মামলার স্তুপ, তবুও দখলের মহোৎসব চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে

ইব্রাহীম খলিল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৬, ০০:০৯ | প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর ২০১৬, ০০:০৩

চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কে অবৈধ দখল নিয়ে ১১ হাজার মামলা করেছে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ। যা পড়ে আছে হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই থানায়। আদালতেও নিষ্পত্তি কম এসব মামলার। নেই উচ্ছেদের ব্যবস্থাও। ফলে দেদারছে চলছে দখল উৎসব।

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৬৩ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই এলাকায় পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার সময় সরঞ্জাম নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে যা হাটাহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই উপজেলার মানুষের চলাচলের সড়কে পরিণত হয়।

সড়কটি নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড তখন ৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৫.২৫ মিটার চওড়া জমি অধিগ্রহণ করে। তার মধ্যে দৈর্ঘ্যের পরিমাণ ঠিক থাকলেও মাত্র ৬ মিটার চওড়া সড়ক নির্মাণ করা হয়। বাকি জায়গা ন্যস্ত করা হয় সওজ বিভাগে। যা অবৈধ দখল চলছে।

সওজের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সড়কের কাপ্তাই উপজেলার লগ গেইট থেকে হাটহাজারী উপজেলার চট্টগ্রাম-কালুরঘাট সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার এলাকায় ১৭ হাজারেরও বেশি দখলদার অর্ধ লাখের কাছাকাছি অবৈধ দোকানপাট ও বহুতল মার্কেট ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা করছে।

এর মধ্যে প্রায় ১৪ হাজারেরও বেশি দখলদারের বিরুদ্ধে চারটি থানায় ১১ হাজারেরও বেশি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা আদালত পর্যন্ত গেলেও পুলিশের প্রতিবেদনের অভাবে নিষ্পত্তি শূন্যের কোঠায়। এসব মামলায় তেমন কোন উচ্ছেদও নেই। ফলে দখল উৎসব চলছে ব্যাপক হারে। সড়কের দু’পাশের ৯০ ভাগ জায়গা দখল হয়ে গেছে বলে সূত্র জানায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের হাটহাজারী উপজেলার কুয়াইশ বুড়িশ্চর, নজুমিয়া হাট, মদুনাঘাট, রাউজান উপজেলার জিয়া বাজার, নোয়াপাড়া পথের হাট, পাহাড়তলি, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা শান্তির হাট, গোচরা বাজার, গোডাউন বাজার, উপজেলা সদর ইছাখালি, রোয়াজার হাট, ঘাটচেক, মরিয়মনগর চৌমুহনী, দোভাষি বাজার, কাপ্তাই বারঘোনিয়া এলাকায় শত শত দোকান ও বহুতল মার্কেট ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে ভাড়া ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে দখলদাররা।

কাপ্তাই বাস চালক সমিতির সভাপতি মো. হারুন বলেন, সড়কের দু‘পাশে অবৈধ দখলের কারণে নিত্য যানজট লেগে থাকে। ফলে কাপ্তাই লগ গেট থেকে চট্টগ্রাম শহরে যেতে এক ঘণ্টার জায়গায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। এতে প্রতিদিন যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলার নজুমিয়া হাটের গাউছিয়া মার্কেটের মালিক হাজী মো. নুরুচ্ছাফা বলেন, ‘আমার মার্কেটের মধ্যে সওজের জায়গা তেমন নেই। যা আছে তা মার্কেট নির্মাণের সময় পরিত্যক্ত ছিল। কিন্তু কালক্রমে সড়ক ব্যস্ত হয়ে উঠলেও মার্কেট তুলে নেয়া তো আর সম্ভব হচ্ছে না।’ তবে মার্কেট উচ্ছেদে সওজ বিভাগের করা মামলার নোটিশ কয়েকবার পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

নুরুচ্ছাফা আরও বলেন, সড়কের দু‘পাশের জায়গা দখল তো থেমে নেই। সড়কের দু‘পাশের জমি দখল করে প্রতিনিয়ত গড়ে তোলা হচ্ছে দোকান ও মার্কেট। এতে কোন বাঁধা নেই। ৩০-৪০ বছর আগে যারা দোকান ও মার্কেট করেছে তাদের উচ্ছেদ করে লাভ কী?

সওজের মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কের দু‘পাশে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে দেয়া মামলা সম্পর্কে আমি অবগত নই। কি পরিমাণ মামলা থানায় আছে সেটাও আমার জানা নেই। অবৈধ দখলে থাকলে সওজ বিভাগ উচ্ছেদের ব্যবস্থা করবে। এতে আমাদের করার কি আছে।

এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপদ বিভাগের চট্টগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, সড়কের দু‘পাশ যারা দখল করে দোকান ও মার্কেট নির্মাণ করছে তারা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় এদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, ২০০৮, ২০১১ এবং ২০১৩ সালে হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া অংশে সড়কের দু‘পাশ থেকে বহু অবৈধ দখল অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। যা পুনরায় দখল হয়ে গেছে। আবারও দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/আইকে/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :