মিয়ানমারে ভূমিকম্পে প্রাণহানি ৩ হাজার ছাড়াল, অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীরগুলোর সঙ্গে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে জান্তা সরকার।
বুধবার রাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার রেডিও এবং টেলিভিশন এমআরটিভি জানিয়েছে, ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩০০৩ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৫১৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৩৫১ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধারকারীরা জীবিতদের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় ত্রাণ প্রচেষ্টা সহজ করার লক্ষ্যে এই যুদ্ধবিরতির কার্যকর করা হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি আজ বুধবার থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
জান্তা সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চলাকালীন বিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করা বা পুনরায় সংগঠিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, অন্যথায় সেনাবাহিনী ‘প্রয়োজনীয়’ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ ও গবেষণা সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিডো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। এরপর আরও বেশ কয়েকটি আফটার শক অনুভূত হয় আশপাশের অঞ্চলে।
ভূমিকম্প এতই শক্তিশালী ছিল যে শত শত মাইল দূরে চীন ও থাইল্যান্ড থেকেই কম্পন অনুভূত হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর সাগাইং, মান্দালাই, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ভূমিকম্পে এসব রাজ্যে বিভিন্ন স্থানে ভবন ধ্বংস, সেতু ভেঙে পড়া এবং রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশটির বৃহত্তম শহর এবং ১৭ লাখেও বেশি মানুষের বাসস্থান মান্দালয়ে। বেশিরভাগ হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে শহরটিতে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ছয়টি অঞ্চলের ২ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খাদ্য, আশ্রয়, পানি, স্যানিটেশন, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও অন্যান্য পরিষেবার জন্য জরুরি তহবিলে ১২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে।
এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং দেশটির গৃহযুদ্ধ ও চলমান অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার কারণে এবং হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। ফলে হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ৭২ জন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্পে দেশটির কয়েকশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সূত্র: সিনহুয়া, আলজাজিরা
(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/এমআর)

মন্তব্য করুন