একটি মামলা ও রাজনৈতিক প্রচারণা

মারুফ কামাল খান
  প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:০৩
অ- অ+

তিনি আবারও একটি বিচারাধীন মামলা নিয়ে মন্তব্য করলেন। এমন মন্তব্য, যাতে বিচার প্রভাবিত হতে পারে। কারণ তিনি সামান্য কেউ নন। যেভাবেই হয়ে থাকুন না কেন দেশের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আসনে আছেন তিনি। এর আগে বিচারাধীন মামলা নিয়ে দেশের ভেতরে অনেকবার তিনি মানহানিকর ভাষায় মন্তব্য করেছেন। এবার করলেন দেশের বাইরে গিয়েও।

তার মন্তব্যের অনেকটাই ‘প্রিজুডিস’ ও ‘সাব জুডিস’। আইনের চোখে এসব মন্তব্য বে-আইনি কেবল নয়, আমলযোগ্য অপরাধও। ন্যায়বিচারের দাবি হচ্ছে এ ধরনের মন্তব্যকারীর বিরুদ্ধে আদালতের ব্যবস্থা নেয়া, নিদেনপক্ষে সতর্ক করা, যাতে তারা এমন মন্তব্য থেকে বিরত থাকেন। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাবতী বলে হয়তো আদালত তা করার হিম্মত রাখেন না, কিংবা বে-আইনি মন্তব্যগুলো উপেক্ষা করে তাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। এতে সুবিচার বিঘ্নিত হচ্ছে।

একথা সত্য যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সম্পর্কিত একটা মামলায় অন্যান্যের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে। সে মামলার বিচারকাজ রকেট গতিতে চালাবার অভিপ্রায়ে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মামলার তারিখ ফেলা হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রতি সপ্তাহেই আলিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে বসানো বিশেষ আদালতে গিয়ে দিনভর বসে থেকে অনাহারে কাটাতে হচ্ছে। কখনো হাজির না হতে না পারলেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ভয় দেখানো হচ্ছে।

এত হেনস্তা যে মামলাটি নিয়ে সেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার কখনো কোনো সম্পর্কই ছিল না। তিনি এই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, মেম্বার, ট্রাস্টি কিছুই নন।

ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন জামানায় দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক মামলাটি করে। মামলায় প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে রিপোর্ট দেন। তিনি আদালতে তার সাক্ষ্যও সে কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন।

পরবর্তীকালে অধিকতর তদন্তের নামে দুদকের আরেকজন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই কর্মকর্তা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকেও অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন।

আনীত অভিযোগ, আদালতে পেশ করা সাক্ষ্যপ্রমাণ ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, কুয়েত থেকে পাওয়া অনুদানের অর্থে গঠিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের প্রাথমিক মূলধন ছিল ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫শ' টাকা। এই টাকা থেকে বগুড়ায় এতিমখানা স্থাপনের জন্য প্রায় পৌনে তিন একরের বেশি জমি কেনার পর বাকি টাকা ট্রাস্টের নামে ব্যাংক একাউন্টে রাখা হয়। সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেসরকারি ব্যাংকে সুদের হার বেশি হওয়ায় ট্রাস্টের টাকা বেসরকারি ব্যাংকের একাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। তিনটি ব্যাংক একাউন্টে সেই টাকা জমি কেনার পরেও সুদাসলে বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮৮ লাখ ২৫ হাজার টাকারও বেশি। মূলধন ও সুদের টাকা থেকে একটি পয়সা বা এক কপর্দকও তসরুপ বা আত্মসাৎ হয়নি এবং তার কোনো প্রমাণও নেই।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কুয়েত সরকারের সুসম্পর্ক ছিল। শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা স্থাপনের জন্য কুয়েতি অনুদানের অর্থ তিনিই আনেন এবং এর অর্ধেকে বাগেরহাটে জিয়াউর রহমানের নামে এতিখানা প্রতিষ্ঠা করেন। বাকি অর্ধেকে বগুড়ায় এতিমখানা স্থাপনের উদ্দেশ্যে গঠিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে তিনিই প্রদান করেন। সেই অর্থেই ট্রাস্টের প্রাথমিক মূলধন গঠিত হয়। ট্রাস্টটি গঠিত হয় তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকো ও শহীদ জিয়ার ভাগ্নে মোমিনুর রহমানের সমন্বয়ে।

ঢাকার কুয়েত দূতাবাসও এক প্রত্যয়নপত্রে জানিয়েছে যে, জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা স্থাপনের উদ্দেশ্যেই কুয়েতি অনুদানের অর্থ দেয়া হয়েছিল। তারা এ নিয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি না করারও অনুরোধ জানায়। তা সত্বেও এ মামলা করা হয়েছে এবং মামলাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল ও প্রতিপক্ষের চরিত্র হননের অপচেষ্টা সমানে চলছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট একটি বেসরকারি ট্রাস্ট। এর তহবিল বিদেশি অনুদান ও ব্যাংকের ইন্টারেস্ট যোগ হয়ে গঠিত হয়েছে। এখানে এক পয়সাও সরকারি তহবিল থেকে আসেনি। কোনো আত্মসাৎ বা তসরুপের ঘটনাও ঘটেনি। কাজেই এ নিয়ে দুদক-এর মামলা করারই কোনো এখতিয়ার নেই। সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে এমন মামলা হতো না বা চলতে পারতো না।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, এর তহবিল সংগ্রহ ও বণ্টনের সংগে বেগম খালেদা জিয়া কিংবা তার প্রধানমন্ত্রিত্বের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও হেনস্তার উদ্দেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের টাকা তিনি তার স্বজনদের লাভবান করার উদ্দেশ্যে তাদের নামে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এটা নির্লজ্জ মিথ্যা। প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল বলে কখনো কিছু ছিল না। এটা কুয়েতি অনুদানের টাকা এবং জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা স্থাপনের জন্য সেই টাকা দেয়ার কথা তারাই বলেছে। এর সঙ্গে বেগম জিয়া বা তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের কোনো সম্পর্কই ছিলনা বা নেই।

কুয়েত সরকার বা দূতাবাসের কাছ থেকে বিষয়টি যাচাই করা খুব সম্ভব এবং উচিৎ হওয়া সত্বেও তদন্তকারী সেটা করেনি এবং করতে নারাজ। কারণ কুয়েতের কাছ থেকে যাচাই করলেই আসল সত্য উদঘাটিত হবে, মামলাকারীরা সেটা চায় না। তাতে এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার মিথ্যা রাজনৈতিক প্রচারণা মাঠে মারা যাবে যে!

লেখক-বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আশুলিয়ায় গণহত্যা ও ছয় লাশ পোড়ানো মামলায় ১৬ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তরুণদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার: রাবাতে আসিফ মাহমুদ
হজব্রত শেষে দেশে ফিরেছেন ৬৩ হাজার ১৮৮ হাজি
৭ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা