ভোটের লড়াই আজ, হিলারি কি পারবেন?

বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এই ভোটেই ঠিক হবে আগামী চার বছরের জন্য কে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসে। অদ্ভূত সব নিয়মের (যা বিশ্বের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না) মধ্যদিয়ে মার্কিনিরা স্থানীয় সময় আজ সকাল ছয়টা থেকে ভোট দিতে শুরু করবেন এবং রাত আটটা পর্যন্ত তা চলতে থাকবে। তবে আইওয়া ও নর্থ ডাকোটাতে চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।
ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনই নিউইয়র্কে ভোট দেবেন। হিলারি যদি প্রেসিডেন্টে নির্বাচিত হন তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড হবে। কেননা এর আগে কখনো মার্কিনিরা কোনো নারীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেননি। তবে হিলারি প্রথম দফায় ২০০৮ সালে ওবামার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রাইমারিতে হেরে যান।
এ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি জনমত জরিপ হিলারিকে এগিয়ে রাখলেও নির্বাচনে কে বিজয়ী হচ্ছেন তা জানতে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বিশ্বে আলোচনা সৃষ্টিকারী এ নির্বাচনের সমস্যা হচ্ছে মার্কিনিদের ভোট কেন্দ্রে যেতে অনীহার বিষয়টি। সাধারণত ৫০ ভাগের বেশি ভোটারকে কেন্দ্রে নেয়া যায় না। যার কারণে গত এক মাস ধরে সব রাজ্যে পালাকরে আগাম ভোট নেয়া হয়।
আনুষ্ঠানিক ভোট-যুদ্ধ শুরুর আগের দিন অর্থাৎ সোমবার পর্যন্ত ভোট নেয়া হয় এবং এতে প্রায় চার কোটি ২০লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। মার্কিনিদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসার চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই আয়োজকদের।
এরই অংশ হিসাবে আজ মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে প্রতিনিধি পরিষদের (পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ)৪৩৫টি আসনের সবগুলোতে এবং উচ্চ কক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৪ টিতে নির্বাচন হবে। ১২টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচনও হচ্ছে এর সঙ্গে।
এছাড়া, স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনও হবে আজ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এতো কিছুর পরও ৫০ ভাগের বেশি মার্কিনিকে ভোট কেন্দ্রে আনা সম্ভব হয় না।
তবে, নানা কারণে এবার নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। বিশেষ করে মহিলা প্রার্থী হিসাবে হিলারি ক্লিনটনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেপরোয়া আচরণ ও কথা-বার্তা।
এর আগে হিলারি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান বিশাল থাকলেও হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি নিয়ে এফবিআই পরিচালকের তদন্তের ঘোষণার পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার বাড়তে থাকে। নির্বাচনের দুই দিন আগে দ্বিতীয় দফা তদন্তে কোনো কিছু না পাওয়ার ঘোষণায় অবশ্য হিলারি শিবিরে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
সবশেষ ওয়াশিংটন ও এবিসি নিউজের মতামত জরিপ হিলারিকে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে রেখেছে।
অদ্ভূত পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া মিলিয়ে ৫৩৮ টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে যিনি ২৭০টি পাবেন তিনিই জয়ী হবেন।
এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডাসহ বেশ কিছু অঙ্গরাজ্য রয়েছে, যেগুলোর ওপরই জয়-পরাজয়টা বেশি নির্ভর করছে। আর যে রাজ্যে যিনি বেশি ভোট পাবেন তাঁর পক্ষেই ঐ রাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট যাবে। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা হচ্ছে-৫৫টি। এই রাজ্যে যদি হিলারি বেশি ভোট পান তাহলে পুরো ইলেকটোরাল ভোট তার হয়ে যাবে। আর যদি ট্রাম্প বেশি পান তাহলে ৫৫টি ইলেকটোরাল ভোটই তার বাক্সে যাবে।
জয়-পরাজয় নির্ধারক এরকম বড় রাজ্যগুলোর মধ্যে টেক্সাসে-৩৮টি, নিউইয়র্কে-২৯টি, ফ্লোরিডায়-২৯টি, পেনসিলভানিয়ায়-২০টি, ওহাইওতে-১৮টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। অর্থাৎ এরকম গুরুত্বপূর্ণ ১৩ টি অঙ্গরাজ্য রয়েছে। যেগুলোকে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য বলা হয়। এছাড়া আলাস্কা, ডিলাওয়্যার, ভারমন্ট ও ওইয়োমিংয়েতে তিনটি করে ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে।
ভোটের ফলাফল অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার জানা গেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হবে ১৯ ডিসেম্বর।
ভোটারকে যতগুলো ভোট দিতে হবে আজ
প্রতি চার বছর পরপর নভেম্বর মাসে প্রথম সোমবারের পরের মঙ্গলবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যারা তিনটি শর্ত পূরণ করার যোগ্যতা রাখেন তারাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলে প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রভাব নেই বললেই চলে।
তিন শর্ত হচ্ছ-১. প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। ২. বয়স হতে হবে অন্তত ৩৫ বছর। ৩. অন্তত ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে।
সাধারণত মার্কিন ভোটারদেরকে একসঙ্গে একাধিক ভোট দিতে হয়। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ইলেকটোরাল প্রতিনিধিকে ভোট দিতে হয়।
এছাড়া প্রতিনিধি পরিষদের প্রার্থী, সিনেট প্রার্থী, স্থানীয় পরিষদের প্রতিনিধি, কোথাও কোথাও অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচনের জন্য এই দিন ভোট দিতে হয়। এর মধ্যে ইলেকটোরাল ভোটই গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকটোরাল ভোটেই নির্বাচিত হবে প্রেসিডেন্ট। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে পপুলার ভোটের মাধ্যমেই ইলেকটোরাল ভোট নির্ধারণ করা হয়।
হিলারি কি ইতিহাস সৃষ্ট করতে পারবেন
হিলারি ক্লিনটন যদি এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করবেন। এর আগে ভোটের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ নাগরিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও তার মধ্যে কোনো নারী নেই। ১৮৭২ সালে যখন নারীরা ভোটের অধিকারই পাননি তখন একজন নারী প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। এরও অনেক পর ১৯২০ সালে নারীরা প্রথম ভোটাধিকার পায়।
(ঢাকাটাইমস/০৮নভেম্বর/এআর/ঘ.)

মন্তব্য করুন