চিকিৎসকরা বলছেন পরীক্ষা না করানোয় শনাক্ত হচ্ছে না

করোনাভাইরাসকে ভয় করেন না তারা

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ জুলাই ২০২০, ১২:০২ | প্রকাশিত : ১২ জুলাই ২০২০, ১১:৫৮

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও আক্রান্ত। প্রতিদিন হাজারো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে কয়েক ডজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারিত নানা সতর্কবার্তা সমাজের বিভিন্ন স্তরে পুরোপুরি না হলেও পরিপালন হচ্ছে নানা মাত্রায়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব একেবারেই উপেক্ষিত হচ্ছে রাজধানীর বস্তিগুলোতে। করোনাভাইরাসের ভয় বিন্দুমাত্র নেই তাদের মধ্যে। তাদের দাবি, ‘গরিবের করোনা হয় না’।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় বস্তি ঘুরে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ভুল ধারণা বা অসতর্কতার কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে লাখ লাখ বস্তিবাসী। তাদের মাধ্যমে ঝুঁকির শঙ্কায় আশপাশের মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, দেশের বস্তির বাসিন্দাদের অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আর পরীক্ষা না করানোয় শনাক্ত হচ্ছে না তারা।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, রাজধানীতে ৩ হাজার ৩৯৩টি বস্তিতে সাড়ে ৬ লাখ মানুষের বাস করে। তবে ছয় বছর আগের হিসাবের সঙ্গে বর্তমান বাস্তব পরিস্থিতি মিলবে না বলে মনে করেন দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রাজধানীর এসব বস্তির ঘিঞ্চি পরিবেশে বসবাসকারী প্রায় সবাই দিনমজুর, গৃহকর্মী ও অন্যান্য নিম্ন আয়ের মানুষ। অবসরে বস্তিতেই বসে তাদের আড্ডা। সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধির মানার পক্ষে নন তারা।

বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর কোনো বস্তিতেই এখন পর্যন্ত কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি বলে জানেন তারা। তাই তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো ভয় নেই। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে কিছুটা কৌতূহল কাজ করলেও তা কিছুদিনের মধ্যে কেটে যায়। এখন তা একেবারেই নেই। তারা স্বাভাবিক সময়ের মতো জীবনযাপন করছেন।

গত মার্চের শেষ দিকে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি বা লকডাউন চলাকালীন তাদের অনেকে ত্রাণের আশার ছুটে বেড়িয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। সে সময়ও তারা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। বর্তমানেও মাস্ক ছাড়াই চলাচল করতে দেখা গেছে তাদের।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেড ৫ নম্বর রোডের বস্তির বাসিন্দা রানী ঢাকাটাইমসকে জানান, তাদের বস্তিতে ২৬টি পরিবারের বসবাস। তারা সবাই করোনামুক্ত আছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তিনি।

তবে বস্তির আশপাশের বাসিন্দাদের রয়েছে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস কারো হবে, কারো হবে না, বিষয়টা এমন না। এটা যে কারো হতে পারে। কিন্তু বস্তির মানুষগুলো একেবারেই সতর্ক না। তারা নিজেরা যেমন ঝুঁকিতে আছে, তাদের আশপাশে আমরা যারা বসবাস করি, আমাদেরও ঝুঁকির শঙ্কায় রাখছে।’

একই এলাকার বাঁশবাড়ি বস্তি ঘুরে জানা যায়, বস্তিটির চার শতাধিক পরিবারের কেউই করোনা আক্রান্ত হয়নি। ফলে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের সতর্কতা গড়ে ওঠেনি। বস্তিতে চায়ের দোকানগুলো স্বাভাবিক সময়ের মতোই খোলা থাকছে। বস্তি ঘিরে গড়ে ওঠা ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মানুষের ভিড় আগের মতই। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে-বসে আড্ডা-হল্লা চলছেই।

একই অবস্থা রাজধানীর কল্যাণপুর পোড়া বস্তি, কড়াইল বস্তি, বেগুনবাড়ি বস্তি, তেজগাঁও রেললাইন বস্তি, কারওয়ান বাজার বস্তিতে।

ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা দেখা যায়নি গাবতলি সুইপার কলোনিতে। এখনো স্বাভাবিকের মতোই চিত্র এই কলোনিতে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ এখানে চলাচল করছেন মাস্ক ছাড়াই।

শুরুতে স্বাস্থ্যবিধির কিছুটা তোয়াক্কা করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বিলীন হয়েছে বাংলাদেশে আটকে পড়া উর্দুভাষীদের ক্যাম্পগুলোতে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকার একাধিক ক্যাম্প ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মেলে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ক্যাম্পের সামনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রির দোকান রয়েছে। যার দোকান তার মুখেই নেই মাস্ক। আশপাশের সব বই বাঁধাই, প্রেস, চায়ের দোকান, সেলুন থেকে শুরু করে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলছে কার্যক্রম। ক্যাম্পের ভেতরের চিত্রও একই।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ক্যাম্পসংলগ্ন এক ব্যবসায়ী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ক্যাম্পের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত। কিন্তু এরা স্বীকার করে না। অনেকেই তাবিজ-কবজ আর কবিরাজি ওষুধ খাচ্ছে। ডাক্তারের কাছেও যায় না। পরীক্ষাও করায় না। সবাই মাস্ক ছাড়া ঘোরে।’

একই অবস্থা দেশে উর্দুভাষীদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত জেনেভা ক্যাম্পে। সামাজিক দূরত্ব নেই মোহাম্মদপুর টাউনহল ক্যাম্প, মিরপুর ক্যাম্পে।

এ বিষয়ে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিসের (এফডিএসআর) উপদেষ্টা ডা. আব্দুর নূর তুষার জানান, দেশের বস্তির বাসিন্দাদের ৮০ শতাংশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের অনেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্থও হয়ে গেছেন। বাকিরা পরীক্ষা না করানোর কারণে শনাক্ত হচ্ছে না। বস্তিতে করোনা পরীক্ষা করা হলে অনেক আক্রান্ত পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :