প্রতারক ভয়ঙ্কর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০১৯, ১৩:৫৪
অ- অ+

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বড় ব্যবসায়ী পরিচয় তার। পরেন দামি স্যুট, বুট। কেউ দুপুরে দেখা করতে এলে ঘুমের ভান ধরেন। তখন যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যরাত, কিন্তু বাংলাদেশের সময়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হচ্ছে-এটাই বুঝাতে চাইতেন। পুরোটাই ভেক। উদ্দেশ্য বিশ্বাস করিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া।

নাম আলতাফ হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাবেন প্রলোভন দেখিয়ে বেশ কিছু মানুষের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য প্রমাণ আছে সিআইডির কাছে। মায়ের নামে বৃদ্ধাশ্রম করার কথা বলেও টাকা তুলেছেন বিপুল পরিমাণ।

টানা প্রতারণা শেষে সহযোগীসহ ধরা পড়েছেন আলতাফ। সঙ্গীর নাম শরিফুল ইসলাম। বুধবার রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুল এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিশেষ পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান।

সিআইডি জানায়, আলতাফ হোসেন নিজেকে আমেরিকা প্রবাসী ও বহু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার সঙ্গে আমেরিকার রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে বলে বেড়াতেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা করিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

আলতাফ কখনও বিদেশে না গেলেও তিনি মানুষদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য দামি পোশাক পরতেন, দামি হোটেলে উঠতেন, মানুষদের খাওয়াতেন, সেখানে ১০ হাজার টাকা বিল আসলে তিনি বয়দের আরো ১০ হাজার টাকা টিপস দিতেন।

দুপুরে হোটেলে কেউ দেখা করতে গেলে ঘুমের ভাব দেখাতেন আলতাফ। বলতেন, ‘এখন আমেরিকায় রাত, আমি বাংলাদেশের আবহওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছি না।’

সিআইডি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, এই প্রতারক চক্রটি সাধারণ মানুষদের বলত, যুক্তরাষ্ট্রে আলতাফের নিজস্ব বিমান, ভেলা এসোসিয়েট নামের কোম্পানি রয়েছে, নিজস্ব মার্কেট রয়েছে। এসব জায়গায় লোক নিয়োগ করা হবে। একটি মসজিদে ইমাম নিয়োগ করার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

২০১৮ সালে চক্রটি শাহ আলম, শামিম বাশার, ফুয়াদ, মওদুদ, সাইফুল ইসলা, ইয়াছিন মোল্লা, আতিয়ার রহমান, আল আমিন, আবুল কালাম, খালেকুজ্জামান, তরিকুল ইসলাম এবং শাহজাহান আলী নামে কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তারা কোতয়ালি থানায় মামলা করেন। আর এই মামলার তদন্ত করতে গিয়েই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আলতাফ হোসেন তার মায়ের নামে গাজীপুরে আনোয়ারা জাস্টিস বৃদ্ধাশ্রম তৈরির কথা বলেও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এই কাজের জন্য অনেকেই ইট, বালু, সিমেন্ট কেনার জন্যও অনেক ঠিকদার টাকা দিয়েছেন।

এই প্রতারক চক্রের গ্রেপ্তারের কথা শুনে সিআইডি অফিসে আসেন ঢাকা কেরানীগঞ্জের হজরতপুরের জামাল হোসেন ও রেজাউল হক বুলু নামের দুইজন।

জামাল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি কৃষিকাজ করি। ২০১৮ সালে আমাদের হজরতপুরের আলী নামে এক দালালের মাধ্যমে তার (আলতাফ) সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমার ছেলে জুয়েলকে আমেরিকায় মাসে দেড় লাখ টাকা বেতনের চাকরি দেওয়ার কথা বলে তারা। পরে আমি আমার বসতভিটা বিক্রি করে তাদেরকে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা দেই। এরপরই তারা আত্মগোপন করে।’

আরেক ভুক্তভোগী রেজাউল হক বুলু বলেন, ‘আমেরিকায় একটি কোম্পনিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয়। এরপর থেকেই তারা পলাতক। গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে এখানে এসেছি।’

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জীবন কান্তি সরকার ও সহকারী পুলিশ সুপার আজিজুল হকও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/০৪জুলাই/এএ/ডব্লিউবি

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে ট্রল, দিনাজপুরের এএসপি প্রত্যাহার
‘গোপালগঞ্জে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি’
“চাঁদাবাজ যতই প্রভাবশালী হোক, পার পাবে না”
গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা