যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০২০, ২২:২৯

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা গ্রামে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে গৃহবধূর স্বামী, তার ভাই ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।

নির্যাতিত গৃহবধূ বর্তমানে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ব্যাপারে গৃহবধূর মা শুকুরি বেগম টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় গৃহবধূর স্বামীকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নামে মামলা দেয়া হয়। মামলার পর আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছেন। তবে অভিযুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা এলাকার মৃত বিশা মিয়ার ছেলে আশরাফের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ের পর তাদের সংসার ভালই চলছিল। কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হয়নি। কিছুদিন যেতে না যেতেই সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। এরপর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দেয়ার কথা বলে প্রতিনিয়তই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় স্বামী আশরাফ।

নির্যাতিত গৃহবধূ যৌতুক এনে দিতে না পারায় একপর্যায়ে গত ছয় মাস আগে তার দেড় মাসের শিশুকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। তাতেও খান্ত হয়নি স্বামী। গত শুক্রবার গৃহবধূকে আবারও তার বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় স্বামী তার বড় ভাইসহ পরিবারের সাত-আটজন সদস্য মিলে গৃহবধূকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালায়।

পরে আশপাশের লোকজন বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানান। পরে চেয়ারম্যান স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় ওই নারীর মা শুকুরি বেগম শনিবার টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করেন।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, আমার স্বামী মাঝে মাঝেই যৌতুকের টাকার জন্য আমাকে চাপ দেন। আমার বাবা নাই। মা কষ্ট করে দুই দফায় টাকা দিয়েছেন। দুইবার টাকা দেয়ার পরও তিনি আবার টাকা দাবি করেন। আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে অস্বীকার করায় আমাকে মারধরের হুমকি দেয়। পরে শুক্রবার আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। পেটানোর এক পর্যায়ে আমার বুকের মধ্যে একটা লাথি মারলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে আমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা আমাকে বেধড়ক মারধর করে।

তিনি বলেন, এর আগে টাকার জন্য আমার ছয় মাস বয়সী এক সন্তান বিক্রি করেছি। এতো টাকা দেয়ার পরও তার টাকা প্রয়োজন। আমি আমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা যারা আমাকে নির্যাতন করেছে তাদের কঠিন শাস্তি চাই।

ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, টাকার জন্য ওই নারীকে এর আগেও তার স্বামী তালাক দিয়েছে। তালাকের পর কাবিনের টাকা দিতে না পারায় আবার ওই নারীকেই বিয়ে করেন আশরাফ। তারপরও আশরাফের টাকার খায়েস মিটেনি। টাকার জন্য তার স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরারা খুঁটিতে বেঁধে মারধর করেছেন। যারা এই মারধরের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।

সিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক আলী বলেন, খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানাই। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ওই নারীকে তার স্বামী মারতে পারে। কিন্তু তার বড় ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী মারধর করেছে এটা মেনে নেয়ার মতো নয়। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

টাঙ্গাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে খুঁটিতে বেঁধে তার স্বামী ও আত্মীয় স্বজনেরা বেধড়ক মারধর করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। প্রকৃত আসামিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

সিরাজগঞ্জে প্রার্থীর পক্ষে গোপন বৈঠক: ৫ প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

টাঙ্গাইলে কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকচালক নিহত

সুজানগরে বিপুল টাকা ও ১০ সহযোগীসহ চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আটক

চুয়াডাঙ্গায় বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি, শীতল বাতাসে জনমনে স্বস্তি

ফরিদপুরে স্বস্তির বৃষ্টি, বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

পাবনায় ৩টি ইটভাটায় ৯ লাখ টাকা জরিমানা 

নষ্ট হচ্ছে জাটকা অভিযানে জব্দ মূল্যবান জেলে নৌকা

ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি

বরগুনায় সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত 

চাঁদপুরে পিকআপ ভ্যান-অটোরিকশার সংঘর্ষে বাবা-ছেলে নিহত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :