অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না সাইফুলের, তিন বছরের কন্যা পাবে না আর বাবার আদর
বাংলাদেশের জাতীয় পাতাকার অবমাননার ঘটনায় করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে জামিন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে গতকাল তাণ্ডব চালায় তার অনুসারীরা। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সামনে তাণ্ডবে নিহত হন তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।
নিহত সাইফুলের তিন বছরের ছোট্ট একটা মেয়ে রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না তার। সাত ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ সাইফুল ইসলাম মাত্র কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন।
নিহত সাইফুলের বোন জান্নাত আরা বলেন, “ভাইয়ের আহত হওয়ার খবর শোনার পর মেয়েকে ফোন দিয়ে বলি, তোমার মামার কী হইছে একটু দেখতে যাও তো। পরে মেয়ে আমাকে বলে, মামা তো আর নেই। হাসপাতালে ছুটে এসে দেখি আমার আদরের ভাইটা আর নেই।”
সাইফুলের তিন বছরের কন্যা তাসকিয়া। বাবার ভালোবাসা কী-তা ভালো করে বোঝার আগেই এতিম হলো। আর কখনো দেখতে পাবে না প্রিয় বাবার মুখ।
এদিকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন মাত্র চার বছরের সংসার জীবনেই হয়ে পড়লেন বিধবা। সাইফুল ইসলাম ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে দিশেহারা ইসরাত জাহান।
প্রতিবেশীরা বলেন, কয়েক মাস আগে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হয়েছিলেন সাইফুল ইসলাম। এ অর্জন ঘিরে পরিবারের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুতে পুরো পরিবারের সামনে এখন ঘোর অন্ধকার। স্বামী হারানোর খবর শোনার পর থেকে অঝোরে কাঁদছেন স্ত্রী।
চাপাতির কোপেই নিহত হন সাইফুল
সাইফুল হত্যার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন বলেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে তার লোকজন তিন-চার ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকে রেখেছিল। পরে তাদের সরিয়ে দিয়ে তাকে যখন কারাগারে নেওয়া হলো, তারা আদালত ভবনে ওঠার পথে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আমাদের একজন আইনজীবীর ওপর আক্রমণ করে। ওই আইনজীবী একটু অসুস্থ ছিলেন। তিনি হেঁটে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে থেকে মুসলিম হাইস্কুলের দিকে পার হচ্ছিলেন। তখন তাকে টেনেহিঁচড়ে রঙ্গম হলের সামনে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।”
অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন বলেন, “এটা একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।”
এদিকে মঙ্গলবার রাতে সাইফুলের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতিতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীসহ দূর দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন। মাসহ স্বজনরা বুক চাপড়ে কাঁদছেন। আলিফকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তার পরিবার।
(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/এফএ)
মন্তব্য করুন