নদী শুকিয়ে ধু ধু বালুচর, বিপদে লাখো মানুষ

ফরিদপুর প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৩০

ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার নদ-নদীগুলো শুকিয়ে নাব্যতার সংকটে পড়েছে। চর জেগে ওঠায় গত একযুগ ধরে নৌ-যান চলাচল ও মাছের উৎপাদন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। ফলে এসব নদ-নদীকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকা ও জীবিকা নির্বাহ করা লাখো মানুষকে পড়তে হচ্ছে বিপদে।

নদীপাড়ের মাঝি-মাল্লা, জেলে ও মৎস্যজীবীদের তাই দাবি, ফের খনন করে ফিরিয়ে আনা হোক এ অঞ্চলের ঐতিহ্য, সচল করা হোক তাদের জীবন ও জীবিকা।

প্রকৃতিবাদীদেরও দাবি, নদ-নদী রক্ষায় সরকারকে মেগা পরিকল্পনা করে প্রতি বছর ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে নদীশাসন অতি জরুরি এবং নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে বলেও মনে করেন তারা।

সরেজমিনে জানা গেছে, পদ্মা, মধুমতি, গড়াই, আড়িয়াল খাঁ, গড়াই, চন্দনা, কুমারসহ ফরিদপুর অঞ্চলের অন্য নদ-নদীগুলোতে পানির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। শীতের শুরুতে কিছুটা পানিপ্রবাহ থাকলেও শুকনো মৌসুমে এসব নদী শুকিয়ে প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

নদীমাতৃক জেলা দুটির সাধারণ মানুষের সখ্যতা ও তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনযাপন এসব নদীকে ঘিরে। সেগুলোই শুকিয়ে যাওয়ায় তাই তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। জেলে ও মৎস্যজীবীরা বলছেন, প্রতি বছরের বন্যা ও ভাঙনে প্রচুর পলি ও বালিমাটিতে এ অঞ্চলের ছোট-বড় সবগুলো নদ-নদীই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে আগের মতো মাছ না পেয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের।

তারা মনে করছেন, নদ-নদীগুলো খনন করা হলে পানি ও মাছ পেতে কোনো সমস্যা হবে না।

ফরিদপুর নদী গবেষণা ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অরুন চন্দ্র মহোত্তম জানান, এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর আয়তন এখন প্রায় ১৬ হাজার ৬৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে দুই জেলাজুড়ে কেবলমাত্র পদ্মা নদীরই ১১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা রয়েছে। তবে অব্যাহত বন্যা ও ভাঙনে নাব্যতা হারানো নদ-নদীগুলোর আগের সেই জৌলুস এখন আর নেই। কোনোমতে চলছে পানিপ্রবাহ, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌ-যান চলাচলও।

তিনি জানান, শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ ও গড়াই নদীতে স্বল্প পরিমাণে পানি থাকলেও বাকিগুলো এখন ধু ধু বালুচর, পরিণত হয়েছে চরাঞ্চলে।

নদীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও জীবনযাপন করছেন কষ্টে- এমন মন্তব্য করে ফরিদপুরের নিসর্গবিদ অধ্যাপক আলতাফ হোসেন বলেন, এক সময় এসব নদী অনেক গভীর ছিল, প্রচুর পানি থাকত, পাওয়া যেত বিভিন্ন ধরনের মাছ। এখন পলি পড়ে নদী ভরাট হওয়ায় আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ।

ফরিদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, 'নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোতে পলি পড়ে প্রচুর ডুবোচর তৈরি হয়েছে। পানি না থাকায় মাছের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, চাপ পড়ছে তাদের প্রজননে। ফলে মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ইলিশসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ব্যাপক আকারে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে পলিপড়া জলাশয়গুলোকে পুনর্খনন করতে হবে বলে মনে করেন তিনিও।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, 'এ অঞ্চল পদ্মা, মধুমতি ও গড়াই নদীবেষ্টিত। একপাশে পদ্মা ও অন্যপাশে মধুমতি-গড়াই প্রবাহমান। বন্যায় প্রচুর পলি মাটি বয়ে আনে এ নদীগুলো। এতে জমি উর্বর হয় এবং ফসলের আবাদ ও উৎপাদন ভালো হয়।'

তবে সমস্যার কথাও বলেন জেলা প্রশাসক, উজান থেকে প্রচুর পরিমাণে পলি ও বালিমাটি নদীগর্ভে স্তুপ আকারে এসে প্রতিনিয়ত চর পড়ে নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে যে পরিমাণ পানি থাকার কথা, তা থাকছে না। ফলে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কূল ছাপিয়ে বন্যা ও নদীভাঙনে বাড়ি-ঘর ও ফসলিজমি বিলীন হচ্ছে।

ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ মনে করেন, 'নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রতি বছর ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন। এর ফলে নদীর ধারণ ক্ষমতা বাড়বে, পানিপ্রবাহ সঠিকভাবে থাকবে এবং বর্ষা মৌসুমে আমরা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাব। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীতে যে পানি থাকবে তা দিয়ে সেচকাজসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

তবে প্রমত্তা পদ্মা নদী খনন করা প্রয়োজন। একইভাবে মধুমতি ও গড়াই নদীতেও চর পড়ে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে, সেটাও দেখা দরকার।'

এভাবে নদ-নদীগুলো রক্ষার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষকে বাঁচানো যাবে এবং এর সুফল সারা দেশ পাবে বলেও মনে করেন তিনি।

সরকারের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে নদী বাঁচাতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে এর কাজ শুরু হয়েছে। আমরা হতাশ নই। অচিরেই আমরা এর সুফল ভোগ করবো।

ফরিদপুরে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম নদীপথ। ফরিদপুর নৌ-বন্দরকে কেন্দ্র করে দশ হাজারের বেশি পরিবার বেঁচে থাকে। ব্যবসায়ীরাও তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ করেন এই বন্দর দিয়ে। অথচ পানি ঠিকমতো না থাকায় আগের মতো নদীপথে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ করা যাচ্ছে না।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান এই ব্যবসায়ী নেতাও।

(ঢাকাটাইমস/০৩এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :