মনে পড়েছে অতীতের ঈদের স্মৃতি

মির্জা গোলাম ইয়াহিয়া
  প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২০, ১৬:৩৩
অ- অ+

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। কিন্তু এবারের ঈদ ছিলো মন খারাপ করা। এমন নিরানন্দ ঈদ আমার জীবনে কোনো দিন আসেনি। ঈদের সময় আমেরিকা থেকে ছেলেটা আসে। লকডাউনের কারণে এবার আসতে পারেনি। ঢাকার আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসে আমাদের বাসায়। এবার তারাও কেউ আসেনি। আমরাও কোথাও যাইনি। ঘরে বসেই কেটেছে ঈদের দিন। মনে পড়েছে অতীতের ঈদের স্মৃতি।

সেই সত্তর-আশির দশকের ঢাকার ঈদ। তখন রেডিমেড পোশাক বলতে বাজারে তেমন কিছু ছিলো না। সবাই থান কাপড় কিনতো। তা দেয়া হতো টেইলারের দোকানে। যখন স্কুলে পড়ি মনে আছে, তখন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে প্যান্ট আর শার্ট-এর পিস কিনতাম। আর নিউ মার্কেটের কোনো দর্জি দোকানে এগুলো সেলাই করতে দিতাম। তারা বানিয়ে দিতো শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি- যে যেমন কাপড়ের পিস দিতো সেই অর্ডার মতো।

এখানে আরো একটা মজার বিষয় বলি- ঈদের জামা হাতে পাওয়ার পর তা লুকিয়ে রাখার একটা চেষ্টা থাকতো আমাদের মধ্যে। ঈদের দিন সকালে পরার পর সবাই দেখবে। তার আগে দেখে ফেললে চমক থাকবে না। এটাই ছিলো এই লুকোচুরির কারণ। তাই দর্জি দোকান থেকে যখন ঈদের শার্ট-প্যান্ট আনা হতো বাসায় তা লুকিয়ে রাখা নিয়ে আমরা ভাইবোনরা যেন এক প্রতিযোগিতায় নামতাম।

এখনকার ছেলেমেয়েরা এই আবেগ বুঝবে না। তারা দর্জি দোকানের বিষয়টিও সেভাবে বুঝবে না। কাপড় কিনে ঈদের পোশাক টেইলার দিয়ে বানানোর ব্যাপারটি এখনকার প্রজন্ম চিন্তাই করতে পারবে না। তবে খোদ ঢাকা শহরে নব্বই দশকের গোড়া থেকে রেডিমেড পোশাক কেনার বিষয়টি জনপ্রিয়তা পায়। আমার ক্ষেত্রে এটা শুরু হয়েছে আশির দশকের শুরুরদিকে। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে। তখন থেকে আর কাপড় কিনে শার্ট তৈরি করতে হয়নি। নিউ এলিফ্যান্ট রোড থেকে রেডিমেড শার্ট আর প্যান্ট কিনতাম। অবশ্য পরবর্তীতে শুধু শার্টই কিনেছি। মনে আছে সেই সময় পিয়ারসন্স এর শার্ট খুব কিনতাম। ভালো ফিটিংসয়ের জন্য প্যান্ট বানিয়েই পরতাম।

চাঁদরাতে আমরা খুব একটা ঘুমাতাম না। আবার ঈদের দিনও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যেতাম। গোসল করে নতুন জামা পরার জন্য তাড়া থাকতো। চাঁদ রাত থেকেই আম্মা ঈদের রান্না-বান্না শুরু করে দিতেন। সকালে উঠে গোসল সেরে সেমাই খেয়ে চলে যেতাম নামাজ পড়তে। অবশ্য এখনো আমার স্ত্রী চাঁদরাত থেকেই রান্না-বান্না শুরু করে দেয়।

ঢাকায় থাকলেও আমি কখনো ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়িনি। সবসময় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েছি। স্কুলে পড়ার বয়সে নামাজ পড়েছি লালবাগ বড় ভাট মসজিদে। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় ঈদের নামাজ পড়েছি নিউ পল্টন লাইনে অবস্থিত আমার অতি প্রিয় আজিমপুর কবরস্থান জামে মসজিদে। এলাকার বন্ধুবান্ধরাও এখানেই নামাজ পড়তো।

সেই দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। ঈদের দিনে ছোটবেলার সেই আনন্দ পড়ে যেন কোথায় হারিয়ে যায়। এখন সন্তানদের আনন্দিত মুখ দেখে সেই সুখ অনুভব করি। এভাবেই হয়তো সময়ের পরিবর্তনে নতুন চেহারা নিয়ে ঈদের আনন্দ হাজির হয়েছে।

লেখক: হেড অব পাবলিক রিলেশন্স অ্যান্ড মিডিয়া ডিভিশন, সিটি ব্যাংক

ঢাকাটাইমস/২৮মে/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ড. ফয়জুল হককে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
অতিরিক্ত সচিব আরিফুজ্জামানসহ ৩ জনকে ওএসডি
যশোরে পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবক খুন 
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অর্ধ বার্ষিক বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা