উত্তরায় ১৫ বছর ধরে চলছে কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৫৭ | প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৩০

গ্যাং নামে পরিচিত কিশোরদের দুটি দলের বিরোধে রাজধানীর উত্তরায় এক স্কুলছাত্র হত্যার ঘটনায় আলোড়ন চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। কিশোর আদনান কবির হত্যার ঘটনায় আট জনকে আটকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছে, উত্তরা ও আশেপাশের এলাকায় এই সংস্কৃতি চালু হয় ২০০১ সালে।

বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এই তথ্য জানান। তিনি জানান, উত্তরা ও তার আশে পাশের এলাকায় প্রায় ৩০টির মত গ্যাং এর খোঁজ পেয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে সক্রিয়গুলো হচ্ছে কাকড়া, জি ইউনিট, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে নাইট, ফিফটিন, ডিসকো বয়েস, নাইনস্টার, নাইন এম এম বয়েজ, পোটলা বাবু, সুজন, আলতাফ, ক্যাসল এবং ভাইবার গ্রুপ।

মুফতি মাহমুদ খান জানান, ২০০১ সালে আত্মপ্রকাশ করা বেশ কিছু গ্যাং সংগঠিত হয়ে ২০১৫ সালে ‘ফিফটিন গ্রুপ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। পরে কোন্দলের ফলে ভাগ হয় তারা। এগুলোর নাম হয় ডিস্কো ও এর সহযোগী (বিগবস), নাইন স্টার এবং নাইন এমএম গ্রুপ।

গ্যাং এর সদস্যরা সবাই উঠতি বয়সী কিশোর-যুবক। এদের কেউ কেউ উত্তরা এলাকায় বিভিন্ন নামিদামী স্কুল কলেজের ছাত্র। এলাকার কিছু অছাত্রও এই গ্রুপগুলোর সদস্য। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন , ছিনতাই, উচ্চ শব্দ করে মটরসাইকেল বা গাড়ি চালানো, ছিনতাই, অশ্লীল ভিডিও শেয়ার এদের অন্যতম কাজ।

র‌্যাব জানায়, এলাকার কিশোরদের চাপে রেখে দলে আসতে বাধ্য করে বেশ কিছু গ্যাং। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্বে মারামারি বা আঘাত-প্রতিঘাতও হত। তবে খুনের ঘটনা ঘটেনি।

মুফতি মাহমুদ খান জানান, গ্যাং ভিত্তিক এদের নিজস্ব লগো রয়েছে যা দেয়াল লিখন ও ফেসবুকে ব্যবহার করা হয়। এরা ড্রিংকস করা বা শীসা খাওয়ার ছবি ফেইসবুকে আপলোড করে। ফেসবুকে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয় এবং পরস্পরের আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করে। উত্তরা ছাড়াও ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরেও নানাবিধ গ্যাং দল রয়েছে। এরা গ্যাং এর উপর নির্মিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র অনুসরণ করে থাকে।

আদনান হত্যায় আটক আট

গত ৬ জানুয়ারি উত্তরায় খুন হয় স্কুল ছাত্র আদনান কবির। এই ঘটনায় আদনানেন বাবা কবির হোসেন উওরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে র‌্যাব এই হত্যার ঘটনায় তদন্ত শুরু করে।

এক মাস পর আট জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। আর এদের বিষয়ে জানাতেই সংবাদ সম্মেলন করে বাহিনীটি। গ্রেপ্তার আটজন হলো: ডিসকো বয়েস গ্যাং গ্রুপের দলনেতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু ওরফে রায়হান আহম্মেদ সেত ওরফে ডিসকো সেতু, বিগবস গ্যাং গ্রুপের দলনেতা আক্তারুজ্জামান ছোটন, শাহীনুর রহমান, রমজান মোবারক, সেলিম খান, ইব্রাহিম হোসেন ওরফে সানি, মিজানুর রহমান সুমন এবং জাহিদুল ইসলাম জুইস।

এদের কাছ থেকে তিনটি চাকু, দুইটি চাপাতি, দুইটি রড, তিনটি চেইন, তিনটি স্প্রে কালার বোতল, ১৯০ টি ইয়াবা ট্যাবলেটও উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আট জনের মধ্য দুই জন ডিস্কো বয়েস গ্রুপের গ্যাং সদস্য। বাকিরা বিগবস গ্রুপের। এদের মধ্যে ছোটনের নামে আগেরও মামলা আছে। সেতু বর্তমানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে বিবিএর ছাত্র। তার বাবা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।

ডিসকো গ্রুপের অপর সদস্য জুইস বর্তমানে উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা একজন মুদি ব্যবসায়ী। অন্যদিকে বিগবস গ্রুপের আটক সদস্যরা নি¤œবিত্ত পরিবারের সদস্য, এদের মধ্যে ছোটন ইউনিক এাডুকেয়ারে দশম শ্রেণির ছাত্র এবং সুমন এইচএসসি পাস। তবে অন্যদের স্কুলে যাতায়াত নেই বললেই চলে।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘বিগবস গ্রুপের গ্যাং লিডার ছোটন এবং সুমন দুই ভাই। এরা হকার। অন্যদের মধ্যে সানি ইজি বাইক চালক, সেলিম পোশাক কারখানার চাকুরে, রমজান সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া ব্যবসার কর্মচারী ও শাহীন পরিবহন কোম্পানিতে চাকরি করে।’

গ্রেপ্তারদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব জানতে পারে, তারা ২০০৯ সালে সেতুর নেতৃত্বে ডিসকো বয়েস গ্রুপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অন্যদিকে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ছোটনের নেতৃত্বে ডিসকো গ্রুপের সহযোগী গ্রুপ হিসেবে বিগবস গ্রুপের আত্মপ্রকাশ।

এরা মূলত উত্তরার শেষাংশসহ আবদুল্লাহপুর, বেড়িবাঁধ, কোটবাড়ি, ফায়দাবাদ ইত্যাদি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে। এদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাং ‘নাইন স্টার গ্রুপ’ ‘তালাচাবি রাজু’র নেতৃত্বে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই গ্যাংটির উত্তরা সেক্টর -১২, ১৩, ১৪, খালপাড়, দিয়াবাড়ি এবং বাউনিয়া এলাকায় আধিপত্য রয়েছে।

র‌্যাব জানায়, গ্যাংগুলোর এক একটির সক্রিয় সদস্য ২০ থেকে ২৫ জন। এই গ্যাং গুলোর মধ্যে সম্প্রতি কিছু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আর এর জেরেই খুন হয় আদনান।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ডিসকো বয়েস গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইনস্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার রাজুকে ১৩ নম্বর সেক্টর ব্রিজের উপর ব্যাপক মারধর করে। এর প্রতিশোধ নিতে গত ৫ জানুয়ারি আজমপুর ফুটওভার ব্রিজের গোড়ায় বিগবস গ্রুপের গ্যাং লিডার ছোটনকে আক্রমণ করে নাইনস্টার গ্রুপের সদস্যরা। পরদিন ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ি সামনে ডিসকো বয়েস গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা আদনান কবিরকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে। পরে তার মৃত্যু হয়।

র‌্যাব জানায়, আটক আটজন তাদেরকে জানিয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল নাইন স্টার গ্রুপের রাজুকে আঘাত করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপপরিচালক রইসুল আজম মনিসহ বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

(ঢাকাটাইমস/০৮ফেব্রুয়ারি/এএ/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :