চীন-ভারত যুদ্ধের সম্ভাবনা কতোটুকু?

তালহা রহমান
  প্রকাশিত : ০৭ জুলাই ২০২০, ১৯:৫০| আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২০, ২০:২৯
অ- অ+

সীমান্ত নিয়ে চীন-ভারত দ্বৈরথ নতুন কিছু নয়। ১৯৬২ সালে দুই দেশ সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধেও জড়িয়েছিল। কিন্তু সেবারের প্রেক্ষাপট আর চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণই ভিন্ন। এটি কি শুধু একটি সীমান্ত বিরোধ নাকি মহামারীর সুযোগে দখলদারিত্বের একটি অপপ্রয়াস সেটি সময়ই বলে দিবে। ঘটনাটি এমনই একটি সময়ে ঘটছে যখন বিশ্ব অতিক্রম করছে একটা বড় ক্রান্তিকাল।

ভারতীয় সৈন্যদের পেটানোর জন্য লোহা জড়ানো একটি কাঠের ছবি সামাজিক মাধ্যমে বেশকিছু দিন ধরেই ভাইরাল হয়ে ঘুরছে। ১৯৯৬ সালের সামরিক এক চুক্তি অনুযায়ী দুইদেশ সীমান্ত সংঘাতে কোন ধরনের সমরাস্ত্র ব্যবহার করবে না মর্মে সম্মত হয়েছিল।

বর্তমান সমস্যার সূত্রপাত হয়েছে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় প্রায় তের হাজার পাঁচশত ফুট ওপরে বিমানবন্দরের জন্য ভারতের রাস্তা নির্মানকে কেন্দ্র করে। যেহেতু তারা সমরাস্ত্র ব্যাবহার না করার অঙ্গিকারাবদ্ধ, সুতরাং শুধু হাতাহাতিতে কিভাবে ২০ জন ভারতীয় সেনা মারা গেল সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

যদিও চীনের ৪৬ জন সৈন্য নিহত হওয়ার খবর এসেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। যদিও চীনের কোনও মিডিয়ার কাছ থেকে এর সত্যতা মেলেনি। এমন হতে পারে মৃতের সংখ্যা দাবির তুলনায় কম অথবা যারা মারা গিয়েছেন তারা হয়ত হাতাহাতির সময় বরফ আচ্ছাদিত অনেক উচু স্থান থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছে।

এখন আসা যাক ভারত-চীন কি সত্যিই কোনও বড় রকমের যুদ্ধে জড়াবে কি-না? আপাতত মনে হচ্ছে না তারা প্রথাগত কোনও যুদ্ধে যাবে। এর আগেও দোকালাম সীমান্তে উভয় পক্ষ ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। কিন্তু কোনও বড় যুদ্ধে যায়নি তারা।

১৯৪৭ সালে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ৫-৬টি বিমান ঘাঁটি ব্যাবহার করতে দিয়েছিল। এর মাধ্যমে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে আমেরিকা যুদ্ধ করেছিল এবং পরবর্তীতে তিব্বতে একটি গেরিলা যুদ্ধে মদদ দেয়। এই ঘটনাচক্রের কারনেই ১৯৬২ সালের যুদ্ধ।

কিন্তু বর্তমানের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দুই দেশই এখন পারমানবিক শক্তিধর। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে দুই দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সীমান্ত নিয়ে এই ধরনের ঘটনা দুটি দেশের জন্যই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর ঘটনাটির সূত্রপাত হলো বরফ আচ্ছাদিত পাহাড় অঞ্চলে, যেখানে সেনাবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। হয়ত বিমানবাহিনীর মাধ্যমে কিছু করা সম্ভব।

অন্যদিকে দুটি দেশই ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্বে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেছনের দিনগুলোতে ভারত আমেরিকা, ইসরাইল তথা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক বহুগুনে বৃদ্ধি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পরিস্থিতির জন্য চীনের আগ্রাসী মনোভাবকে দায়ী করেছেন। চীন-আমেরিকার বৈরীতার কথা সকলেরই জানা।

অন্যদিকে আন্তজার্তিক অঙ্গনে চীনের তেমন কোনও বন্ধু রাষ্ট্র না থাকলেও পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের রয়েছে ঐতিহ্যগত সম্পর্ক। এই পাকিস্তানের সঙ্গে আবার ভারতের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। সাম্প্রতিককালে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সুসম্পর্ক রাশিয়া ভালভাবে নেয়নি। সুতরাং বড় ধরনের যুদ্ধ হলে পুতিনের রাশিয়া যে চীনের পাশেই থাকবে সেকথা বলা যায়।

অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক এখন খুব একটা ভালো না। নেপাল-ভূটানের সঙ্গে দেশটি সাম্প্রতিককালে বেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। কিছুদিন আগেই ভারত অভিযোগ করেছে নেপাল নাকি তাদের সীমান্তবর্তী কৃষকদের ওপর গুলি চালিয়েছে।

এ তো গেল রাজনাতী বা সমরনিতীর কথা। অর্থনিতীতে যে চীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি সেকথা অনস্বীকার্য বিশ্বের শিল্পায়নের ৭০ শতাংশ কাঁচামাল সরবারহ করে দেশটি। সুতরাং এই মহামারীকালে যদি চীন-ভারত যুদ্ধ করে তাহলে সেটি যে আরেকটি মহামারী তৈরী করবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই বিশ্বনেতারাও এই পরিস্থিতিতে দুপক্ষকে শান্ত রাখতে সচেষ্ট হবেন। অন্যদিকে ভারতের আমদানি-রপ্তানীর অন্যতম অংশীদার এই চীন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশের সড়ক-যোগযোগ, বন্দর, স্থাপনা-অবকাঠামোর অংশীদার দেশটি।

সবশেষ কথা হলো যুদ্ধে জড়ানোর জন্য যে পরিমান গুরুত্ব বহন করা প্রয়োজন সেই গুরুত্ব এই লাদাখ অঞ্চল বহন করে কি-না? তার জন্য উভয়পক্ষ বল প্রয়োগ করবে কি-না? যদিও এসবের আগে গত অক্টোবরে ভারত সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা বাতিল করে এবং এর মাধ্যমে কাশ্মীর ও লাদাখের ওপর থেকে তাদের স্বায়ত্বশাসন প্রত্যাহার হয়ে যায়।

এই লাদাখের বেশ কিছু অমিমাংসিত অংশ চীন নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। ভারতও আকসাই চীনের বেশ কিছু এলাকা নিজেদের বলে দাবি করছে। পাশপাশি লাইন অব ম্যাকমোহন চীনস কখনোই মানেনি। লাদাখ-অরুণাচলে নিয়ন্ত্রনরেখা ভেঙ্গে ঢুকে পড়াও দুই দেশের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। সুতরাং সীমান্ত সমস্যা নতুন কিছু নয়। সীমান্তে সংঘাত হয়েছে অনেকবার কিন্তু যুদ্ধ হয়েছে ওই একবারই অর্থাৎ ১৯৬৫ সালে।

এসকল ক্ষেত্রে অন্যান্য পরাশক্তির ভূমিকাও অনস্বীকার্য। তারাও চাইবে না এই মহামারী বিপর্যস্ত বিশ্বে আরেকটি দুর্যোগ নিয়ে আসতে। সুতরাং সম্মুখ অথবা প্রথাগত যুদ্ধ আপাতদৃষ্টিতে সূদূর পরাহত সেকথা বলাই যায়। বরং উভয় দেশই সাময়িক শক্তি প্রদর্শন আর উস্কানিমূলক কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকবে।

লেখক: উন্নয়ন কর্মী।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফিরে দেখা ৪ জুলাই: সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, উত্তাল সব বিশ্ববিদ্যালয়
এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকেও ইভিএম বাদ
আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা, পাউবো কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ
নির্বাচন ভবনে রোপণ করা গাছ থেকে সরানো হলো আউয়াল কমিশনের নামফলক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা