ধনীদের কাছে স্কুলের জন্য ল্যাপটপ-প্রজেক্টর চান প্রধানমন্ত্রী

সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তির আরও ব্যবহার করতে চায় জানিয়ে স্কুলে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর দিতে সংসদ সদস্য ও বিত্তবানদেরকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানান, নিজ অর্থে তার এলাকায় স্কুলগুলোতে তিনি ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর উপহার দিয়েছেন।
রবিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান তিনি। ‘শিক্ষার আলো জ্বালবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো’ এই প্রতিপাদ্যে এবার প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগান নিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই স্কুলগুলোর পাঠদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে সরকার। সনাতন পদ্ধতির বদলে মাল্টিমিডিয়া যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে স্কুলগুলোতে। তবে এ ক্ষেত্রে এখনও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে উদ্দেশ্য অর্জন সহজ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যারা সংসদ সদস্য আছেন, বিত্তশালী মানুষ প্রচুর আছেন। অনেকের এত টাকা হয়ে গেছে যে খরচ করার জায়গা পায় না। তাদের আমি অনুরোধ করবো নিজ নিজ এলাকা, গ্রামে বা স্কুলগুলোতে যদি একটি করে ল্যাপটপ ও একটি করে প্রজেক্টর উপহার দেন। তাহলে অনেক সহজে আমাদের ছেলে মেয়েরা এই মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম পায়।’
২০১৭ সালের মধ্যে দেশের ৫০ হাজার বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক শিশুদের বই আকর্ষণীয় করার পাশাপাশি ডিজিটাল শিক্ষার জন্য আমরা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির শিক্ষা একান্ত অপরিহার্য। বিজ্ঞান প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিশুরা শিক্ষা গ্রহণ করবে। আমাদের সর্বস্তরের শিক্ষায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার হোক। এই দেশকে আজকের শিশুরা আগামী দিনে পরিচালিত করবে।’
ল্যাপটপ আর প্রজেক্টরের পাশাপাশি স্কুলে টিফিন দেয়ার ক্ষেত্রেও সম্পদশালীদের অংশগ্রহণ চান প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘আমি বিস্কুটগুলো এনে দেখেছি। এ রকম সাধা-সিধে বিস্কুট দিলে কার খেতে ভালো লাগবে? বিকল্প আরেকটা ব্যবস্থা আমরা হাতে নিয়েছি। প্রতিটি বিদ্যালয়ের একটা পরিচ্ছন্ন কমিটি আছে, ওই এলাকায় একটা বিত্তশালী গ্রুপ আছে। আল্লাহর রহমতে আমরা চাইলে সেখানে টিফিন নিজেরা তৈরি করে বাচ্চাদের দিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাদের কোন দেশ আমাদের বিস্কুট দেবে, সে বিস্কুট আমাদের বাচ্চারা খাবে। হাত পেতে চলবো কেন? অনেক জেলায় শুরু হয়ে গেছে। তাহলে আর কারও কাছে মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না। যখন পড়তে পড়তে একটু ক্ষুধা লাগে তখন পড়ায় মন বসে না।’
শিশুদেরকে ওপর পড়ার চাপ কমিয়ে শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সারাক্ষণ যদি বলতে থাকেন পড় পড় পড়, তাহলে পড়তে ভালো লাগে না। পড়াশুনার প্রতি জন্য তাদের আগ্রহ বাড়ে সে কাজ করতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে।’
শিশুরা যেন কোনও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে না পড়ে সে দিকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষা খাতে বরাদ্দকে সরকার ব্যয় মনে করে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাকে আমরা বিনিয়োগ মনে করি। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলছি।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা মুক্ত দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়তে গেলে শিক্ষাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার। আর এই শিক্ষার ভিত্তি যত মজবুত হবে, শক্ত হবে, শক্তিশালী হবে ততই শিক্ষার মান উন্নত হবে। শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা এই জাতিকে গড়ে তুলতে পারবো।’
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল স্তরের অগ্রণী ভূমিকায় থাকা ১০৮ জনকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেয়া হয়।
ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/ডব্লিউবি

মন্তব্য করুন