সাহরি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় আট তথ্য

রমজানের বরকতময় দশদিন চলছে। পবিত্র রজমানের রোজা পালন, সাহরি খাওয়া, ইফতার গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেকেরই অনেক প্রশ্ন থাকে। বিশেষ করে সাহরি খাওয়ার বিধান, এর গুরুত্ব। কোন সময়ে সাহরি খাওয়া উত্তম এসব নিয়ে অনেকে মনে কৌতূহল থাকে। এবারে সাহরি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় আটটি প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হলো।
সাহরি শব্দের অর্থ কী?
আরবিতে আস সাহরু শব্দের অর্থ ভোররাত। রাতের শেষ প্রহরকে সাহুর বলা হয়। সেই রাতে যে খাবার খাওয়া হয় তাকে বলা হয় সাহরু। অর্থাৎ সাহুর বা সুহুর হলো রাতের শেষ ভাগের খাবারকে বলা হয়।
সাহরি না সেহরি কোনটা সঠিক?
অনেকেই সেহরি শব্দটা বলে থাকেন। এটা প্রচলিত হয়ে গেছে অনেকটা। আসলে সাহুর বা সাহরু হতে পারে কিন্তু সেহরি হবে না। সেহরি এটা ভুল । কারণ সেহের শব্দের অর্থ জাদু। শেষ রাতের খাবারকে কোনো অবস্থাতেই সেহরি বলবো না। সাহুর বা সাহরি বলতে পারি।
সাহরির বিধান কী?
রোজা পালনকারী ব্যক্তির জন্য সাহরি গ্রহণ করা কি ফরজ, ওয়াজিব না কী। এটা সুন্নত। তাই রোজা রাখার নিয়তে রাতের শেষভাবে খাবার খেলে সুন্নত আদায়ের সওয়াব পাবেন। তবে সাধারণ সময় যদি এমনিতেই শেষ রাতে খাবার খান তাহলে কোনো সওয়াব পাবেন না।
সাহরির ফজিলত কী?
এ নিয়ে বোখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সা. বলেছেন, তোমরা রাতের শেষভাবে খাবার খাও। সাহরি খাও। কারণ এরমধ্যে বরকত রয়েছে। অর্থাৎ রোজা রাখার উদ্দেশে যদি শেষ রাতে খাবার খাওয়া হয় তার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা বরকত দিয়ে থাকেন।
সাহরি ছাড়া রোজা হবে কি না?
আমরা অনেকেই প্রশ্নটা করে থাকি সাহরি খেতে পারলাম না রোজাটা হবে কি না। বরং রমজান মাসের ফরজ রোজা সাহরি না খেতে পারলেও আমাকে রাখতে হবে। কারণ সাহরি খাওয়া ফরজ- ওয়াজিব কিছুই নয়। এটা সুন্নত। আর সুন্নত চলে গেলেও কোনো ইবাদত নষ্ট হয় না। তাই সাহরি খেতে না পারলেও রোজা বিশুদ্ধ হবে।
সাহরিতে কী খাওয়া উচিত?
স্বাস্থ্যসম্মত ও হালাল খাবার আমরা সাহরিতে গ্রহণ করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তোমরা নিজেদেরকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিও না। আমরা এমন খাবার গ্রহণ করবো না যা খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। তবে সাহরিতে খেজুর খাওয়ার ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুল সা. বলেছেন, শেষ রাতের খাবারে খেজুর কতই না উত্তম উপাদান। সেক্ষেত্রে আমাদের খাবারের ম্যানুতে একটি হলেও খেজুর রাখা উচিত। এতে আমরা সাহরি খাওয়ার একটি সুন্নত আদায়ের পাশাপাশি আরো একটি সুন্নত আদায়ের সওয়াব পাবো। এছাড়া খেজুরে যে পরিমাণ সুগার রয়েছে তা সারাদিনের ক্লান্তিও দূর করবে।
সাহরির সময়টা কখন?
রাতের শেষ প্রহরে সাহরি খাবো। অনেকে মাঝরাতে খান। তাতেও তাতের রোজা হবে এবং সাহরির সওয়াব পাবেন। কিন্তু সুন্নত অনুযায়ী হলো- রাসুল সা. বলেছেন, উম্মত ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন পর্যন্ত তারা সাহরিকে শেষের দিকে খাবে। অর্থাৎ রাতের একবারে শেষ প্রহরের দিকে খাওয়া সুন্নাহ। আমরা কতক্ষণ পর্যন্ত সাহরির খাবার গ্রহণ করবো- রাসুল সা. বলেছেন, সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আমরা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করতে পারবো। অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত যতক্ষণ না শুরু হয় ততক্ষণ সাহরি গ্রহণ করতে পারবো। যদিও একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঠেকিয়ে দেয়া উচিত নয়। বোখারি শরিফের হাদিসে এসেছে- রাসুল সা. সাহরি খাওয়া শেষ করতেন এরপর ফজরের আজান আর এই সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে ৫০টির মতো আয়াত তেলাওয়াত করার মতো সময় থাকতো। অর্থাৎ ফজরের আজানের পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় থাকতো।
সাহরির দোয়া আছে কি না?
সাহরির কোনো দোয়া নেই। সাহরি গ্রহণের আগে এবং পরে বিশেষ কোনো দোয়া নেই। ইফতারে যেমন দোয়া আছে তেমনি সেহরিতে কোনো দোয়া কুরআন-হাদিসে নির্দেশ দেয়া হয়নি। আল্লাহুম্মা আছুম্মা গাদাম্মিন শাহরি... যে দোয়া অনেকে রোজার নিয়ত হিসেবে পড়েন। কিন্তু এমন নিয়তের নির্দেশ দেয়া হয়নি। বরং রাতে উঠে যে সাহরি খেলাম এটাই প্রমাণ করে আমি রোজা রাখার জন্য খাবার গ্রহণ করছি।
অনুলিখন: বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
লেখক: বিশিষ্ট দা’য়ী ও ইসলামি আলোচক

মন্তব্য করুন