ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর জুড়ে গাছে গাছে রঙিন লিচুর থোকা

শেখ সিরাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৫, ১২:৩০| আপডেট : ২৯ মে ২০২৫, ১২:৫৫
অ- অ+

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এবারও লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাকা লিচুর রঙে সেজেছে পুরো এলাকা। বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে রঙিন লিচুর থোকা। বাগান থেকে লিচু পেড়ে তা ঝুড়িতে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন হাট-বাজারে। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি লিচু চাষি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

বিজয়নগরে এখন চলছে উন্নত বোম্বে ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু ভাঙার সময়। দেশি প্রজাতির (পাটনাই) লিচু বাজারে এসেছে সপ্তাহ তিনেক আগে।

উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, সিঙ্গারবিল, হরষপুর, পত্তন, চম্পকনগর ইউনিয়নে লিচুর আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুগাছ ও বাগান। বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে থোকা থোকা রঙিন লিচু। বাগান থেকে লিচু পেড়ে কিনে নিতে আসছেন মানুষ। সপরিবারেও ঘুরতে আসছেন লিচু বাগানে। সেলফি তুলে আনন্দ পাচ্ছে তারা।

লিচুর বাগানে অন্যান্য অঞ্চলের লোকজনের আগমনকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনেও আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে।

বাগান থেকে লিচু পেড়ে তা ঝুড়িতে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন হাট-বাজারে। আবার লিচুর বাগানে গিয়েও সরাসরি লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় বাজার থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে লিচু নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। সবকিছু মিলিয়ে সেখানে তৈরি হয়েছে উৎসবের আবহ।

জানা যায়, বিজয়নগরে আগে থেকে লিচু গাছ থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ শুরু হয় প্রায় দেড় যুগ আগে। ওই সময়েই শৌখিন কিছু মানুষ বাড়ির আঙিনায় লিচুর চাষ শুরু করেন। অন্য ফল-ফসলের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা তখন ঝুঁকতে থাকেন লিচু চাষের দিকে। তৈরি হতে থাকে লিচুর বাগান। বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশ থেকে শুরু করে মাঠে-ময়দানে ছড়িয়ে পড়ে লিচুর চাষ।

লিচুচাষিরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন কিছুটা কম। তাই গাছ থেকে লিচু পাড়া শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা বিজয়নগরের লিচুর হাট আউলিয়া বাজার, মেরাশানি বাজার, সিঙ্গারবিল বাজারে আগেভাগেই ভিড় জমিয়েছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিজয়নগরে সাধারণত তিন জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়। এগুলো হলো— পাটনাই (দেশী), বোম্বাই ও চায়না-৩। এছাড়া বেদেনা, চায়না-১ ও চায়না-২ জাতের লিচুও চাষ হয় এখানে। সবার আগে বাজারে আসে পাটনাই লিচু। বোম্বাই ও চায়না-৩ লিচু কিছুদিন পর পাকলেও বাজারে এর কদর বেশি। বিক্রিও হয় বেশি দামে। চায়না লিচু দেশির মতো দেখতে হলেও আকারে ছোট। তবে বেশি সুস্বাদু।

পাহাড়পুর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের লিচু চাষি গোলাম সামদানির তিন ভাইয়েরই লিচু বাগান আছে। তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লিচুর চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি লিচুর চাষ পাহাড়পুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। পাহাড়পুর, সেজামোড়া, হাড়িঙ্গা, কচ্চামোড়া, দোড়ানাল চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় বেশি লিচুর চাষ হয়। তিনি আরও জানান, প্রতি হাজার দেশি পাঠনাই লিচু ২০০০-২৫০০, বোম্বাই ৩০০০-৩৫০০ ও চায়না-থ্রি ৪০০০-৫০০০ টাকায় প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হয়।

স্থানীয় আউলিয়া বাজারে রাত দুইটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত লিচু বিক্রি হয়। ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে লিচু নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জিয়াউল ইসলাম জানান, বর্তমানে বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৪০ হেক্টর জমিতে ফলন্ত গাছ রয়েছে, যা থেকে প্রায় ১ হাজার ৭০০ টন লিচু পাওয়া যেতে পারে। সম্ভাব্য বাজার মূল্য হতে পারে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

(ঢাকাটাইমস/২৯মে/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে বরিশাল সেবাকেন্দ্রে পরিদর্শন টিম
নিম্নচাপের প্রভাব: বিদ্যুৎ না থাকায় প্রায় ৬ হাজার মোবাইল টাওয়ার বন্ধ
অনিয়ম-অবহেলা ও সংকটে চলছে ডামুড্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
বেলজিয়াম মাতাতে যাচ্ছেন একঝাঁক তরুণ তারকা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা