অনলাইনে নাম না আসায় ভাতা পাচ্ছেন না পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা

মির্জাপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৫৬

কল্যাণ ট্রাস্ট ও ইবি (ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট) নম্বর থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে নাম না আসায় ভাতাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মির্জাপুরের পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা। তিন বছর আগে ভাতার জন্য আবেদন করলেও এখনো ভাগ্যে ভাতা মিলেনি বলে জানিয়েছেন এই মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযোদ্ধারা হলেন উপজেলার কদিম দেওহাটা গ্রামের যোগেশ চন্দ্র সরকার (কল্যাণ ট্রাস্ট নং- ৫০১৫৭), নুতন কহেলা গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন (কল্যাণ ট্রাস্ট নং-৫২২৫, ইবি নং- ৬৯৯), আটিয়া মামুদপুর গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম (কল্যাণ ট্রাস্ট নং ১৭৩৮, ইবি নং-১৩১৯/২০৬৩), জগত ভাররা গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক (কল্যাণ ট্রাস্ট নং-১৭৪৬, ইবি নং- ১৬১৩) ও কালামজানি গ্রামের প্রয়াত হাসান আলী (কল্যাণ ট্রাস্ট নং ৫১৭৭, ইবি নং ৭৪৭)।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে এই মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তোড়া ১ ও ২নং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে ১১নং সেক্টরের ৪৫ এবং ৭নং কোম্পানির অধীনে বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ন হন। যুদ্ধকালীন এদের কোম্পানি কমান্ডার ও সহকারি কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন যথাক্রমে মঞ্জুর কাদের শাজাহান, টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুরের বর্তমান সাংসদ মো. একাব্বর হোসেন এবং আজমত আলী ও আবুল হোসেন।

মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র সরকার জানান, স্বাধীনতার পরই সংসারের পুরো দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত হয়। যার ফলে লাল মুক্তি বার্তা এবং গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কি না তার কোনো খোঁজ রাখা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন জানান, স্বাধীনতার পর সংসারের অভাব অনটন দূর করতে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। চাকরির সময় বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করার কারণে কখন লাল মুক্তি বার্তা, কখন গেজেট হয়েছে তার কোনো খোঁজ রাখা সম্বব হয়ে উঠেনি।

আটিয়া মামুদপুর গ্রামের হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধ থেকে ফিরে এক খণ্ড জমি ছিল তাই চাষাবাদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এছাড়া সমাজের কিছু দুষ্ট শ্রেণির লোকের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় অনেক দিন গা ঢাকা দিয়েও থাকতে হয়েছে। সেজন্য কখন মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি।

একই কথা জানিয়েছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকের স্ত্রী সাজেদা বেগম ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলীর ছেলে সালাম মিয়া।

এই মুক্তিযোদ্ধারা আরও জানান, তারা গত ২০১৫ সাল থেকে সম্মানি ভাতার জন্য আবেদন করে আসছেন। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন টেবিলেও তারা ঘোরাফেরা করেছেন। কিন্তু অনলাইনে নাম না আসায় তাদের ভাগ্যে সম্মানি ভাতা মিলেনি বলে জানান তারা।

মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক বিশ্বাস দুর্লভ চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যাপারে টাঙ্গাইলে সাবেক জেলা প্রশাসক খান মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু অনলাইনে নাম না আসায় জেলা প্রশাসকের পক্ষে এসকল মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সম্মানি ভাতা বরাদ্দ সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।

সদ্যবিলুপ্ত কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান আরজুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভারত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরই কেবল কল্যাণ ট্রাস্ট এবং ইবি নম্বর থাকে। একই কথা জানান টাঙ্গাইলের জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার ফজলুল হক বীরপ্রতীক।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা ভাতা প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনলাইনে নাম না আসায় মির্জাপুরে উল্লেখিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা না দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি উল্লিখিত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ট্রাস্ট অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :