জীবনকে নিয়ে ভাবতে হবে শুরু থেকেই

আতিক খান
 | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০২০, ১২:১৩

সঞ্চয় আর অপচয় দুটো পরিপূরক শব্দ। অপচয় করলে সঞ্চয় করা খুব কঠিন। আর যারা সঞ্চয় করে তারা সহজে অপচয় করে না।

আমি যে শুরু হতেই বিনিয়োগ আর সঞ্চয়ে অভিজ্ঞ ছিলাম তা মোটেই না। বরং সঞ্চয় করতে শিখেছি অনেক ঠেকে, বিভিন্ন বিনিয়োগে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে। প্রায় সময়ই আমি জমানো অর্থ প্রায় পুরোটাই খরচ করে ফেলতাম কিংবা বিনিয়োগ করে ফেলতাম। এরকম পরিস্থিতিতে কয়েকবার পড়ে এরপর বুঝেছি, অতিরিক্ত বিনিয়োগ কোনো ভালো ফল বয়ে নাও আনতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোতে বাটপারের ছড়াছড়ি। এমন ভূমিতে বিনিয়োগ করেছি যা ১৮ বছরেও হাতে পাইনি। অদূর ভবিষ্যতে পাব, সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।

তবে অপচয় বা বিলাসিতার স্বভাব আমার একেবারে নেই। আমি একজন নন ব্রান্ডেড মানুষ। ব্রান্ডের কোনো কিছুতেই আমার আগ্রহ নেই। একটা ডকুমেন্টারিতে দেখেছিলাম, একটা ব্র্যান্ডের আইটেমে প্রোডাক্ট ভ্যালু থাকে মাত্র ৮-১০%। বাকিটা তাদের বিজ্ঞাপন, মডেলদের সাথে চুক্তি, মার্কেটিং খরচ, শো-রুম আর অন্যান্য খরচ তুলে আনার জন্য। তাই সবসময় প্রাধান্য দেই, আমাকে কিসে মানায় বা কি ব্যবহার করতে আমার ভালো লাগে। কলার বা আইটেমের স্টিকারে কোনো আগ্রহ পাই না।

সমাজে কিছু মানুষ আপনি অবশ্যই পাবেন, যারা ব্র্যান্ড ছাড়া চলাফেরা করেন না, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা আড্ডাতেও তাদের আলাপ জুড়ে থাকে সব ব্র্যান্ডের গল্প। আমার বন্ধু সার্কেলেও আছে কয়েকজন। অনেক মহিলা তো ঘুমের ঘোরেও ব্র্যান্ডের স্বপ্ন দেখেন।

আর ব্যবহৃত জিনিসের প্রতিও আমার একধরনের মায়া তৈরি হয়, জিনিসটা নষ্ট বা ব্যবহারের অযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত ফেলে দিতে পারি না বা বদলাই না। তার মানে আবার এই না যে, আমি আলমারিতে জিনিস জমাতে থাকি। প্রতি বছর কয়েক দফাতেই পুরানো কাপড় যাদের প্রয়োজন তাদের দিয়ে কমিয়ে ফেলি। ব্যবহৃত দ্রব্যের কিছু উদাহরণ দেই।

আলমারিতে আমার এক-দেড় যুগ আগের পোশাকও আছে, যা ইস্ত্রি করে পরিধান করে অবলীলায় যে কোনো অনুষ্ঠানে চলে যাই। সারা বছর কোনো পোশাক তেমন একটা কেনার প্রয়োজন হয় না। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের দেওয়া উপহারেই সারা বছর নিশ্চিন্তে কেটে যায়৷ গত ৮ বছর কোনো ব্লেজার বা স্যুট কেনা হয়নি। কাজ চলে যাচ্ছে।

১ম স্মার্টফোন ছিল স্যামসাং এস ২, যা নষ্ট হওয়া পর্যন্ত ৪ বছর ধরে ব্যবহার করেছি। অনেক আগেই বন্ধুরা আইফোন ৪ ইউজ করত, তাতে প্রলুব্ধ হবার মতো কিছু লাগেনি। বর্তমান মোবাইলটার দাম ২৭ হাজার, যা ব্যবহার করছি ৩ বছর ধরে। আমার প্রয়োজন মিটে যাচ্ছে, সামর্থ্য থাকলেও এর চেয়ে দামি মোবাইল কেনার প্রয়োজন বোধ করিনি। স্মার্টফোনের অধিকাংশ ফাংশনই কেউ ইউজ করে না। বেশিরভাগ মানুষ দাবি ব্র্যান্ড কিনে শো অফের জন্য৷

দুই লাখ টাকার সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি চালিয়েছি প্রায় ৪ বছর। বড় রিপেয়ারের প্রয়োজন হলে সেটা ছেড়ে দিয়ে বর্তমান গাড়িটা নিয়েছিলাম ১০ বছর হলো। অনেক মডেল আসলে গেলেও নিজের গাড়িটাই আমার কাছে সবচেয়ে আরামদায়ক মনে হয়। মায়ার কারণেও গাড়িটা বদলাতে পারি না।

বর্তমান ব্যবহৃত বেল্ট স্যান্ডেলটা ২০১৮ সালের ঈদের। ২০১৯ সালের ঈদ কেটেছে শিপে আর এবার করোনার কারণে কোনো কেনাকাটা হয়নি। তাতে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ব্যবহারযোগ্য আছে যতক্ষণ, পায়ে দিতে সমস্যা নেই। শেষ বার জুতা কিনেছিলাম ৫-৬ বছর হলো, ভালো কন্ডিশনে আছে তাই আর কিনিনি। ও হ্যাঁ, স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরে প্রায়ই শ্বশুরবাড়িও যাওয়া-আসা করি। দাওয়াত বাদে, যেখানে অন্যান্য অতিথিও আসে।

অপচয় বা বিলাসিতা না করলেই বাড়তি অর্থ সঞ্চয় করার সুযোগ তৈরি হয়। হ্যাঁ, স্বর্ণ, নিরাপদ প্লট, ফ্ল্যাট, ডিপিএস, লাইফ ইনস্যুরেন্স ইত্যাদিও একধরনের সঞ্চয়, যা নিরাপদ হলে বেশ ভালো বিনিয়োগও বটে ৷ এই বিনিয়োগ বার্ধক্যে বা মধ্যবয়সে বেশ কাজে লাগতেও পারে। তবে জরুরি মুহূর্তে নগদ সঞ্চয়ের বিকল্প কিছুই না।

আমাকে কে কি ভাবল, কে কি বলল তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। এগুলো আমি গায়েও মাখি না। আমার প্রয়োজনের মুহূর্তে কিন্তু এসব মানুষদের অধিকাংশই আমার পাশে থাকবে না। আর বিলাসিতা কিংবা অপচয় ইসলাম ধর্মেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বারবার।

তাই সঞ্চয়, অপচয়, বিনিয়োগ আর বিলাসিতা এসব নিয়ে ভাবতে হবে জীবনের একদম শুরু হতে। তাহলে জীবনকে গুছিয়ে নেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়৷ এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় ভুলও হতে পারে, আর সেই ভুল হতে শিক্ষা নেওয়াটাও জীবনের অংশ।

লেখক: মেরিন অফিসার ও লেখক

ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :