জামালপুরে ত্রাণ লুট: অভিযোগের তীর আ.লীগ নেতার দিকে

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর
  প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৫৫
অ- অ+

জামালপুরে ট্রাক আটকিয়ে ত্রাণ লুটের ঘটনার নেপথ্যে বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর খবর। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষুধার্তরা নয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ত্রাণ লুটের ঘটনা ঘটেছে। নেপথ্যে ছিল এক জেলা আওয়ামী লীগ নেতা। তার ইন্ধনেই ত্রাণ লুটের ঘটনা ঘটেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসকও সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুধার্ত নয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ত্রাণ লুটের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন।

রবিবার দুপুর ১২টায় সিংহজানি খাদ্য গোডাউন থেকে ত্রাণবাহী ট্রাকটি গন্তব্যস্থল বানিয়াবাজার যাওয়া পথে মুকন্দবাড়ি এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানার বাসার সামনে স্বচ্ছ ও বাবুর নেতৃত্বে ট্রাক আটকিয়ে ত্রাণ লুটের ঘটনা ঘটে। এসময় আশপাশে থাকা ত্রাণবঞ্চিতরাও অংশ নেয়। ঘটনাটি নিয়ে তুলপাড় শুরু হয়েছে। তথ্য অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসছে ত্রাণ লুটের নেপথ্যে কাহিনীর চাঞ্চল্যকর খবর। ত্রাণ লুটের কলকাঠি নেড়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে ও মামলার বিবরণে জানা যায়, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল পাশার সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জেড় ধরেই সেদিনের ত্রাণ লুট। পৌর নির্বাচনে জামাল পাশার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আতিকুর রহমান ছানার সমর্থিত প্রার্থী নুরুল হুদা লাভলু। লাভলুকে জিতিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রে গণ্ডগোল করে কেন্দ্র স্থগিত ও কাউন্সিলর প্রার্থী জামাল পাশার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ছানার সমর্থকরা। পরে স্থগিত কেন্দ্রে আবার ভোট হলে নির্বাচনে জিতে যান জামাল পাশা। সেই থেকে জামাল পাশার সাথে সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানার বিরোধ চলে আসছে। গত রবিবার ত্রাণবাহী ট্রাকটি বানিয়াবাজার যাচ্ছিল জামাল পাশার নির্বাচনী এলাকায় ত্রাণ বিতরনের জন্য। আতিকুর রহমান ছানার বাড়ির সামনে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা তার কর্মী-সমর্থকরা ত্রাণবাহী ট্রাকের পথরোধ করে। ত্রাণবাহী ট্রাকে থাকা কাউন্সিলর জামাল পাশাকে ট্রাক থেকে নামিয়ে ছানার ভাগিনা মুকুল এবং তার কর্মী সচ্ছ ও বাবুসহ একদল যুবক বেধড়ক মারধর করে। পরে তারা ট্রাকে উঠে ত্রাণ লুট শুরু করে। আশপাশে থাকা ত্রাণবঞ্চিতরাও লুটপাটে অংশ নেয়।

এ ঘটনায় সোমবার রাতে কাউন্সিলর জামাল পাশা সদর থানায় সচ্ছকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ রাতেই মামলার আসামি রফিক (৫০), খোরশেদ আলম (২৫), জীবন (২৩), আমির আলী (৩৫) ও ছলিমুদ্দিন (২৮) নামে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

কাউন্সিলর জামাল পাশা বলেন, ত্রাণবাহী ট্রাকে ড্রাইভারের পাশে আমি বসেছিলাম। ট্রাকটি ছানা মিয়ার বাসার সামনে যেতেই তার ভাগিনা মুকুল, তার কর্মী সচ্ছ ও বাবুসহ একদল লোক আমাকে মারধর করে ট্রাক থেকে ত্রাণ লুট শুরু করে। পরে আশপাশের লোকজন ত্রাণ লুটপাটে অংশ নেয়। পৌর নির্বাচনের পর আমার বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেও আমার উপর থেকে আমাদের দলের নেতা আতিকুর রহমান ছানার রাগ যায়নি। বিভিন্ন সময় নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। আমাকে বিব্রত অবস্থায় ফেলার জন্য সেদিন ত্রাণ লুটের ইন্ধন দিয়েছিলেন তিনি। ত্রাণ লুটপাটে নেপথ্যে ইন্ধন দিয়ে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী আতিকুর রহমান ছানার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি।

জেলা প্রশাসক এনামুল হক সোমবার বিকাল ৪টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, জামালপুরে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তা মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দেয়া হচ্ছে। আজ থেকে অনলাইন হটলাইনে যোগাযোগ করলে মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়া হবে। জামালপুরে এখনো এমন পরিস্থিতি হয়নি ক্ষুধার্ত মানুষ ত্রাণ লুট করতে যাবে। সেদিন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে লুটের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান ছানা ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন।

(ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ইশরাককে দ্রুত শপথ না পড়ালে বৃহত্তর আন্দোলনের সতর্কতা সালাহউদ্দিনের
জামালপুরে দুই ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিলো প্রশাসন, জরিমানা ২ লাখ
পুলিশের এসপি পদমর্যাদার ১৭ কর্মকর্তাকে বদলি, ১০ জন পেলেন অতিরিক্ত ডিআইজির দায়িত্ব
ট্রাম্পের নতুন আইন, অন্য দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে লাগবে পাঁচ শতাংশ কর
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা