ভারতের হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া উচিত ছিল: হাইকোর্টের রায়ে বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:১১

ভারতের হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া উচিত ছিল বলে রায় দিয়েছে দেশটির মেঘালয়ের হাইকোর্ট। ওই রায়ে বলা হয়েছে, ধর্মের ভিত্তিতে যেহেতু দেশভাগ হয়েছিল, তাই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা উচিত। কেউ যেন ভারতকে আরেকটি ইসলামিক দেশে পরিণত করার চেষ্টা না করেন, তাহলে সেটা হবে ভারত আর বিশ্বের ধ্বংসের দিন। এরপরই এই রায় নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বিচারপতি সুদীপ রঞ্জন সেন ওই রায়ে বলেন, এখনও পাকিস্তান, বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধসহ বেশ কয়েকটি জাতির মানুষের ওপরে অত্যাচার করা হয়, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।

বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতারা যেমন এই রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনই আইনজীবীদের সংগঠন এই বিচারপতিকে সব বিচারসংক্রান্ত কাজ থেকে দূরে রাখার আবেদন জানিয়েছে।

বিতর্কিত এই রায়টি দেয়া হয়েছে একটি রিট পিটিশনের মামলায়, যেখানে মেঘালয়ের এক পুরনো বাসিন্দা আমন রাণা কোন প্রয়োজনে মেঘালয় সরকারের কাছ থেকে ডমিসাইল সার্টিফিকেট (রাজ্যে বসবাসের সার্টিফিকেট) চেয়েও তা পাননি। সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সুদীপ লিখেছেন, এধরনের সার্টিফিকেট পেতে নাগরিকদের সমস্যা হচ্ছে ভারতবর্ষের জন্মলগ্ন থেকেই। তাই দেশ এবং দেশভাগ নিয়ে সঠিক অবস্থাটা রায়ের মাধ্যমে জানাতে চেয়েছেন তিনি।

সুদীপ তার রায়ে লিখেছেন, 'একটা সময়ে গোটা দেশটাই হিন্দু রাজত্বের অধীনে ছিল। কিন্তু মুঘলরা এসে ভারতের বিভিন্ন অংশ দখল করে যখন শাসন করতে শুরু করল, তখন অনেক বলপূর্বক ধর্মান্তরও করা হয়েছে। দেশভাগের সময়ে যে লাখ লাখ হিন্দু এবং শিখদের হত্যা করা হয়েছে, অত্যাচার চালানো হয়েছে এবং তাদের যে জোর করে পিতৃপুরুষের জমিজায়গা ছেড়ে আসতে বাধ্য করা হয়েছে এবং প্রাণ বাঁচাতে তারা ভারতে এসেছেন, এইসব তথ্য নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই।'

এরপর রায়ের চার নম্বর অনুচ্ছেদে বিচারপতি যে মন্তব্যটা করেছেন, সেটা নিয়েই গোল বেঁধেছে। তিনি লিখেছেন, 'পাকিস্তান নিজেদের ইসলামিক দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং যেহেতু ভারতকে ধর্মের ভিত্তিতেই ভাগ করা হয়েছিল, তাই তারও উচিত ছিল হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে নিজেকে ঘোষণা করা, তবে সেটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবেই রয়ে গেছে।'

দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে যে প্রতিবেশী দেশগুলিতে সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন। রায়ে সেই একই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 'এখনও, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খৃস্টান, পার্সি, খাসি, জয়ন্তিয়া এবং গারোরা অত্যাচারিত হচ্ছে এবং এদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। যেসব হিন্দুরা দেশভাগের সময়ে এসেছেন, তাদের এখনও বিদেশি বলে গণ্য করা হয়। এটা আমার বিচারে অত্যন্ত অযৌক্তিক, অন্যায় এবং স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

রায়ে বিচারপতি লিখেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, আইন মন্ত্রী এবং সংসদের মাননীয় সদস্যদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন একটি আইন পাশ করে পাকিস্তান, বাংলাদেশ আর আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি, খৃস্টান, খাসি, জয়ন্তিয়া এবং গারোদের এদেশে নিশ্চিন্তে থাকার ব্যবস্থা করেন। এদের ভারতে আসার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা যেন বেঁধে না দেয়া হয়, কোনও নথিপত্রও যেন না চাওয়া হয়। এরপরেও যারা ঐসব দেশ থেকে আসবেন, তাদেরও যেন নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।'

রায়ের শেষ দিকে বিচারপতি লিখেছেন, 'আমার বিশ্বাস শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদিজীর নেতৃত্বাধীন এই সরকারই বিষয়টার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।' রায়ের কপি সরাসরি মেঘালয়ের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সেন।

এই রায়টি জনসমক্ষে আসার পরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। লোকসভার সদস্য আসাউদ্দিন ওয়াইসি সংবাদ সংস্থা আই এএনএসের কাছে মন্তব্য করেছেন, 'এটা কী ধরনের রায়! বিচার বিভাগ এবং সরকারের উচিত এই রায়টির দিকে নজর দেয়া। ভারত কোনোদিনই ইসলামিক রাষ্ট্র হবে না। তা বহুত্ববাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রই থাকবে।'

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, 'আরএসএসের হিন্দু রাষ্ট্রের যে মতবাদ রয়েছে, এই বিচারপতির রাজনৈতিক বিশ্বাসও সেরকমই। আমাদের সংবিধানের মূল ভিত্তিই হল ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু বিচারপতি সেনের সাম্প্রদায়িক যে চিন্তাভাবনা রায়ে প্রকাশ পেয়েছে, সেটি সংবিধানের মূল ভাবনার বিপরীত। একটি সাংবিধানিক আদালতের বিচারক হওয়ার নৈতিক যোগ্যতা তিনি হারিয়েছেন।'

ভারতের প্রধান বিচারপতির কাছে অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়ন দাবী জানিয়েছে সেনকে সবরকম বিচারিক কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। এই বিচারপতিকে অপসারণের জন্য সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনারও দাবী তুলেছেন অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়ন।

ঢাকা টাইমস/১৫ডিসেম্বর/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

ভারতে লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট চলছে

কলকাতা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ মমতার

ভারী বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি 

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে ১৩ রাজ্যের ৮৮ আসনে ভোটগ্রহণ শুক্রবার

ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে চায় আর্জেন্টিনা, কিন্তু কেন?

স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, দায়িত্বপালন থেকে বিরত থাকবেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী 

ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: সিরিয়া কি নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হবে?

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিবে জ্যামাইকা

পাকিস্তানের পর এবার শ্রীলঙ্কা সফরে ইরানের প্রেসিডেন্ট

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :