খুলছে গার্মেন্টস, বাড়ছে ঝুঁকি

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ২০:৫১| আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ২০:৫৭
অ- অ+
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গার্মেন্টস কর্মীরা একদিন আগে নানাভাবে ফিরছেন ঢাকায়

করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই আগামীকাল রবিবার থেকে খুলছে বন্ধ থাকা পোশাক কারখানাগুলো। কাজে যোগ দিতে এরইমধ্যে শত ভোগান্তি শেষেও ঢাকায় ফিরেছে অনেকে। তবে পোশাক কারখানা খোলার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলছেন, যেখানে বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে সেখানে এমন পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত অন্যায়।

সারাদেশে এরই মধ্যে চলছে অঘোষিত লকডাউন। মানুষকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে ঘরে থাকার। এমনকি তা কার্যকর করতে রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের।

এমন পরিস্থিতিতেও তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রাখার বিষয়টিকে শ্রমশক্তি ধ্বংসের পাঁয়তারা হিসেবে উল্লেখ করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।

যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক এক সাথে কাজ করে সেখানে কীভাবে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব সে বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তার মতে, কারখানা খোলা রেখে কোনোভাবেই শ্রমিকদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।

‘এরকম একটা ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে আমাদের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়াটা খুব অন্যায় হচ্ছে। আমাদের শ্রমশক্তির শ্রমিকদের নিঃশেষ করার পাঁয়তারা এটা বলে আমরা মনে করি,’ তিনি বলেন।

তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। একই সাথে দাবি জানিয়েছেন যে, কারখানা বন্ধ থাকার সময় শ্রমিকদেরকে যাতে বেতন দেয়া হয়।

মুমা ডিজাইনের প্রিন্ট সেকশনে হেলপার হিসেবে কাজ করেন গিনি বেগম। ৫ এপ্রিল থেকে খুলছে তার কর্মস্থল। তার সাথে কথা হওয়ার সময় তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বাড়ছে বলে শুনেছেন তিনি। তবে অফিস খোলা থাকার কারণেই বাধ্য হয়ে কাজে যেতে হবে তাকে।

‘অফিসের স্যারদের ফোন দিছিলাম। তারা বলছে, ৫ তারিখে আসতেই হবে। তো এখন কী করবো?’ তিনি বলেন।

একই ধরনের কথা বলছিলেন আরেক তৈরি পোশাক কর্মী সুমা খাতুন। তিনি বলেন, ভয় থাকলেও যতটুকু সম্ভব সতর্কতা নিয়েই কাজে যোগ দেবেন।

‘এক ধরনের আতঙ্ক আছে। কিন্তু অফিস খোলা থাকলে, চাকরি যখন করি তাইলে তো যাইতেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘নিজে সতর্ক থাকলে হয়তো কিছুটা নিরাপদ থাকা যাবে।’

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পুরো দেশেই অঘোষিত লকডাউন চলছে। সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে, তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই সয়মটাতে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সব ধরনের নির্দেশনা মেনে চলবেন তারা।

শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য কারখানায় প্রবেশের সময় শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ, সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া, কারখানার যন্ত্রপাতি পরিষ্কারের মতো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

অ্যাচিভ ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম বলেন, সার্বক্ষণিকভাবে আলাদা পরিচ্ছন্নতাকর্মী তার কারখানার প্রতিটি ফ্লোরে নিয়মিত সব যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করছে।

‘সুরক্ষার জন্য যতটুকু করার প্রয়োজন সেটা আমরা করবো,’ তিনি বলেন।

তিনি বলেন, তার কারখানা ঢোকার আগে মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া ডেটল ও সাবান-পানি দিয়ে জুতা ধুয়ে পলিথিনের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলতে হবে। এর পর আরেক দফা ডেটল-পানিতে পা দিয়ে কারখানায় প্রবেশ করতে হবে।

এ বিষয়ে বিজিএমই-এর সভাপতি রুবানা হক বলেন, শিল্প কারখানা হিসেবে যতটা সুরক্ষা পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব তার সবই নেবেন তারা।

এছাড়া সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নির্দেশনাও তারা মেনে চলবেন।

তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেয়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা পদক্ষেপগুলো মেনে চলা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণে আলাদা কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিজিএমইএ-কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া কারখানা মালিকদের বলা হয়েছে যে, তারা যাতে দায়িত্ব নিয়ে সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তবে এ বিষয়ে আলাদা কোনো পদক্ষেপ বা কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৈরি পোশাক কারখানা শ্রম ঘন শিল্প হওয়ায়, এখানে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেসা বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার এখনকার অবস্থাটাতে যদি আগের মতো কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নিয়েই কাজ চলে তাহলে ঝুঁকি বাড়বে। তবে যদি যেসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে সেটি নিশ্চিত করা গেলে ঝুঁকি কমিয়ে আনা যেতে পারে।

‘তবে সেটাও নির্ভর করবে কারখানার মালিকদের ওপর, তারা কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন তার ওপর’ বলেন তিনি।

বিজিএমইএ'র হিসাব বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে ২০ লাখের বেশি পোশাক শ্রমিক বিভিন্নভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। -বিবিসি বাংলা

(ঢাকাটাইমস/০৪এপ্রিল/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সারা দেশে জুনে ৬৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭১১ জন নিহত হয়েছে: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া সেই লিতুন জিরা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে নজর কাড়লো
বিজিবি'র ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপ্তি, শপথ নিল ৬৯৪ নবীন সৈনিক
এসএসসিতে জিপিএ-পাঁচ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা