কবিতা
ড.নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র কবিতা হৃদিতার প্রাণের পুকুর
অবশ্য ঘটনাটা এ তল্লাটের সকলেরই জানা
হৃদিতার প্রাণের পুকুর থেকে একে একে
চুরি হয়ে গ্যাছে সবগুলো সোনামাছ।
লিকলিকে আশালতা যেমন করে জড়িয়ে থাকে
গা-ঘেঁষে অনাদরে পড়ে থাকা গাছের শুকনো ডালটাকে
হৃদিতার কাছে সেই মাছগুলো ছিলো তেমনি নির্ভরতার।
বন্ধুরা বলে, না হৃদি! তোর আরো সাবধানি হওয়া উচিত ছিল.
(স্বাস্থ্য-বান্ধব এ দেশে রোগির চেয়ে বদ্যির সংখ্যা যে বেশি
সে কথা তো সকলেরই জানা।)
পরামর্শের বজ্রাঘাতে ক্লিষ্ট হৃদিতাও ভাবে
হয়তো আরো সতর্ক হওয়া যেতো
কিন্তু তাতেও কি ইতর বিশেষ হতো?
শিশায় গড়া বেহুলার বাসর ঘরেওতো
ঢুকে পড়েছিল সূতানালি কাল-সাপ।
থানা-পুলিশ হয়তো করা যেতো
তবে মালামাল উদ্ধারের মামলার মেরিট এই এফ.আই.আর-এ নেই
অহেতুক আরো কতো বিড়ম্বনা
আপদের মতো ঢুকে পড়তো রটনার সুরঙ্গে।
দিন দিনান্তে এতো অজান্তেই চুপিসারে চুরি হয়ে যাবে শেষ সম্বল,
এভাবেই নিঃস্ব হয়ে যেতে হবে সকল অবলম্বনের বেসাত খুইয়ে;
স্বপ্নেও ভাবেনি হৃদিতা।
হাত ইশারায় ডেকেছে ফুলেরা
অথচ তীক্ষ্ণ কাঁটার গভীর ঘায়ে
বুকের পাঁজর বিদ্ধ হলো
প্রতারিত প্রজাপতির মতো ।
হৃদিতার থৈ থৈ জলের প্রাণের পুকুরে
অফুরান আনন্দে জলকেলি করা
সেই সোনা মাছগুলো আজ লাপাত্তা
জল শুকিয়ে চৌচির যেন চৈত্রের মাঠ
ভালোবাসার ভিটায় ঘু-ঘু চড়ে।
গোলাপের শরীর থেকে একে একে পাঁপড়িরা ঝরে পড়ে
পতিত পাঁপড়িরা আশা জাগানিয়া বাণি শোনায়-
আবার ফুটবে লাল-লাল-লাল গোলাপ
চৈত্রের চিতার দাবানলের সাধ্যি নেই
জ্বলে-পুড়ে খাক করে সোনামাছের সরোবর।
যাপিত জীবনের জ্বালার উপশম হয়ে
আবার গাছের শাখায়
প্রজাপতির পাখায়
শিশুর ছবি আঁকায়
রঙ-রঙ খেলা চলবে নিরন্তর।
অথৈ জলে কানায় কানায় ভরে যাবে প্রাণের পুকুর
সোনা মাছেরা বাহারি রঙের ঘুড়ির মতো ঘুরে বেড়াবে
জলের সুনীলে, অবারিত আকাশ যার উপমা
খাবি খাবে শ্যামল শেওলায়,
কালো মেঘের খন্ড যার তুলনা
আকাশ, ঘুড়ি, মেঘ
জল, মাছ, শেওলা-
দু দেশের তিন-জোড়া বান্ধব
হৃদিতাকে অশেষ হবার স্বপ্ন দেখায়।
আর এভাবেই,
অস্তাচলের পান্ডুর আভা হার মানে পূর্বাচলের উদ্ভাসের কাছে,
এভাবেই চুরি যাওয়া সোনা মাছ প্রাণের পুকুরে পুকুরে বাঁচে।