ফ্যাসিস্ট চলে যাওয়ার পরও তাকে মামলা খেতে হয়েছে। মুরাদনগরে আজ সব অপকর্ম করাচ্ছে কুমিল্লার পুলিশ সুপার—এসপি (মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন)। তাকে আমরা চাকরি থেকে বিদায় চাই। সে কতদিন ডিএমপিতে ছিল সবাই জানে। গাজীপুরে কী করেছে সারা দেশের মানুষ জানে। সে কুমিল্লাতে আসার পর মুরাদনগর, বাঙ্গরার ওসিকে বদলি করেছে। কিন্তু মুরাদনগরের মানুষ এটা বরদাশত করবে না। এই এলাকার সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে দেবে না।’

যারা আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করছেন এবং বিএনপিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে সাবেক এই হুইপ তার বক্তব্যে বলেন— ‘আমাদের নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দোয়া করতে হবে যেন এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হয়। যারা এখন ষড়যন্ত্র করছেন নির্বাচনের পর কোথায় যাবেন আপনারা? ইনশাআল্লাহ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তখন সবকিছুর সুদে আসলে শোধ নেওয়া হবে।’

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করেছে, এজন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আজকে ছাত্র নামধারীরা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তারা ছাত্র নয়। যারা প্রকৃত ছাত্র তারা তাদের মহান দায়িত্ব পালনের পর লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। আর কিছু ছাত্র আজকে আমাদের সমাজকে কুলসিত করতে চায়। আমাদের প্রকৃত ছাত্রদের লেখাপড়াকে নষ্ট করতে চায়। এটা হতে দেওয়া যাবে না।’

বিএনপির এই নেতা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনি একজন ভালো মানুষ। আপনি আমাদের গর্ব। আপনি আমাদের কলিজার টুকরা। আপনি লক্ষ রাখবেন দেশের ছাত্রদের নিয়ে যেন কেউ রাজনীতি করতে না পারে। তাদের লেখাপড়া যেন কেউ নষ্ট না করতে পারে।’

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান ও মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভুঁইয়াসহ দলের নেতারা।

জনসভায় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢল নামে। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে দুপুর থেকে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে হাজারও নারী-পুরুষ। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় চারপাশ।

(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/এলএম/এমআর)