হুজুরের কাছে বিচার দেয়ায় জিদানকে হত্যা
অনৈতিক ও ব্যক্তিগত কাজ করতে রাজি না হওয়ায় তাকে চড় মেরেছিল বলে হুজুরের কাছে বিচার দিয়েছিল মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র জিদান ওরফে আবদুর রহমান। এর প্রতিশোধ নিতে তাকে হত্যা করে তার সিনিয়র সহপাঠী আবু বক্কর সিদ্দিক।
আজ বুধবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান হাসান।
এর আগে বুধবার সকাল নয়টার দিকে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে আবু বক্কর সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩ এর একটি দল। আবু বক্কর সিদ্দিক বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ থানার কালিকাপুর গ্রামের মৃত তাহের শিকদারের ছেলে।
আবু বক্কর মাদ্রাসাছাত্র জিদানকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে দাবি করে লে. কর্নেল ইমরান হাসান বলেন, আবু বক্কর ও জিদান মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসায় আবাসিক ছাত্র হিসেবে হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করত। সিনিয়র ছাত্র হওয়ায় আবু বকর মাঝেমধ্যে জিদানকে দিয়ে নিজের কাপড় কাচানো, খাবার আনা-নেয়াসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজ করাত। কিন্তু একসময় জিদান তার আদেশ না শুনলে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় আবু বকর।
লে. কর্নেল ইমরান হাসান বলেন, তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের ঘটনায় গত ১৬ নভেম্বর জিদানকে চড় মারে আবু বক্কর। এ নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়াছিন হুজুরের কাছে বিচার দিলে তিনি আবু বক্করকে সতর্ক করে মীমাংসা করে দেন।
এরপর থেকেই আবুবকর প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে জানিয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, গত ১৯ নভেম্বর এশার নামাজের পর আবু বকর তার ব্যবহার্য ফল কাটার ছুরি দিয়ে জিদানকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত দেড়টার দিকে ঘুমন্ত জিদানের গলা কেটে হত্যা করে জিদানকে। জিদানের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে পালিয়ে যায় আবু বকর।
হত্যাকাণ্ডের সময় মাদ্রাসার ওই রুমে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী শিশু ঘুমিয়ে ছিল। আবু বক্করের দেয়া তথ্যমতে ধস্তাধস্তি ও গোংগানির শব্দে দু-একজন জেগে উঠলেও অন্ধকার রুমে মশারির ভেতরে থাকায় কেউ বুঝতে পারেনি।
পরবর্তী সময়ে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা রক্তের দাগের চিহ্ন ধরে সেপটিক ট্যাঙ্কে জিদানের লাশের সন্ধান পায়।
গত ২০ নভেম্বর পল্টন থানার পুলিশ সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে জিদানের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
নিহত জিদানের বাবার নাম মো. হাফেজ উদ্দিন । তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার জালেশ্বর গ্রামে। সে চার বছর ধরে যাবৎ ওই মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল।
জিদান হত্যার ঘটনায় তার বাবা মো. হাফেজ উদ্দিন ঘটনার পর পলাতক মো. আবু বক্করকে আসামি করে পল্টন মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/মোআ)