বই পরিচিতি

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, দুর্ভিক্ষ ও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি

গোপাল রায়
  প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল ২০২০, ১৩:৪০
অ- অ+

১৯৪৩ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আরম্ভ হয়েছে। লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে। গ্রাম থেকে লাখ লাখ লোক শহরের দিকে ছুটছে স্ত্রী-পুত্রের হাত ধরে। খাবার নাই, কাপড় নাই। ইংরেজ যুদ্ধের জন্য সমস্ত নৌকা বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে। ধান, চাল সৈন্যদের খাওয়াবার জন্য গুদাম জব্দ করেছে। যা কিছু ছিল ব্যবসায়ীরা গুদামজাত করেছে। ফলে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দশ টাকা মণের চাউল চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি করছে। এমন দিন নাই রাস্তায় লোকে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায় না।

সেই বাংলাদেশের এই দুরবস্থা চোখে দেখেছি যে, মা মরে পড়ে আছে, ছোট বাচ্ছা সেই মরা মার দু্ধ চাটছে। কুকুর ও মানুষ একসাথে ডাস্টবিন থেকে কিছু খাবার জন্য কাড়াকাড়ি করেছে। ছেলেমেয়েদের রাস্তায় ফেলে দিয়ে মা কোথায় পালিয়ে গেছে। পেটের দায়ে নিজের ছেলেমেয়েকে বিক্রি করতে চেষ্টা করছে। কেউ কিনতেও রাজি হয় নাই। বাড়ির দুয়ারে এসে চিৎকার করছে, 'মা বাঁচাও, কিছু খেতে দাও, মরে তো গেলাম, আর পারি না, একটু ফেন দাও।' এই কথা বলতে বলতে ঐ বাড়ির দুয়ারের কাছেই পড়ে মরে গেছে।" বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার লেখা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে এভাবেই ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের হাহাকার তুলে ধরেন। এই দুর্ভিক্ষের না খেয়ে থাকা মানুষের খারাপ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর যে হৃদয় যন্ত্রনায় হাহাকার করতো তা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তেই প্রকাশ পায়।

"হোস্টেলের যা বাঁচে দুপুরে ও রাতে বুভুক্ষুদের বসিয়ে ভাগ করে দেই"। এভাবে খাবার দেওয়ার পরেও বঙ্গবন্ধু বলেছেন, 'কিন্তু কি হবে এতে?'

যাতে করে মানুষ আর অনাহারে না থাকে, অনাহারে ধুকে ধুকে না মরে তার জন্য বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স করেন নেতাদের কাছ থেকে সাহায্য পেতে। বঙ্গবন্ধু মানুষের এ অনাহারের চিত্র দেখে তাঁর বাবার ধানের গোলার কোন কেঁটে দেন। সেই কোন দিয়ে পরা ধান বস্তায় বস্তায় অনাহারী মানুষকে দেন তিনি।

সত্যিই 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পড়ে আমার পাঠক হৃদয়ে যেন এক অনন্য হাহাকারের সৃষ্টি করেছে। বইটি পড়ার সময় কেন যানি মনে হয়েছে, বইটি আমার তৃষ্ণা আবার কিছুক্ষন পরেই মনে হয়েছে বইটি আমার তৃষ্ণার জল। বার বার পাঠক মন কেঁদে উঠেছে, অসমাপ্ত যদি সমাপ্ত হত তাহলে হয়তো হাহাকারের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা যেত।

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের যে চিত্র 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেছেন যা বর্তমান করোনা ভাইরাসের মত দুঃসময়ের প্রতিচ্ছবিও। বুভুক্ষাদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে দরদি হৃদয়, মানুষের মুখে দু মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার আপ্রাণ যে ত্যাগ, সবকিছুর অম্লীনতা যেন 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র পাঠককে দূরে থেকে কাছে টেনে নেবে।

শুধু যে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষই ফুঠে উঠেছে তা নয়। বইটিতে বঙ্গবন্ধুর বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজ শিক্ষাজীবন, কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ সহ তার উদার রাজনীতির চালচিত্রও ফুঁটে উঠে।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী

লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান

প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার

প্রকাশক: মহিউদ্দিন আহমেদ

প্রকাশনা: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড

প্রথম প্রকাশ: জুন ২০১২

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভালুকায় পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু
সুরতহাল, ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহতদের দাফন-সৎকার
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
শহীদ আবু সাঈদের মাকে নিয়ে ‘কটূক্তি’, পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা