‘কিছু ঘটনায় গণমাধ্যম বিস্ময়কর দুর্বলতার পরিচয় দেয়’

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০১৮, ১২:০৭| আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৮, ১২:১০
অ- অ+

আওয়ামী লীগের ৭ মার্চের মিছিল থেকে যৌন হয়রানির অভিযোগের খবর প্রকাশে মূলধারার গণমাধ্যম দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন সাপ্তাহিকের সম্পাদক গোলাম মোর্তজা। তার মতে কোনো কোনো ঘটনায় গণমাধ্যম বিস্ময়কর দুর্বলতার পরিচয় দেয়, এর একটি হলো ৭ মার্চের ঘটনা। এই ঘটনা আলোচনায় আসার পেছনে মূল ভূমিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেখেছে বলে মনে করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে একটি টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ডিবিসি টেলিভিশনে ‘যৌন হয়রানি: ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়’ শীর্ষক টক শোতে তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন শারমিন চৌধুরী।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ারর্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের স্মরণে বুধবার একই ময়দানে জনসভা করে আওয়ামী লীগ। আর এজন্য আশপাশের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। এ কারণে হেঁটে চলতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। আর চলার পথে জনসভায় আসা নেতা-কর্মীদের হাতে বেশ কয়েকজন নারী হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদের মধ্যে ভিকারুননিসার ছাত্রী অদিতি বৈরাগী ফেসবুকে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে যায়। অদিতি জানান, বাংলামোটর এলাকায় সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে যাওয়া একটি মিছিল থেকে তাকে হয়রানি করা হয়েছে। তাকে থাপ্পরও দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভয়াবহ বিপর্যস্ত জানিয়ে অদিতি এমনও লিখেন, ‘আমি এই শুয়রদের দেশে থাকব না।’এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেছেন।

অদিতির পাশাপাশি ইশরাতুল শোভা, আফরিন আসাদ মেঘলাসহ আরও বেশ কয়েকজন তরুণীও ফেসবুকে একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। এসব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

এই ঘটনার সংবাদ পরিবেশনে গণমাধ্যমের দুর্বলতার কথা তুলে ধরে সাপ্তাহিকের সম্পাদক গোলাম মোর্তুজা বলেন, ‘গণমাধ্যম কিছু কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর দুর্বলতার পরিচয় দেয়। সেই দুর্বলতার একটি পরিচয় কিন্তু গতকালকে (বুধবার) দিয়ে দিল। একজন নির্যাতিত কিশোরী যখন ফেসবুকে এরকম নির্যাতনের কাহিনি লিখলো তখন একদল মানুষ প্রমাণ করার চেষ্টায় লিপ্ত হলো এটা একটি ফেইক আইডি। একদল মানুষ প্রমাণ করার চেষ্টায় লিপ্ত হলো যে এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এটা কিন্তু সারারাত ধরে চললো। আমার জানামতে সেই সময় গণমাধ্যমের কেউ এগিয়ে আসেনি বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য যে, এটি ফেইক আইডি নাকি এটি সঠিক আইডি। মেয়েটি ঠিক বলছে কি না, এরকম ঘটনা ঘটেছে কি ঘটেনি। এই জায়গায় গণমাধ্যমের চূড়ান্ত রকমের ব্যর্থতা।’

এই সাংবাদিক বলেন, ‘প্রিন্ট মিডিয়ায়, আজকের যে প্রিন্ট মিডিয়া, যেটা প্রকাশিত হয়েছে, সেই প্রিন্ট মিডিয়ার প্রায় সবগুলোতে এ ধরনের সংবাদ নেই। এটাও গণমাধ্যমের বড় রকমের দুর্বলতা। এই কাজটি মূলত করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আজকে আমরা যে আলোচনা করছি, মেইন স্ট্রিম গণমাধ্যমে যে কৃতিত্বটি এসেছে সেটা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনেক খারাপ দিকের কথা আলোচনা করি, সেটা সত্যি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যে বড় শক্তি আছে, তারা অনেক সময় বাধ্য করে সংবাদ পরিবেশন করতে।’ গণমাধ্যমে এখন সংবাদ চেপে যাওয়ার সুযোগ কম বলে মনে করেন তিনি।

গোলাম মোর্তুজা বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজের কথা বলেছেন, এটা খুব ভালো শোনায় শুনতে। হ্যাঁ, ভিডিও ফুটেজ আছে। আমরা একজন দুইজন করে দেখবো, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে, গোয়েন্দা সংস্থা দেখবে, তারপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ভিডিও ফুটেজের কথা যখন শুনি তখন অনেক হাসি পায়।’

হাসি পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ ছিল, চেহারা শনাক্ত করা হয়েছিল, তবুও কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। কেন খুঁজে পাওয়া গেল না? বলা হলো, কেউ এসে সহযোগিতা করলো না, কেউ এসে ধরিয়ে দিল না। কোনো ব্যবস্থা নেয়া গেল না।’

সাপ্তাহিকের সম্পাদক বলেন, ‘এই কয়েক দিন আগের কথা যদি বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিপীড়নবিরোধী যে আন্দোলন করছিল সেই আন্দোলনে প্রকাশ্যে তাদেরকে যৌন হয়রানি করা হয়েছিল, নির্যাতন করা হয়েছিল। সেটার মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে সেই ফুটেজ নিপীড়িত, নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা তাদেরকে দেখিয়েছিল, সেই ভিডিও ফুটেজ কোথায় গেল?’

‘এ ধরনের দুয়েকটি ঘটনায় উন্নয়ন ম্লান হয়ে যায়’

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা যখন নারী দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছি, নারীর অধিকার নিয়ে, নারীর সমানাধিকার, নারীর সম্মান নিয়ে কথা বলছি ঠিক এই সময়ে ঘটনাটি ঘটেছে। এটা কিন্তু হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে না। এটা কিন্তু বরাবরই ঘটছে। এর আগেও আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে নারী লাঞ্ছিত হচ্ছে। পয়লা বৈশাখে নারীদের দলগতভাবে হয়রানি ও হামলা করা হয়েছে। সেটার বিচার কি আমরা পেয়েছি?’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নারী নির্যাতনের সব কয়টির বিচার হয়েছে বলে দাবি করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব কয়টির বিচার হয়েছে বলবো না। কিছু কিছু বিচার হয়েছে। বাসে রূপা ধর্ষণের বিচার আমরা খুব দ্রুত পেয়েছি। তবে এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ঘটনাটি ঘটেছে এর বিচার কি আমরা পেয়েছি? এরপর তনু হত্যার বিচার? তনু হত্যার বিচার কিন্তু আমরা পাইনি। মন্ত্রী বলেছেন, বিচার হচ্ছে কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা। কত বছর লাগবে বিচার পেতে? রূপার ঘটনাটি ইতিবাচক। এরকম কয়েকটি বিচার যদি আমরা পেতাম তাৎক্ষণিকভাবে তাহলে আশার জায়গাটা বেশি থাকতো।’

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘নারী দিবসের প্রাক্কালে এ ঘটনাটি কেন ঘটলো সেটা যেমন প্রশ্নের বিষয়, এটাও ঠিক নারী দিবস বলে এটা ঘটেছে তা না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকে (বৃহস্পতিবার) বলেছেন, তার সরকার রাষ্ট্রে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু এই সরকারের সময় যখন এই ধরনের ঘটনা হয় তখন অনেক উন্নয়ন কিন্তু ম্লান হয়ে যায় দুই একটি নির্যাতনের ঘটনার কারণে।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের এটার কোনো দায় নেয়। কারণ ঘটনাটি সমাবেশের বাইরে হয়েছে। কিন্তু সমাবেশটা কাদের হয়েছিল? আওয়ামী লীগের সমাবেশ ছিল। আর দলের দায় না হলেও সরকারের দায় আছে। কারণ দল আর সরকার এক নয়। ঠিক আছে সরকার এর বিচার করবে। তবে আমরা দেখতে চাই আগের বিচার এবং এটির দ্রুতবিচার হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু বলেছেন, ঘটনাটি সত্য। এরপর ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৯মার্চ/এমএবি/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ছোট পোশাক তারাই পরবে, যাদের মানায়: সিদ্দিকের প্রাক্তন স্ত্রী মিম
ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি লিটন গ্রেপ্তার
নিজ স্বার্থে সীমান্তের ওপারে যোগাযোগ রাখবে বাংলাদেশ, কে কী বলল যায় আসে না: নিরাপত্তা উপদেষ্টা
বাংলাদেশের হয়ে খেলতে ফিফার অনুমতি পেলেন সামিত সোম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা