ভুল চিকিৎসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু অভিযোগ
দিনভর ন্যাশনাল মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী-নজরুল কলেজে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর, রাতেও উত্তাপ
রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অভিজিৎ হাওলাদার (১৮) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসা ও অনিয়মের অভিযোগ হাসপাতালটিতে ব্যাপক হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বিক্ষুব্ধরা সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা-ভাঙচুর চালায়। এতে ঢাকার ৩৫টিরও বেশি কলেজের শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এদিকে দিনভর দুই কলেজ ও হাসপাতালে ভাংচুরের পর রাতেও ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সবশেষ রাত নয়টার দিকেও বিশাল মিছিল বের করে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে রবিবার দুপুর ১টার দিকে হাসপাতালের সামনে কলেজটির শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতরা লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হয়। এ সময় তারা স্লোগান দিয়ে হাসপাতালের নামফলকসহ গেট ভাঙচুর করে।
পরে সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের কয়েকজন ছাত্র বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বাধা দিতে গেলে তারা সোহরাওয়ার্দী কলেজের অফিস কক্ষ ও কলেজ প্রাঙ্গণে একটি প্রাইভেটকারে ভাঙচুর চালায়। তারা কবি নজরুল ইসলাম কলেজও ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
জানা গেছে, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ নভেম্বর ন্যাশনার মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন নগেন হালদার ও মনিমালা হালদার দম্পতির সন্তান অভিজিৎ হালদার। দুদিন পর হাসপাতালে মারা যান তিনি। এরপর চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ২০ ও ২১ নভেম্বর হাসপাতাল অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার হাসপাতালে হামলায় ঢাকা কলেজ, ঢাকা আইডিয়াল কলেজ, সিটি কলেজ, গিয়াসউদ্দিন কলেজ, সরকারি তোলারাম কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ, বোরহানউদ্দিন কলেজ, বিজ্ঞান কলেজ, দনিয়া কলেজ, লালবাগ সরকারি কলেজ, উদয়ন কলেজ, আদমজী, নটরডেম, রাজারবাগ কলেজ, নূর মোহাম্মদ, মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, গ্রিন লাইন পলিটেকনিক, ঢাকা পলিটেকনিক, মাহবুবুর রহমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ রাজধানীর প্রায় ৩৫টির বেশি কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ডিএমপির কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম ঢাকা টাইমসকে জানান, সন্ধ্যার পরই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা উত্তাপ ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
এদিকে চিকিৎসায় চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা ছিল না দাবি জানিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রেজাউল হক বলেন, চিকিৎসা চলাকালীন তার (অভিজিৎ হালদার) অবস্থার অবনতি হলে রোগীর অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও ১৮ তারিখ তিনি মারা যান। এখানে আমাদের কোনো ত্রুটি কিংবা অবহেলা ছিল না।
তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যু-পরবর্তী মরদেহ হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে রোগীর আত্মীয়কে বুঝিয়ে দেন এবং রোগীর সম্পূর্ণ বিল স্থগিত রাখা হয়।
ডা. রেজাউল বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচি পালন করলে পরিচালকের কক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছাত্র প্রতিনিধি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়। সভা থেকে মৃত্যুর বিষয়ে ১১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই চিকিৎসকের দাবি, একটি মহল শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য ও উসকানিমূলক তথ্য দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হাসপাতালের পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করছে।
(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/এলএম/এমআর)
মন্তব্য করুন